আবারো রাজ্যে একটি বড়সড় জালিয়াতি। তবে এক্ষেত্রে প্রলোভন দেখানো হলো কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের নাম এবং সরকারি লোগো ব্যবহার করে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছিল একটি প্রতারণা। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন হস্তশিল্প ছাড়াও সরকারি দপ্তরে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বেশকিছু প্রতারক। আর তাদের কথায় বিশ্বাস করানোর জন্য তারা ব্যবহার করেছিল একটি সরকারি লোগো। এইভাবে গ্রামের নিরীহ সাধারণ মহিলাকে বেশ কয়েকদিন ধরে ঠকিয়েছিল এই প্রতারকেরা। তাদের কাছ থেকে প্রতারকেরা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়া ছিল বলেও অভিযোগ। পরে পুরো ঘটনা সামনে আসার পরেই চাঞ্চল্য এলাকায়।
ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ায়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে গ্রামের অসহায় মহিলাদের দিনের পর দিন ধরে ঠকিয়েছিল এই প্রতারকেরা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে যদি চাকরি পাওয়া যায় তাহলে পরিবারের হাল ফিরবে, এই কারণে গ্রামের অসহায় দরিদ্র মহিলারা নিজের সাধ্যমত টাকা প্রতারকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বেশ কয়েক মাস ধরে। তাদের আশা ছিল চাকরি করে সেই টাকা উঠে আসবে। আবার কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি, মাইনে অনেকটাই বেশি, তাই প্রতারকদের হাতে টাকা দিতেও তারা অস্বীকার করেনি।
কিন্তু চাকরি পাওয়া তো দূর অস্ত, এই মহিলাদের দিনের পর দিন ধরে ঘুরিয়েছে ওই প্রতারকেরা। তারপরে প্রতারিত হওয়া কয়েকশো মহিলার বিক্ষোভে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রতারণার অপরাধে ইতিমধ্যেই তিনজনকে আটক করেছে কাটোয়া থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সংস্থা নথিপত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কত টাকা তারা মহিলাদের থেকে তুলেছিল এবং কিভাবে তারা সরকারি লোগো ব্যবহার করেছিল সেই বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। প্রতারণার শিকার হওয়া কয়েকশো মহিলা প্রতারকদের দপ্তর ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছায় পুলিশ। মহিলাদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনে ওই সংস্থার তিনজন কর্মীকে আটক করে কাটোয়া থানার পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনাটি সূত্রপাত হয়েছিল বছরখানেক আগে। কাটোয়া শহরের কৌশল বিকাশ কেন্দ্র নামে একটি সংস্থা খুলেছিল ওই তিন প্রতারক। তারপরেই তারা নিজেদের জাল ছড়াতে শুরু করে কাটোয়া এলাকায়। কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি দেওয়ার নাম করে গ্রামের মহিলাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে ওই সংস্থা। অভিযোগ উঠেছে, ইতিমধ্যেই প্রায় ৭০০ মহিলাকে ঠকিয়েছে তারা। মহিলাদের অভিযোগ, তাদের কারও কাছ থেকে ১২০০ টাকা, আবার কারো কারো কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত তুলেছে ওই সংস্থার কর্মীরা। প্রথমে মহিলারা ভেবেছিলেন যদি অল্পকিছু টাকা দিয়ে, একটা সরকারি চাকরি পাওয়া যায় তাহলে সংসারের হাল ফিরবে।
কিন্তু বছর খুললেও, এখান থেকে কোন মহিলাকে চাকরি দেওয়া হতো না। দিনের পর দিন ওই অফিসে গেলে তাদেরকে নানা অছিলায় ঘুরিয়ে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ।অবশেষে, তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে। কয়েকশো মহিলা একসঙ্গে জড়ো হন কাটোয়ার শ্রীরাম কমপ্লেক্সের সামনে। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তারপরে এলাকায় চরম বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছায় কাটোয়া থানার পুলিশ। সেখানে মহিলাদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনে ওই সংস্থার ৩ জন কর্মীকে গ্রেফতার করে তারা। পুলিশের তরফ থেকে মহিলাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ঘটনা তদন্ত করবে পুলিশ। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।