মহানায়ক উত্তমকুমার (uttam kumar)বাঙালির চিরন্তন নস্টালজিয়ার মধ্যে আজও বেঁচে আছেন। তাঁর সঙ্গেই বেঁচে রয়েছে ভবানীপুরের বাড়ির বহু মুহূর্ত এবং উত্তমকুমারের ‘বড়গিন্নি’ গৌরী দেবী (Gouri Devi)-কে নিয়ে অনেক কাহিনী। ভবানীপুরের চট্টোপাধ্যায় পরিবারে একসময় অনেক কিছু ছেড়ে বৌ হয়ে এসেছিলেন বনেদী ও ধনী পরিবারের কন্যা গৌরী দেবী। তখন তাঁর স্বামী উত্তমকুমার নন, থিয়েটার আর্টিস্ট অরুণকুমার (Arun kumar)। অরুণকুমার বিয়ের কিছুদিন আগেই একটি ফিল্মে অভিনয় করেছেন যার নাম ‘মায়াডোর’। সেই ফিল্মে ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন অরুণ। কিন্তু অরুণের ভাগ্যের ফেরে সেই ফিল্ম আর কোনোদিন মুক্তি পায়নি। তখন সমাজের বিদ্রুপ শোনেন অরুণ এবং মুখ বুজে নিজের কাজ করে যান।
বড় ঘরের মেয়ে গৌরীর কোনোদিন রান্নাঘরে উনুনের আঁচে রান্না করার অভ্যাস ছিল না। কিন্তু স্বামীকে ভালোবেসে সকালবেলায় উঠে তাঁর জন্য দুটি ভাত ফুটিয়ে দিতেন গৌরী। সকালে ভাত খেয়ে অফিসে কেরানীর চাকরি করতে যেতেন অরুণ এবং বিকালে বাড়ি ফিরে দুটি পরোটা ও আলুপোস্ত কোনওরকমে খেয়েই ছুটতেন থিয়েটারের মহড়া দিতে। অরুণ ও গৌরীর কষ্ট বোধহয় টলিয়ে দিয়েছিল ভগবানের আসনকেও। তাই একদিন বদলে গিয়েছিল সব কিছুই। চারপাশের বিদ্রুপ করা মানুষগুলি তখন ছুটতেন সিনেমা হলে টিকিট কেটে অরুণের অভিনয় দেখতে। কারণ তখন অরুণ যে আর সেই অরুণ নেই, তিনি তখন বাঙালির সুপারস্টার উত্তম কুমার। ভবানীপুরের বাড়ির তখন হয়ে উঠেছে তারকার আলোয় ঝলমলে।
সুপারস্টার হয়েও উত্তমকুমার জানতেন বেনারসী শাড়ির প্রতি গৌরী দেবীর দূর্বলতা। তাই যেদিন তিনি নায়ক হলেন, তার পর থেকে গৌরীদেবীর প্রত্যেক জন্মদিনে তাঁর জন্য উত্তমের তরফ থেকে উপহার হিসাবে থাকত দুটি জমকালো বেনারসী। একসময় গৌরীদেবীর ইউট্রাস অপারেশন হয়। অপারেশনের পর গৌরীদেবীকে বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল। সেই বছর গৌরীদেবী হাসপাতালে নিজের জন্মদিনের কেক কেটেছিলেন এবং যথারীতি উত্তম হাজির ছিলেন তাঁর পছন্দের দুটি বেনারসী শাড়ি উপহার নিয়ে। অপারেশনের পর এক বছর গৌরীদেবী শাড়ি পরতে পারেননি। কিন্তু উত্তমের সঙ্গে পার্টিতে তো যেতেই হত গৌরীদেবীকে। সুতরাং তিনি তাঁর দর্জিকে ডেকে একটি বেনারসী শাড়িকে কেটে গাউন তৈরী করে দিতে বলেছিলেন। পরবর্তীকালে সেই বেনারসী গাউন পরে গৌরীদেবী তাঁর স্বামী উত্তমকুমারের সঙ্গে পার্টিতে গিয়েছিলেন। উত্তমের মৃত্যুর পর গৌরীদেবীর ক্যান্সার ধরা পড়ে। সেই সময় তিনি একের পর এক বেনারসী শাড়ি গরিব মানুষদের মেয়ের বিয়েতে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি শুধুমাত্র রেখে দিয়েছিলেন বেনারসী গাউনটি এবং একটি বেগুনি রঙের জমকালো বেনারসী শাড়ি। 1997 সালে উত্তমকুমার ও গৌরীদেবীর নাতনী নবমিতা চট্টোপাধ্যায় (Nabamita chatterjee) গৌরীদেবীর বেনারসী গাউন ও বেনারসী শাড়ি পরে ফটোশুট করেছিলেন। এবার উত্তমকুমার ও গৌরীদেবীর নাতবৌ এবং গৌরব চট্টোপাধ্যায় (Gaurav chatterjee)-র স্ত্রী অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার (Devlina kumar) গৌরীদেবীর রেখে যাওয়া বেগুনি রঙের জমকালো বেনারসী শাড়ি পরা ছবি ইন্সটাগ্রামে শেয়ার করে ক্যাপশন দিয়ে লিখেছেন, দিদিশাশুড়ির শাড়ি পরে নস্টালজিয়া অনুভব করছেন তিনি। গৌরীদেবীর বেনারসী দেবলীনার অঙ্গে দেখে নেটিজেনরাও আক্রান্ত হয়েছেন নস্টালজিয়ায়। তবে দেবলীনা লিখেছেন, উত্তমকুমার তাঁর স্ত্রী গৌরীদেবীকে শপিংয়ে নিয়ে গিয়ে এই বেনারসীটি কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু দেবলীনার লেখা এই তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুল। উত্তমকুমারের পরিবার ও তাঁর প্রয়াত পুত্র গৌতম চট্টোপাধ্যায় (Gautam chatterjee)-র কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গৌরীদেবীর বিয়ের বেনারসী শাড়িটি ছাড়া বাকি সব কটি বেনারসী শাড়িই তাঁর জন্মদিনে উত্তমকুমারের তরফ থেকে ছিল উপহার। এই বেনারসী শাড়িগুলি উত্তমকুমার নিজে একা গিয়ে কিনে নিয়ে আসতেন এবং গৌরীদেবী প্রতি বছর স্বামীর এই মিষ্টি সারপ্রাইজটির জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করতেন। সুপ্রিয়া দেবী (supriya Debi)-র সঙ্গে উত্তমকুমারের বিয়ের পরেও এই নিয়মের অন্যথা হয়নি বলে জানা যায়।
https://www.instagram.com/p/CMERyaVADyI/?igshid=cw16tfx20dqj