তৃণমূলের পত্রিকা জাগো বাংলায় একটি উত্তর সম্পাদকীয় লেখা প্রকাশ করেছেন প্রয়াতঃ বাম নেতা অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা। এই লেখার তৃতীয়াংশে পুরোটাই যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্তুতি। অগ্নিকন্যা, দিদি এবং ঘরের মেয়ে এই সমস্ত নানান ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছেন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। এবং এই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পরেই যারপরনাই অস্বস্তিতে পড়েছে লাল শিবির। অজন্তা বিশ্বাসের এই কাজকর্মে বিরোধিতা করেছেন দলেরই একাংশ।
বঙ্গ রাজনীতিতে নারীশক্তি, এই উত্তর সম্পাদকীয় শেষ পর্যায়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রীতিমতো গুনগান করেছেন অজন্তা বিশ্বাস। এবারে অজন্তার এই লেখা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি প্রকাশ্যেই বললেন, “যদি এমনটা করে থাকে, তবে এর থেকে মূর্খতা কিছু হতে পারে না।” এছাড়াও তিনি সরাসরি জানিয়ে দিলেন, “অজন্তা বিশ্বাসের কারণে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে দল। বিষয়টা আমি শুনেছি। অজন্তা যা করেছে তা কোনোভাবে ছোট করে দেখা যায় না। অজন্তা ইউনিট এর সদস্য। যা পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ইউনিট নেবে, তারপর কলকাতা জেলা কমিটি দেখবে। তারপরে আমরা। আমরা ওকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেব। ও যা করেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
একদিকে যখন অজন্তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে সিপিআইএম সেখানেই আবার তার পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ। একটি টুইট করে কুনাল ঘোষ লিখলেন, ” যারা প্রয়াতঃ অনিল বিশ্বাসকে টেনে এনে অজন্তাকে কুৎসিত আক্রমণ করতে শুরু করেছে, তারা জেনে রাখুন একাধিক কারণে সিপিআইএম এবং বাম নেতা তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তৃণমূল নেত্রী তাদের একান্ত ব্যক্তিগত অনুরোধ রক্ষা করেছেন। সেগুলো লেখা রুচিবিরুদ্ধ। কিন্তু বাধ্য করবেন না।” এই টুইট করে কার্যত বাম নেতাদের একহাত নিলেন কুনাল ঘোষ। পাশাপাশি, অজন্তা বিশ্বাসের পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক।
কিন্তু ইতিমধ্যেই সিপিআইএমের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং কর্মী সমর্থক অজন্তাকে নিয়ে নানান ধরনের মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে অজন্তা বিশ্বাস গতকাল একটি অডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। সেই অডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, “ইতিহাসের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার গবেষণার অন্যতম বিষয় হলো বঙ্গনারী। বেশ কিছুদিন ধরে আমি এ বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছি। এমনই একটি লেখা প্রাক স্বাধীনতা পর্বে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ। এখানে যেমনভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত নেত্রীরা রয়েছেন, তেমনভাবেই রয়েছেন বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী নেত্রীদের কথাও। আর সেই কারণেই এই লেখায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ উঠেছে।” কিন্তু অজন্তা যেভাবেই হোক নিজের সাফাই দিলেও এখনই যে সিপিএমের তরফ থেকে তাকে ক্লিনচিট দেওয়া হবে, এমনটা মনে হচ্ছে না। কারণ এমনিতেই এবারের বিধানসভা নির্বাচনে একটিও আসনে জয়লাভ না করার জন্য ইতিমধ্যেই চাপে আছে বামফ্রন্ট। তার মধ্যে যদি অজন্তা বিশ্বাসকে সমর্থন করা হয়, তাহলে হয়তো নিজেদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হতে পারে নিজেদের কর্মীদের কাছেই। তাই হয়তো কর্মী বাঁচানোর জন্য গণশক্তির প্রাক্তন সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের কন্যার বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে আলিমুদ্দিন।