উত্তর পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় মিষ্টি জলের হ্রদ হল লোকটাক হ্রদ। মনিপুরের বিষ্ণুপুর জেলায় অবস্থিত। ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৩ কিলোমিটার প্রস্থ এর অসাধারণ সৌন্দর্য। এটি পৃথিবীর একমাত্র ভাসমান হ্রদ। উপরের অংশগুলি দেখলে মনে হয় যেন টুকরো টুকরো বরফের খন্ড রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এখানে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে নিতে ভাসমান চাষাবাদে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখানে কয়টি আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করে। তারা এই জায়গাটি সঙ্গে একাত্ম হয়ে জায়গাটির দেখভাল করে। এখানে একটি জাতীয় পার্ক আছে এটি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি ও বটে। এর নাম কইবুল লামজা। এটি আশপাশের মানুষ এবং পর্যটকদের জন্য একটি স্বর্গীয় জায়গা। হাজারেরও বেশি মৎস্যজীবী মানুষ এখানে বাস করেন এবং তারা প্রতি বছর ১,৫০০ টনের বেশি মাছ এখান থেকে ধরেন।
শুধু তাই নয়, এই ভাসমান হ্রদের ওপরে তারা একটি বিদ্যালয় তৈরি করেছেন। বাড়ি থেকে ছেলেমেয়েরা নৌকো করে স্কুলে পড়তে আসে। সত্যিই এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। জলের মধ্যে এই প্রায় ২০০ প্রজাতির জলজ প্রাণীর বসবাস। যার উপরে ভিত্তি করে প্রায় ৪০০ প্রজাতির জীবজন্তু বেঁচে আছে। এই ভাসমান ন্যাশনাল পার্কটি মনিপুরের পশু পাখিদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির একমাত্র জায়গা। কংক্রিটের জঙ্গলে থাকতে থাকতে যদি আপনার দম আটকে যায় তাহলে একটু শান্তির জন্য আর যদি স্বর্গীয় সুখ পেতে চান তাহলে এখানে ঘুরে আসতে পারেন।
এখানকার আদিবাসীরা এই হ্রদকে মায়ের জায়গায় বসিয়েছেন। তবে বর্ষাকালে এই হ্রদের জল দু’কূল ছাপিয়ে বন্যা সৃষ্টি করে। মনিপুর এর রাজধানী ইম্ফল থেকে মাত্র ৩৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হ্রদটি। স্থানীয় ভাষায় এর অর্থ হল ‘ঝরনার শেষ’। জলের মধ্যে দেখা যায় প্রায় ৫৪ প্রজাতির মাছ ২৫ প্রজাতির উভচর প্রাণী। এখানকার অধিবাসীদের একমাত্র যানবাহন হল ছোট ডিঙ্গি নৌকা। এখানকার ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে ভাল্লুক, বুনো শুয়োর, বনবিড়াল, মনিপুরের বিখ্যাত নাচুনে হরিণ।