BB Specialম্যাগাজিন

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস! যাযাবর জীবন থেকে বসত জীবনে শিক্ষা ঠিক কতটা গুরুত্ব পূর্ণ ছিল?

Advertisement

ছোট খোকা বলে অ আ শেখেনি সে কথা কওয়া 

সহজ পাঠের এই শ্লোক মুখস্ত করে আমাদের ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া। প্রথমে শিক্ষাটা শুরু হয় কালো স্লেটের  উপর সাদা চক দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটার মাধ্যমে। কখনো মায়ের পাশে রান্নাঘরে বসে কখনোবা, সকাল বেলা বাবার কাগজ পড়ার সময় পাশে বসে। তারপর আস্তে আস্তে মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়া। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা সহচর্য তে একটু একটু করে বড় হওয়া এবং শিক্ষার মুখ দেখা। শিক্ষাকে বুঝতে পারা। এই ভাবেই সাক্ষরতা এবং জীবন একই সাথে চলতে থাকে।

তবেই প্রাচীনকালে শিক্ষাটা কিন্তু হয়েছিল অনেক আগেই। মানুষ যখন গুহায় বাস করত গাছের কোটরে বাস করত। তখন হয়তো খাতা বই নিয়ে কেউ পড়াশোনা করেনি, তবে আদিম মানুষ যখন একটু একটু করে মানুষ হয়েছিল তার জন্য কিন্তু তাকে অনেক কিছু শিখতে হয়েছিল। অনেক কিছু কৌশল রপ্ত করতে হয়েছিল। তার মধ্যেও লুকিয়ে আছে শিক্ষা।

আস্তে আস্তে শুরু হলো যাযাবর জীবন থেকে বসত জীবন। মানুষ ঘরবাড়ি তৈরি করে একসাথে থাকতে শিখল। তবে তারা লিখতে পারতো না প্রথমে। তারা গুরুর থেকে শুনে শুনে মনে রাখত। এরফলেই আদিম যুগে বেদের সৃষ্টি হয়। তবে বেদের আরেক নাম শ্রুতি যেহেতু বেদ কোনো লিখিত নয়। স্বামীজি বলেছিলেন ‘বেদ বলিতেছেন ওঠো জাগো যতদিন না লক্ষ্যস্থলে পঁহুছিতেছ থামিও না’।

এক এক্কে এক দুই একে দুই
নামতা পড়ে ছেলেরা সব পাঠশালার ওই ঘরে

বাংলার প্রাথমিক শিক্ষার সাথে বাংলা লিপি কিংবা অক্ষরে সম্পর্ক অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। শুরু হলো পাঠশালা। যা পরবর্তীকালে বিদ্যালয় রূপ নেয়। বাংলা লিপির উৎস উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল তা স্পষ্ট জানা যায় না। গবেষণা মনে করা হয় বাংলা লিপির ব্যবহার একাদশ শতক থেকে প্রচলিত। ইংরেজ শাসনের বহু আগেই মুসলিম শাসন কাল থেকে বাংলা সুলতান এর ব্যবহার এবং বাংলা ভাষার পুঁথি রচনা ব্যাপকতা পেতে থাকে এবং বাংলা লিপির ব্যবহার মধ্যযুগীয় ভারতের পূর্বাঞ্চলের শুরু হয়েছিল। তারপরেই যেন পাল সাম্রাজ্যের মধ্যে এর ব্যবহার ছিল। আরো অনেক পরে বিশেষভাবে বাংলার অন্য অঞ্চলে  ছড়িয়ে পড়ল। এরপর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর দ্বারাই ‘আধুনিক বাংলা’ লিপিতে প্রমিত করা হয়।

বাংলা শিক্ষাকে সর্বজনীন মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পশ্চাতে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা অতুলনীয়। তিনি বর্ণপরিচয় লেখেন এবং তার মাধ্যমে সর্বসাধারণের মধ্যে বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দেন এবং তিনি সমাজের কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন আনেন। তিনি নারী শিক্ষা চালু করেন এবং তিনি বুঝেছিলেন যে নারীরাই হচ্ছে সমাজের একমাত্র উন্নতির চাবিকাঠি সুতরাং তাদের শিক্ষিত হওয়ার খুব প্রয়োজন আছে।

বিদ্যাসাগরের পাশাপাশি এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক ভূমিকা রয়েছে। তিনিও শিক্ষাকে সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শান্তিনিকেতনে গাছের ছায়ায় এক বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেন। সেখানে সর্বধর্ম সমন্বয় সবরকম মানুষেরা এসে শিক্ষা লাভ করতে পারে এবং শুধুমাত্র পড়াশোনা শিক্ষা নয় অঙ্কন, সঙ্গীত সবই তারা শিখতে করতে পারে।

তবে এ বিষয়ে জাতির জনকের অবদানও স্মরণে রাখা বাঞ্ছনীয়। নিরক্ষরতার অভিশাপ মোচনের লক্ষ্যে  বঙ্গবন্ধু গণমুখী শিক্ষা কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। ডঃ কুদরত ই খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। এই শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে তিনি চেয়েছিলেন। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের সন্তানেরা যাতে নিরক্ষর না থাকে সেই চিন্তাই তিনি করেছিলেন। শোষিতের ঘরে শিক্ষার আলো  দান করতে চাইছিলেন। তার প্রাণ কেড়ে নেওয়ার কারণে সবকিছু ধুলায় লুণ্ঠিত হয়েছিল। তাই সেই দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত গড়ে দিয়েছিল কৃষক সমাজের মাধ্যমেই আজও তারাই অর্থনীতিকে সচল রেখেছে শ্রম ও মেধার প্রচেষ্টায়। দেখা যাবে যে বেশিরভাগ মেহনতী মানুষই নিরক্ষর। নিরক্ষরতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যেই সময়ের পরিক্রমায় সাক্ষরতার চাহিদাও বেড়েছে।

তবে এখানে শুধু বাংলায় শিক্ষিত হওয়ার কথা বললে ভুল বলা হয় এ প্রসঙ্গে রামমোহন অনেকদিন আগেই আমাদের দেশকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। এখন আমাদের দেশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় কারণ ইংরেজি শিক্ষা এখন আবশ্যক। তাই এখন বিদ্যালয়ের একদম প্রথম শ্রেণী থেকেই  ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পরবর্তীকালে স্বামীজি বলেছেন 

আমরা জগতে যাহা কিছু দুঃখ কষ্ট ও অশুভ দেখতে পাই সব ই অজ্ঞানও অবিদ্যা হতে প্রসূত। মানুষকে জ্ঞানালোক দাও, সকল মানুষ পবিত্র আধ্যাত্মিক বল সম্পন্ন  শিক্ষিত হোক। কেবল তখনই জগতে দুঃখ নিবৃত্ত হবে, তার পূর্বে নয়।

দেশের  সাক্ষরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা  সাক্ষরতার সঙ্গেই যেন দেশের উন্নতির একটা ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে। যে দেশে সাক্ষরতার হার সবচেয়ে বেশি সে দেশের উন্নতি ও সবচেয়ে বেশি।  উন্নত জাতি সচেতন জাতি। শিক্ষা সাধারণত তিনটি উপায়ে অর্জিত হয়। আনুষ্ঠানিক, উপ-আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা। যারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পায়নি তাদের সাক্ষরতার জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া হয়। এখন সরকারি, ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রচেষ্টায় সাক্ষরতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। তাই ৮ ই সেপ্টেম্বর কে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস বলে ঘোষণা করে,  1965 সালের 17 ই নভেম্বরে।

Written by – শ্রেয়া চ্যাটার্জী

Related Articles

Back to top button