নিজের অ্যাপার্টমেন্টে গাছ লাগিয়ে ইউটিউব ভিডিও করে ভাইরাল হলেন এই কন্যা

শ্রেয়া চ্যাটার্জি – গাছ লাগানোর ইচ্ছা থাকলেও সব সময় জায়গার অভাবে তা পূরণ করা যায় না। এই সমস্যাটি অনেকেরই মনের কথা। কিন্তু ইউটিউব খুললেই গাছ বিষয়ক যারাই ভিডিও বানিয়ে থাকেন তাদের মধ্যে একটি অতি পরিচিত মুখ একতা চৌধুরী। সুন্দর ভাষায়, সদাহাস্য মুখে পরিষ্কার করে আপনাকে বুঝিয়ে দেবে কি করে বাগান না থেকেও আপনার বাড়ির ঘর গুলিতে আপনি সবুজের ছোঁয়া রাখতে পারেন। ব্যালকনিতে তৈরি করতে পারেন পটল, টমেটো, শসা নানা ধরনের সবজি। মুম্বাইয়ের হাজার বর্গ মিটারের একটি অ্যাপার্টমেন্টকে একতা সবুজের ছোঁয়া রেখেছেন। তারই ভিডিওর সাবস্ক্রাইবার এর সংখ্যা প্রায় ছয় লক্ষেরও বেশি। শুধু তাই নয়, তিনি ‘গার্ডেন আপ’ বলে একটি সামাজিক এন্টারপ্রাইজ খুলেছেন, যেখানে তিনি নানান রকমের ঘর সাজানোর দ্রব্য, গাছ লাগানোর পাত্র যা সমাজের খুব নিম্নবিত্ত মহিলাদের দ্বারা বানানো, তা বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন।

ছোটবেলা থেকেই একতার সঙ্গে গাছের একটা সুন্দর সখ্যতা তৈরি হয়েছিল। একতা হরিয়ানার মেয়ে তবে জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই তার কেটেছে ফরিদাবাদের নয়ডাতে। তিনি জানান, সেই সময় তার বাড়িতে সব সময় জল আসতো না। যে সময়টা জলের সময় ছিল সেই সময় গাছকে প্রতিদিন জল দেওয়া তার নিত্যনৈমিত্তিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জীবন বিজ্ঞানের উপর ব্যাচেলর ডিগ্রী শেষ করার পরে তিনি দেরাদুনে এনভারমেন্টাল সায়েন্স এর উপরে মাস্টার ডিগ্রী করেন। উত্তরাখণ্ডের আলপাইন অঞ্চলের ফিল্ডওয়ার্ক করতে করতেই তার গাছের প্রতি একটা ভালোবাসা জন্মায়। হোস্টেলের ঘরেই ছোট ছোট জায়গায় তিনি গাছ লাগাতে শুরু করেন। তারপরই তিনি বুঝতে শুরু করলেন বৃক্ষরোপণ কতভাবে মানুষের শরীর এবং মনের মধ্যে প্রভাব ফেলে। ডিপ্রেশন, রাগ, ভয়ের ভাব সমস্ত কমিয়ে দেয়। হোস্টেলের ঘরে থাকাকালীনই তিনি বাড়ির মধ্যে প্রায় ৩০ টি গাছ লাগিয়েছিলেন। ল্যাবের ঘরে ছোট করে বানিয়ে ফেলেছিলেন কিচেন গার্ডেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি ইউটিউব এর ভিডিও করা শুরু করেন। ছুটির দিনগুলোতেই তিনি এই ভিডিওগুলি দিতেন। কিভাবে সুন্দর করে বাগান করা যায় বাগান সম্পর্কিত নানান ধরনের আলোচনা তিনি ভিডিও গুলির মধ্যে দিয়ে করে থাকেন। তার কথা অনুযায়ী, “যেখানেই ফাঁকা জায়গা পাবেন, সেখানেই গাছ লাগান”। আজ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ এর দিনে এই কথাটি বড়ই গুরুত্বপূর্ণ কথা। এই মুহূর্তে এক তার অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে রয়েছে ১০০ টির মত ইনডোর প্ল্যান্ট। ৪০ টির শাক সবজির গাছ দিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন একটি ছোট্ট “কিচেন গার্ডেন”।

গাছ বসানোর ক্ষেত্রে একটি ভীষণ জরুরী জিনিস হল গাছগুলিকে উপযুক্ত সার দেওয়া। কিভাবে বাড়ির জিনিসপত্র দিয়ে সার তৈরি করা যেতে পারে তারও অনেক ভিডিও একতা গাছ প্রেমীদেরকে উপহার দিয়েছেন। রান্না করে ফেলে দিব সবজির খোসা, ডিমের খোলা ইত্যাদি দিয়ে সুন্দর করে বানানো যেতেই পারে জৈব সার। যারা সদ্য সদ্য বাগান তৈরি করতে চাইছেন তাদের জন্য একতা বলেছেন, “একজোড়া কম দামের ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে শুরু করুন, তারপরে আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন সেই গাছগুলির কতটা জল দরকার, কতটা সূর্যের তেজ দরকার। তারপরে আস্তে আস্তে বাড়ির উঠোনে, ছাদে গাছ লাগাবেন এবং তৈরি করবেন ছোট আকারের কিচেন গার্ডেন।” বিশ্ব পরিবেশ দিবসে চলুন আমরাও শপথ করি গাছ লাগানোর। যাদের জায়গা নেই তারা ঘরের মধ্যেই লাগাই ছোট ছোট ইনডোর প্ল্যান্ট। এই গাছগুলো পরিবেশকে পরিষ্কার করতে এবং অক্সিজেনের যোগান বৃদ্ধিতে অনেক সময় সাহায্য করে। তাই সকলকে মাথায় রাখতে হবে ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’।