একুশে নির্বাচনের আগে বিরোধীপক্ষ গেরুয়া শিবির শাসকদলের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি করার অভিযোগ তুলেছিল। তার মধ্যে অন্যতম আমফান ত্রাণ দুর্নীতি। সবাই প্রশ্ন তুলেছিল ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় রাজ্য সরকার ত্রান ও পুনর্বাসনের জন্য কত টাকা খরচ করেছিল? কিছুদিন আগে কলকাতা হাইকোর্ট এই দুর্নীতি তদন্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থা CAG কে দায়িত্ব দিয়েছিল। সেই অনুযায়ী নবান্নকে সমস্ত হিসেব CAG কে জানানোর কথা ছিল। তবে সম্প্রতি জানা গেছে CAG এখন অব্দি নবান্নের থেকে কোন হিসেব পাইনি। এই জন্য আজ অর্থাৎ শুক্রবার আদালতের শুনানিতে নবান্নকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে।
আজ আদালতে নবান্নকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছে তারা CAG কে আম্ফান ত্রান ও পুনর্বাসন খরচ কবে বিস্তারিত জানাবেন? আজকে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী সোমবারের মধ্যে সব তথ্য জমা দিতে হবে। রাজ্য কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছে তারা এতদিনে CAG কে রিপোর্ট দেয়নি কেন? তার উত্তরে রাজ্য পক্ষ থেকে জানিয়েছে, “চলতি অর্থবর্ষে এখনো শেষ হয়নি। জেলা থেকে যাবতীয় আর্থিক রিপোর্ট জমা পড়ে অর্থবর্ষে শেষের পর। তাই এখনো আমফানের ক্ষতিপূরণের রিপোর্ট জেলাশাসকের থেকে পাওয়া যায়নি।”
গত মে মাসে বাংলার ওপর ঘূর্ণিঝড় আমফান প্রবল তান্ডব করে। ঘূর্ণিঝড় এর জেরে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের করা আবেদনের নিরিখে চলে ত্রান বন্টন। এমনকি যাদের বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তারা ২০০০০ টাকা অব্দি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু এইখানেই শুরু হয় সমস্যা। বিরোধীদের অভিযোগ অনুযায়ী, আমফানের ত্রাণ আসলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা পায়নি। বরঞ্চ পেয়েছে তৃণমূলের নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠরা। ত্রান বন্টন নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে শাসক দল। পরে এই নিয়ে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন যারা যারা দুর্নীতি করে টাকা পেয়েছেন তাদের অবিলম্বে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে।
অবশেষে কলকাতা হাইকোর্ট পুরো ঘটনার গভীর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা CAG কে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, তারা যাচাই করে দেখবে কারা ত্রান পেয়েছেন। তাদের একটা তালিকা তৈরী করতে হবে। সমস্ত যারা আসল ক্ষতিগ্রস্ত তারা ত্রান পেয়েছেন নাকি সেটাও তাদের জানতে হবে। এছাড়াও ত্রান বণ্টনের সময় যে দুর্নীতি হয়েছে তার জন্য কোন সরকারি আধিকারিক দায়ী তা খুঁজে বার করতে হবে। যারা দুর্নীতির জন্য দায়ী হবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তরফে কি পদক্ষেপ নেবে তা জানিয়ে দেবে CAG। সেই নির্দেশের নিরিখে এখনো মামলা চলছে। তবে মামলায় নবান্নের ভূমিকা নিয়ে বেজায় চটেছে কলকাতা হাইকোর্ট।