কোথাও টাকার প্রলোভন, তো কোথাও ফ্রিতে মদ, কিভাবে জনগণকে কোভিড টিকা নিতে উৎসাহী করছে ভারতসহ অন্যান্য দেশ?
আপনার কি মনে হয়, কার পরিকল্পনা ছিল সবথেকে আকর্ষণীয়?
গত বছর অক্টোবর মাসে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনগুলি অনুমোদন পেতে শুরু করার পরেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় যার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যাপারে আলোচনা করে কিভাবে মানুষকে করোনার টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা যায় সেই বিষয়ে। কিন্তু, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে হয়তো সেই সমস্ত গাইডলাইন তেমন একটা মান্যতা রাখে না, তাই বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশগুলি নিত্য নতুন পদ্ধতি বের করে আনছে তাদের মানুষকে করোনা ভাইরাসের টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
কোথাও দেখানো হচ্ছে টাকার প্রলোভন, আবার কোথাও অফার করা হচ্ছে বিনামূল্যে মদ এবং খাবার। কয়েকটি দেশ আবার টিকাকরণের পরেই সেই ব্যক্তিকে দান করছে একটি করে জ্যান্ত গরু। করোনা ভাইরাসের টিকাকরনে প্রতিটি মানুষের অনীহাকে লক্ষ্য করে বিশ্বের একাধিক দেশ তাদের মতো করে তৈরি করছে মানুষকে উৎসাহী করার পরিকল্পনা। ভারতের মতো দেশে যেখানে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মর্মান্তিক আকার ধারণ করেছে, সেখানে অফার করা হচ্ছে ক্যাশ প্রাইজ। ভারত জানিয়ে দিয়েছে যারা যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করে নিজেদের ছবি একটি বিশেষ ট্যাগলাইনের মাধ্যমে আপলোড করবেন, তাদের জন্য অফার করা হবে বিশেষ নগদ পুরস্কার। ২০২১ এর শেষ অবধি প্রত্যেক মাসের সেরা দশজন ব্যক্তি পেয়ে যাবেন ৫,০০০ টাকা করে নগদ। নেটিজেনরা আবার বলছেন, ১০ জনকে ৫,০০০ করে না দিয়ে যদি একজনকেই ৫০,০০০ টাকা দেওয়া হতো তাহলে মানুষ আরো বেশি উত্তেজিত হতো।
ভারতের অন্যান্য কমিউনিটিগুলিও কিন্তু খুব একটা কম যায় না। এপ্রিল মাসে, গুজরাটের রাজকোট এর গোল্ড স্মিথ কমিউনিটি মহিলাদের বিনামূল্যে সোনার নাকছাবি এবং পুরুষদের জন্য হ্যান্ড ব্লেন্ডার অফার করছিল যদি তারা নিজেদের ভ্যাক্সিনেশনের প্রমাণ দেখাতে পারেন। শুধু তাই নয়, অন্ধ্রপ্রদেশে যেহেতু হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি অত্যন্ত জনপ্রিয়, তাই ভ্যাকসিনেশন করালেই অফার করা হচ্ছিল বিনামূল্যে সুস্বাদু হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি। অন্যান্য দেশগুলিও এরকম বেশ কিছু পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। মে মাসের প্রথমদিকে দুবাইয়ে এমন একটি নিয়ম চালু করা হয়েছিল যেখানে ভ্যাকসিনেশন করালেই আপনারা জিম এবং ফিটনেস সেন্টারে বিনামূল্যে শরীরচর্চা করতে পারবেন। আমেরিকাতে আবার অফার করা হয়েছিল বিনামূল্যে খাবার, বিয়ার (এক প্রকৃতির মদ) এবং ডেজার্ট (আইসক্রিম অথবা মিষ্টি যেকোনো জিনিস)। যদিও, বিশেষজ্ঞরা বলেন এই সমস্ত জিনিসগুলি শুধুমাত্র একটি মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ছিল, এর থেকে বেশি কিছু না।
বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশগুলির মধ্যে প্রথম এই ধরনের ‘ভ্যাকসিন নাও ক্যাশ প্রাইজ পাও’ স্কিম চালু করেছিল সার্বিয়া। ৫ মে সার্বিয়া ঘোষণা করেছিল ৩১ মের মধ্যে সেই দেশে যারা যারা করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে তাদেরকে ৩,০০০ দিনার (প্রায় ২,২৫৮ টাকা) পুরস্কার দেওয়া হবে। কলোরাডো, অরিগণ, ওহায়োর মত দেশগুলি বিভিন্ন রকম জ্যাকপট পুরস্কার দিতে শুরু করে ভ্যাক্সিনেশন করা মানুষদের। যখন থেকে এই নগদ পুরস্কার সারাবিশ্বে নিন্দিত হতে শুরু করে তারপর থেকে, শুরু হয় অন্যান্য জিনিসপত্র দেওয়ার পালা।
নগদ পুরস্কার তো ছিল বড়দের জন্য, কিন্তু ছোটরা বাদ যাবে কেনো? তাই তাদের কথা চিন্তা করে নিউইয়র্ক এর গভর্নর অ্যান্ড্রু কমো নিয়ে আসেন একটি নতুন স্কিম। বলা হয়, ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে যারা যারা করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করবেন তাদের পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে একটি স্কলারশিপ দেওয়া হবে। উত্তর থাইল্যান্ডের একটি জেলা আবার শুরু করে ভ্যাকসিন নাও গরু পাও স্কিম। সেখানে জানানো হয়েছিল, যারা যারা সেখানে করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে তাদের সকলকে নিয়ে একটি লটারি করা হবে যেখানে তারা জিততে পারবেন একটি জ্যান্ত গরু। চীনের বেশ কিছু জায়গায় বিনামূল্যে ডিম, বিনামূল্যে দোকানের কুপন এবং ডিসকাউন্ট কুপন দেওয়া শুরু হয়।
কিন্তু যাই হোক, নেটিজেনদের ট্রোল কিংবা অন্যান্য রাষ্ট্রনায়কদের মশকরার বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে এলেও, এই সমস্ত স্কিম কিন্তু বাস্তবে যে খুব একটা ফেল করেছে সেরকম বলা যাবে না। একটি পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যাচ্ছে, এই সমস্ত স্কিম গ্রহণ করার ফলে মানুষের ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রবণতা কিন্তু বেড়েছে। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, যেখানে যেখানে নগদ পুরস্কার অফার করা হচ্ছিল সেখানে সবথেকে বেশি ভ্যাক্সিনেশনের প্রবণতা বৃদ্ধি লক্ষিত হয়েছে। তাই টাকার প্রলোভন দেখিয়েই হোক, কিংবা বিনামূল্যে খাবার এবং মদের অছিলায়, বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশ নায়কদের নিশানা কিন্তু লেগেছে একেবারে টার্গেটে।