অফবিট

অবশেষে পৃথিবী প্রাণখুলে শ্বাস নিচ্ছে, কমছে দূষণের মাত্রা

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি : করোনাভাইরাস এর জন্য গোটা পৃথিবীতে যেভাবে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে তা সত্যিই যথেষ্ট বেদনাদায়ক। কলকারখানা কার্যত স্তব্ধ। রাস্তাঘাট শুনশান। যে সময় শহর ব্যাস্ততার সবচেয়ে চূড়ান্ত সীমায় থাকে, সেই সময় শহর এখন কার্যত ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বেরোচ্ছেন না বাইরে। সকাল হলেই যে সমস্ত কলকারখানার মেশিনের আওয়াজে চারিদিকে কান পাতা দায় ছিল, সেই মেশিনের আওয়াজ আজ স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। যে স্কুলের চারপাশ বাচ্চাদের গলার আওয়াজে মুখরিত হয়ে থাকত, সে স্কুলের গেটে আজ তালাবন্ধ। গোটা বিশ্বের চেহারাটা কার্যত এরকম। রাস্তাঘাটে কয়েকটা অ্যাম্বুলেন্স আর পুলিশের গাড়ি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। গোটা বিশ্বের পরিবেশটা যথেষ্ট ভয়ানক এবং ভয়ঙ্কর। কাছের মানুষ গুলো একটার পর একটা ঢলে পড়ছে মৃত্যুর দিকে।বাড়িতে বসে হায় হায় করা ছাড়া মানুষের আর কিছু করার নেই।

কিন্তু সব কিছুরই একটা ভালো একটা মন্দ দিক থাকে। আপনি হয়তো ভাবছেন করোনাভাইরাস এর আবার ভালো কি দিক আছে! একটু যদি খুঁটিয়ে ভাবেন তো বুঝতে পারবেন এই ভাইরাস যা থেকে বাঁচতে গোটা পৃথিবী স্তব্ধ হয়ে রাস্তায় বেরোচ্ছে না গাড়ি, কল কারখানা চলছে না, যার ফলে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বাতাসে মিশছে না। কমছে বায়ু দূষণ। সমুদ্রের ধারে মানুষের ভিড় নেই, প্লাস্টিক আবর্জনা মুক্ত সমুদ্র বালিয়াড়ি, যা দেখতে অতীব মনোরম।

নাসার একটি প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, চীনে বিপুল হারে কমে গেছে দূষণ, এই কয়েক দিনেই। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে চীনের দূষণের পরিমাণটা অনেক টা কমেছে, কারণ চিনে নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন এরপরে নতুন নতুন কারখানা পুনরায় খোলে এবং রাস্তাতেও প্রচুর গাড়ি চলে। কিন্তু এবারের চিত্রটা একেবারে আলাদা। গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস এই ইতিবাচক প্রভাবের ফলে গোটা পৃথিবী যখন স্তব্ধ হয়ে পড়েছে, তখন অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে যারা প্রতিনিয়ত দূষণের কারণে মারা যায়। WHO এর গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রায় ৭ লক্ষ মানুষের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় দূষণের কারণে।

চীনের পরেই করোনাভাইরাস বেশ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে ইতালি, ফ্রান্স, ইরানে। তবে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই সমস্ত দেশগুলোতেও। ভেনিসের যে জলাধার গুলি সবসময় তে নৌকা এবং পর্যটকএ ভর্তি থাকতো, এখন সেই ভেনিস একেবারে ফাঁকা ভেনিসের জল একেবারে পরিষ্কার। পর্যটকদের আনাগোনা নেই। সামাজিক ক্ষেত্রেও করোনাভাইরাস বেশ প্রভাব ফেলেছে। যে সমস্ত দম্পতিরা দুজনেই চাকরি করতেন। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে হত পেটের টানে। তারা ঘরে এখন নিজেদের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। বাচ্চাদের সঙ্গে তারা মজা করছেন, আনন্দ করছেন সিনেমা দেখছেন। বাচ্চারাও হঠাৎ করে বাবা-মাকে একসঙ্গে পেয়ে তারাও বেশ আনন্দিত। বাবা মায়ের যেরকম অফিস থেকে work-from-home এর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তেমন অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের স্কুল থেকে বা কোন টিউটোরিয়াল ক্লাস থেকে অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু স্কুলে বা পড়তে যাওয়া থাকছে না তাই বাচ্চাদের হাতেও রয়েছে অফুরন্ত সময়, তারা সেই সময়টাকে কাজে লাগাচ্ছে তাদের প্রতিভাকে বিকাশের জন্য। কেউ গান গাইছেন, কেউ আঁকছেন, বা কেউ সময়টা দিচ্ছেন তাদের ছোট্ট বাগান কে।

আমরা তো নিজে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করব না। তাই বুঝি প্রকৃতি এমন নির্মম খেলা দেখিয়ে পৃথিবী কে একটু দূষণমুক্ত করতে চেয়েছে। চীন আপাতত কাটিয়ে উঠেছে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক কিন্তু ইরান, ফ্রান্স এবং এখনো ভারতবর্ষ এর আতঙ্ক থেকে কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আশা করা যায়, প্রত্যেকটা দেশ একদিন করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত হবে। কিন্তু দূষণের প্রশ্নটা কি হবে? আবারও পৃথিবী চলবে সেই একই তালে। আমরাও ছুটবো উন্নয়নের দিকে। পৃথিবী আবার কালিমায় ভরে উঠবে। বাতাসে ভেসে বেড়াবে কালো ধোঁয়া।

Related Articles

Back to top button