কোচবিহারের জেলা কমিটি ঘোষণা হবার পর থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল বিধায়ক মিহির গোস্বামী। গত সোমবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবার পর দলবদল প্রসঙ্গে তিনি বিবৃতি দেন, এখনো পর্যন্ত তার তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি আরো বলেন , এক রাজনৈতিক দলের কর্মী হয়ে অন্য রাজনৈতিক দলের কারো সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করা অন্যায় নয়। তৃণমূলে থাকবেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে জানান যে , দলের মধ্যে আমার প্রাসঙ্গিকতা নেই। তাই তৃণমূলের ফিরছিও, ভাবছিও না। এর পাশাপাশি তিনি এও বলেন যে, অমিত শাহের তরফ থেকে ডাক পেলেন নিশ্চয়ই তাতে তিনি সাড়া দেবেন, দেখা করবেন। আর তার এইই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মতামত নেওয়ার জন্য ভারত বার্তার প্রতিনিধি প্রীতম দাস যোগাযোগ করেছিল মাননীয়া অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গে। তিনি তার গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের ভারত বার্তার প্রতিনিধিকে জানান।
১) কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানালেন যে , তিনি তৃণমূলের ফিরছেন না ও এই ব্যাপারে ভাবছেন না। তার এহেন মন্তব্যে শাসকদলের কাছে কতটা অস্বস্তিকর হতে পারে বলে মনে করেন ?
অগ্নিমিত্রা পাল : এটা তো সবে শুরু এরপর দেখবেন আরো বাঘা বাঘা অনেকে আসতে শুরু করেছে । আমাদের দলের সাথে অনেকেরই কথাবার্তা চলছে ও পরবর্তী এক – দুমাসের মধ্যে দেখতে পারবেন অনেক পরিবর্তন হবে ! এটা খুব ন্যাচারাল , আমরা এটাই এক্সপেক্ট করি। মানুষের বিশ্বাস এই দলের থেকে সরে গেছে। তৃণমূলের নেতা কর্মী সবাই সেটা বুঝতে পারছে। যত নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে তত নেতা-নেত্রী দল থেকে সরে আসছে। এটা তো অবাক ব্যাপার নয় আমার কাছে এবং আগামী দিনে আরও দেখতে পাবেন।
২) মিহির গোস্বামী , শীলভদ্র দত্ত এরা প্রত্যেকেই বর্ষীয়ান নেতা ও তারা নিজদলের দিকে যেভাবে প্রশ্নচিহ্ন তুলেছেন। পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিভাবে দেখছেন ?
অগ্নিমিত্রা পাল : তারা এতদিন আসেননি কারণ তারাও এতদিন হয়ত জল মাপছিলেন যাবো কি যাবো না ? কতটা গেলে লাভবান হব ? বিজেপি আসবে কিনা পাওয়ারে ? আমি সরে গেলে আমার কোনো ক্ষতি হবে কিনা ? এখন তারাও বুঝতে পারছে যে , তৃণমূলের উপর থেকে মানুষের একেবারেই সরে গেছে। গ্রাসরুট লেভেলে যারাই কাজ করছে তারাই বুঝতে পারছে। এটা বড় কোন একটা সাইন্টিফিক জিনিস নয় যে বুঝতে খুব একটা কোন কষ্ট হবে। আজ যেই গ্রামে গ্রামে ঘুরছে বা শহরে শহরে ঘুরছে , সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলছে সেই জানতে পারবে এবং সেটা দেখে তারা এতদিন আসেননি কিন্তু তারা ভাবছেন যে এই দলে এসে হয়তো তারা লাভবান হবেন। এটা খুব আনফরচুনেট , আজ এথিক্সের দিক থেকেও তারা সাড়ে ন বছর অপেক্ষা করল। আজকে যখন দেখলেন যে , দলে এত দুর্নীতি ও এত মানুষের প্রতি অন্যায় , অবিচার , মানুষ কোন ডেভলপমেন্ট পায়নি পশ্চিমবঙ্গে তখন কিন্তু তারা ভাবেননি দল চেঞ্জ করার। এখন যখন নির্বাচনের বেশ কিছু মাস বাকি এখন তারা ভাবছেন যে দল ছেড়ে চলে আসবেন। আমাদের দরজা সকলের জন্যই খোলা। উনারা যদি ভেবে থাকেন এখানে এসে উনারা পদ পাবেন , আমাদের সরকার গড়লে মন্ত্রিত্ব পাবে তাহলে খুব ভুল ভাবছে। অবশ্যই মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পাবেন। এটা গ্যারান্টি দিতে পারি। মানুষের জন্য জেনুইন কাজ করার সুযোগ পাবেন কিন্তু যদি মনে করেন কিছু ফেবার্স পাবেন বা কিছু সুবিধে পাবেন অথবা পদ বা মন্ত্রিত্ব পাবেন সেই আশাতে আসা উচিত সেটা কিন্তু মনে হয় না।
৩) সাংবাদিক বৈঠকে বিধায়ক মিহির গোস্বামী মন্তব্য করেছেন যে অমিত শাহের ডাক পেলে তিনি তাতে সাড়া দেবে। কি বলতে চাইবেন এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ?
অগ্নিমিত্রা পাল : আজকে একজন তৃণমূলের কর্মীও যদি জয়েন করতে চায় , তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব জয়েন করতে চায় বা একজন সাধারন মানুষ যদি জয়েন করতে চায় আমাদের কাছে সবাই সমান। আমি মহিলা মোর্চা সভানেত্রী হয়ে বলতে চাইব , সাধারণ বাড়ির মহিলা যে কোনদিন পার্টি করেনি বা যে ধরনের মানুষ হোক না কেন বা যে স্ট্যাটাস থেকে আসুক না কেন আমাদের দরজা সব সময় খোলা। কারণ আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে ভালবাসি। অমিত শাহ উনাকে ডাকবেন কিনা বা উনার হাতে পতাকা ধরাবেন কিনা এই ব্যপারগুলো আমি বলতে পারব না। কারন আমি এই দলের অত্যন্ত সাধারণ একজন কার্যকর্তা। এটা অনেক বড় বড় ব্যাপার। আমি সেটা বলতে পারবো না। হ্যাঁ এটাই বলব যে যারা এতদিন ধরে পাপ করে এসেছেন তাদের শুদ্ধিকরণের দরকার। এতদিন ধরে যারা ক্রাইম করে এসেছে তারা আমাদের দলে এসে বিশাল কিছু হাসিল করবে সেটা একদমই ভাববেন না। মাথাটাকে শুদ্ধিকরণ করে আসুন যে মানুষের সেবা করবেন। সেই ইনটেনশন নিয়ে যদি আসেন তাহলে ভারতীয় জনতা পার্টির দরজা সব সময় খোলা আছে কিন্তু যদি ভেবে থাকেন যে কয়েক কোটি টাকা বানাবো , কয়েক বিঘা জমি কিনব , কিছু হসপিটাল বা ইউনিভার্সিটি অন্যান্য প্রদেশে গিয়ে বানাবো , এইসব করলে মনে হয় না আমাদের দলে আসা উচিত। আগে থেকে জানিয়ে দেবো যে আসবেন না , সেটা কিছু পাবেন না এখানে।
[সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস]