ভারতীয় রেলওয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেলওয়ে নেটওয়ার্ক। একে ভারতের লাইফলাইনও বলা হয়। রেলের দীর্ঘ ইতিহাস অনেক আকর্ষণীয় উপাখ্যান, গল্প এবং তথ্য দিয়ে ভরা। আজ আমরা আপনাকে এমনই এক অনন্য তথ্যের কথা বলব, যা জানলে আপনিও চমকে যাবেন। আপনারা কি জানেন, ভারতে এমন একটি ট্রেন আছে যেখানে চড়ার জন্য কোনো টিকিট দিতে হয় না! এই ট্রেনে কোনো টিটিই নেই। বছরের পর বছর ধরে মানুষ বিনামূল্যে এই ট্রেনে যাতায়াত করে আসছে।
এই ট্রেনটি পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের সীমান্তে ভাকরা এবং নাঙ্গলের মধ্যে চলে। এর নাম ভাকরা-নাঙ্গল ট্রেন এবং এটি ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ট্রেনটি সুতলজ নদীর উপর দিয়ে যায় এবং শিবালিক পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ১৩ কিলোমিটারের দূরত্ব অতিক্রম করে।
আপনাদের জানিয়ে রাখি, ভাকরা-নাঙ্গল ড্যাম সারা বিশ্বে বিখ্যাত এবং এটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন। ভাকরা-নাঙ্গল ড্যাম দেখতে আসা পর্যটকরা এই ট্রেনে বিনামূল্যে ভ্রমণ করেন। এতে কোনো টিটিই নেই। ফলে, টিকিট কাটার কোনো বালাই নেই।
আপনাদের জানিয়ে রাখি, এই ট্রেনটির সার্ভিস ১৯৪৮ সালে শুরু হয়েছিল। প্রথমে বাষ্প ইঞ্জিন দ্বারা এই ট্রেন চালানো হয়েছিল, কিন্তু পরে ডিজেল ইঞ্জিনের মাধ্যমে চালানো শুরু হয় এই ট্রেন। আগে এই ট্রেনে ১০টি বগি থাকলেও এখন বগি আছে মাত্র ৩টি। বাকি সমস্ত কোচ খারাপ হয়ে গেছে। এই ট্রেনের আরেকটি বিশেষ জিনিস হল এর কোচগুলো কাঠের তৈরি। ভাকরা নাঙ্গল বাঁধ নির্মাণের সময়ে, এই ট্রেনটি শ্রমিক এবং মেশিন বহন করতে ব্যবহৃত হতো। বাঁধের উদ্বোধনের পরে, এই ট্রেনটি পর্যটকদের জন্য উপলব্ধ করা হয়েছিল।
এই ট্রেনের পথে, তিনটি টোল এবং বেশ অনেকগুলি স্টেশন রয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ৮০০ জন লোক যাতায়াত করে এই ট্রেনে। ২০১১ সালে, আর্থিক ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে এটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে, পরে এই সিদ্ধান্ত পাল্টে নেওয়া হয়। পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, এই ট্রেনটিকে ভারতের একটি ঐতিহ্য হিসাবে দেখা উচিত, আয়ের উত্স হিসাবে নয়। এরপরই আবারো নতুন করে যাত্রা শুরু হয় ভাক্রা নাঙাল ট্রেনের।