বছরের নতুন ক্যালেন্ডার বা হাতে বাংলা পঞ্জিকা এলেই একটা জিনিস আগে দেখা চাই সকল বাঙালীর। মর্তে কবে আসছে ঊমা। উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ হল এই দুর্গা পুজো। চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঊমা কৈলাশ থেকে মর্তে বাপের বাড়ি এসে দিন পাঁচেক থেকে ফিরে যান শ্বশুর বাড়ি। আর এই পাঁচ দিন কাজ কর্ম থেকে পড়াশোনা থেকে মেলে ছুটি। কারণ এই সময়ে ঘরের মেয়েকে আদরে যত্নে ভরিয়ে, জাকজমকপূর্ণ ভাবে উদযাপন করেন গোটা বাংলার মানুষ৷ শুধু কি বাংলা গোটা বিশ্বে যত বাঙালী আছে। কারণ বাঙালির কাছে এই পার্বন হল বিশেষ।
তবে গত বছর থেকে দুর্গাপুজোর আনন্দ অনেকটা ক্ষীণ হয়ে উঠেছে। কারণ একটাই করোনাসুর! হ্যাঁ করোনা অতিমারীর জন্য মহা সমারোহে দুর্গাপুজো উদযাপন করতে না পারছেনা। আগের বছরের মতো এবছর ও করোনাসুরের বধ এখনো হয়নি। তাই আজ ও অনেকের প্রশ্ন এই করোনার আবহে দুর্গা পুজো আদৌ হবে তো? যদি হয় তাহলে কী আবারও গত বছরের মতোই কি বাড়িতে বসে পুজো উপভোগ করতে হবে?সত্যিই বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব এ বছরও নমোঃ নমোঃ করেই ভার্চুয়ালি সাড়া হবে? এখনই অবশ্য উত্তর জানা নেই কারোর।
গত বছর অষ্টমী হোক কিংবা মায়ের নিরঞ্জনের সময়ে, সকল ভক্তদের প্রার্থনা ছিল মায়ের কাছে একটাই। “মাগো আসছে বছর যেন সব মঙ্গলময় থাকে। তবে এবারেও যে সব আনন্দের মাঝে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা। অন্যদিকে একের পর এক দিন চলে যাচ্ছে। ক্যালেন্ডারে বলছে এখন জুন মাস। দিন যত যাচ্ছে এবারেও ঊমার আগমন এগিয়ে আসছে। মায়ের মর্ত্যে আসতে আর মাত্র ৯৭ দিন বাকি। এ বছরের পুজো কেমন হবে, তা এখনও জানা নেই অনেকের। করোনার জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা এবারেও কোনো স্টল দিতে পারবেনা যে।।
তবে এসব দেখে মায়ের আগমন তো কোনোভাবে আটকানো যাবেনা। তিথি মেনেই হবে মা দুর্গার আগমন আর গমন । প্রতিবার সপ্তমীর দিন দেবীর মর্তে আগমন ঘটে আর দশমীর দিন দেবীর নিরঞ্জন বা গমন হয়। দেবীর যাতায়াতের না আছে ট্রেন বা বাস বা প্লেন। মায়ের জন্য রয়েছে বিশেষ কিছু যান।
কখনও মা আসেন গজে, কখনও ঘোটকে ঘোড়ায় তো কখনও বা দোলায়, কখনও নৌকায় আবার বিদায় নেওয়ার জন্যও একই যান গুলি রয়েছে ।
তবে এই যান গুলির জন্য কিছু মাহাত্ম্য আছে।
১.গজ : গজ বা হাতি হল শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। গজে আগমন বা গমন হলে বসুন্ধরা শস্য শ্যামলা হয়।
২.দোলা : দোলা অর্থাৎ পালকি হল মহামারী বা মরকের প্রতীক।
৩. নৌকা: নৌকা বন্যার প্রতীক। আবার অনেকে মনে করেন, নৌকায় দেবী দুর্গার আগমন হলে চারিদিকে ভালো ফসল হয় ।
৪. ঘোটক: ঘোটক বা ঘোড়ার অর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির এলোমেলো অবস্থা। যুদ্ধ-বিগ্রহ, অশান্তি, বিপ্লব ইত্যাদির সংকেত।
এবারে মা দুর্গা আসছেন দোলায়। দোলা হল মড়কের প্রতীক। যা মহামারীর প্রতীক। আবার ফিরছেন নৌকায়। নৌকা হল বন্যার প্রতীক। এই বছর দেবী দুর্গার আগমন ও গমন দুটোর অর্থই খুব অশুভ। এখন শুধু মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করা আর ধরণীর কিছু খারাপ না হয়৷ তাড়াতাড়ি সেড়ে উঠুক বিশ্ববাসী।
যদি মা দুর্গার কোনও বছর একই বাহনে আগমন আর গমন ঘটে তবে আগামী বছরটা খুবই খারাপ বলে মনে করা হয়। উল্লেখ্য, গত বছর দেবীর আগমন আর গমন দুটোই ঘোড়ায় হয়েছিল। আর তারই ফলস্বরূপ এ বছর গোটা বিশ্বে করোনা মহামারী।