সাক্ষাৎকার

আমি পুলিশ কমিশনার হলে বলতাম অনুরাগ ঠাকুরকে গ্রেফতার করতে : প্রাক্তন মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য

Advertisement

30 শে জানুয়ারি দিল্লির জামিয়া এলাকায় সি এ এ বিরোধী মিছিল শুরু হবার কথা ছিল। মহাত্মা গান্ধীর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে দিল্লি রাজঘাট পর্যন্ত এই মিছিল হবার কথা ছিল কিন্তু মিছিল শুরু হবার আগে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। মিছিল শুরু হবার আগেই এক যুবক দ্বারা দেশি রিভলবার হাতে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। গুলিতে 1 জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। অস্ত্রধারী সেই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গত 29 শে জানুয়ারি নাগরিক মঞ্চ নামক এক সংগঠনের তরফ থেকে সিএএ বিরোধিতায় জলঙ্গিতে বনধ এর ডাক দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে 29 শে জানুয়ারি বহু গ্রামবাসী সাহেব নগর এলাকায় ধর্নায় শামিল হয়েছিলেন। সেই সময়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতী চারপাঁচটা গাড়ি করে এসে তাদের উপর চড়াও হয়। তাদের উপর বোমাবাজি করে , গুলি চালায় বলে অভিযোগ। এই হামলা ও গুলি চালানোর ফলে দুই জন ব্যাক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর সাথে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তাহেরউদ্দিন মন্ডল এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেবার জন্য ভারতবার্তার প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিল মাননীয় বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য এর সঙ্গে। তিনি এই বিষয়ে তার মতামত আমাদেরকে জানান।

দিল্লির জামিয়া এলাকায় বিরোধী মিছিল শুরু হবার আগে এক ব্যক্তি দ্বারা গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় 1 জন আহত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। পুলিশ সেই অস্ত্রধারী যুবককে গ্রেফতার করেছে। কি বলবেন আজকের এই ঘটনাটিকে নিয়ে ?

বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : টেলিভিশনে আমি যতটুকু দেখলাম তার থেকে আমার এটাই মনে হচ্ছে এই ঘটনা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত। পুলিশ প্রশাসন এই ঘটনার ব্যাপারে জানতেন তা নাহলে পুলিশের পাহারারত অবস্থায় এক যুবক বন্দুক হাতে বেশ খানিকটা পথ হেঁটে বেড়াচ্ছে ও ছাত্রদের প্রতি সে গুলিবর্ষণ করলো। ততক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ কোন কিছু করেনি যখন সংবাদমাধ্যম ক্যামেরা নিয়ে সেই ভদ্রলোকের দিকে তাড়া করে যাচ্ছে তারপর দেখলাম পুলিশ পুলিশ সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এই ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন নয় কারণ , গত দুই – এক দিন আগে অনুরাগ ঠাকুর তিনি বলেছেন ‘ গোলি মারো সারে লোগকো ‘ এই ধরনের কিছু একটা শব্দ উচ্চারণ বলেছিলেন। তারই এটা পরিকল্পিত প্রয়াস। সেই জন্য এই ঘটনাটিকে নিন্দনীয় বললে ভুল হবে , এটা পরিকল্পিত। পুলিশ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণাধীন , তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল। যদি সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরা সেখানে না থাকতো তাহলে আমার ধারণা সেখানে দু’চারটে লোককে মেরে ফেলে দিয়ে সে চলে যেত। পুলিশ বলতো যে আন্দোলনকারীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার বক্তব্য প্রশাসন যদি সৎ ও নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করে তাহলে প্রথম গ্রেপ্তার করা উচিত অনুরাগ ঠাকুর কে।

তাহলে কি পুলিশ প্রশাসনের উপরে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব খাটানো হচ্ছে ?

বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : পুরোপুরি। আমি বললাম তো এটা পরিকল্পিত। পুলিশ প্রশাসনের সামনে এই ঘটনা হয়েছে ও ঘটনা আরো খারাপ হতে পারতো যদি সেখানে টিভি , ক্যামেরা না থাকতো। আমি পুলিশ কমিশনার হলে বলতাম অনুরাগ ঠাকুর কে গ্রেফতার করতে কারন সে প্ররোচনা দিয়েছে। যে গুলি করেছে সে তো একজন ভাড়াটে ধর্মীয় গুন্ডা। ধর্মীয় উগ্রবাদী গুন্ডারা এই ধরনের কাজ করে কিন্তু তাকে উত্তেজিত করেছে এই অনুরাগ ঠাকুর। তাকে গ্রেফতার করা হবে না কেন ?

তার মানে আপনি বলতে চাইছেন এ ঘটনায় বিজেপি এর হাত রয়েছে ?

বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : স্পষ্ট , কোনো সন্দেহ নেই। এর জন্য খুব বেশি তদন্তের প্রয়োজন হয় না। অনুরাগ ঠাকুর ও ওই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক , তথ্য বেরিয়ে যাবে। গোপনে নয় একদম ভিডিও ক্যামেরার সামনে এবং এর পেছনে অমিত শাহের এক নীরব সম্মতি আছে এই ব্যাপারটাও উড়িয়ে দিই না।

জলঙ্গীর সাহেবনগরে সি এ এ এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ ডাকা হয়েছিল নাগরিক মঞ্চ নামক সংগঠনের তরফ থেকে। সেই উপলক্ষে ধরনায় বসে ছিল বহু গ্রামবাসীরা সেই সময় বেশ কিছু দুষ্কৃতী এসে বোমা গুলি দ্বারা হামলা চালায়, যার ফলে দুজন মানুষ এর মৃত্যু হয়েছে। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে সূত্রে খবর। এই ঘটনার অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূল ব্লক সভাপতির দিকে। কি বলবেন আপনি এই ঘটনাটিকে নিয়ে ?

বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : গতকালই আমি ফেসবুকে আমার মতামত এই ঘটনা সম্পর্কে দিয়েছি। মমতা ও আরএসএস তারা একই নৌকার যাত্রী। মমতা বাম আন্দোলনকে ও সিএএ বিরোধী আন্দোলনকে বিপথে পরিচালিত করার জন্য কিছু নাটক করছেন। সেই নাটকের ঘোমটাটা কাল খসে পড়ে গেছে। অনুরাগ ঠাকুরের যে স্লোগান , দিলীপ ঘোষ যা বলছেন এদের গুলি করে মারব সেই কাজটা মমতাকে দিয়ে এরা করালেন। কারণ , বিজেপি সরাসরি এই কাজ করলে পশ্চিমবঙ্গের বুকে গতকালই তাদের কবর খুঁরে যেত। আজকে এটা মমতা করাচ্ছেন। মমতা ও বিজেপি এর মধ্যে মৌলিক কোন ফারাক নেই। তারা একই কাজ করছে।

এখানেই আমার একটা প্রশ্ন , আপনি বলছেন তৃণমূলের তরফ থেকে নাটক করা হচ্ছে কিন্তু সি এ এ নিয়ে শুধু বাম কংগ্রেস না তৃণমূল বিরোধিতা করছে। ( পুরো শেষ না হতেই)

বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : তৃণমূলের বিরোধীতা টা সম্পূর্ণ নাটক। তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গের বুকে বিরোধিতা না করলে ওদের অস্তিত্ব থাকবে না। সেইজন্য নাটক করছেন। মনে রাখবেন এই অনুপ্রবেশের তত্বটা হাজির করেছেন মমতা। 2005 সালে তিনি পার্লামেন্টের বুকে কাগজপত্র ছুড়ে দিয়ে , অনুপ্রবেশে ভরে গেছে দেশ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ। এই অবস্থা তুলেছিলেন তিনি। তারপরেই আরএসএস তাকে বলেছিলেন আমাদের দুর্গা। সেই দুর্গা আরএসএস এর কাজকর্ম টা সুচারুরূপে করছেন। এটা পুরোপুরি ওনার একটা মুখোশ।

আচ্ছা গতকাল তৃণমূল ব্লক সভাপতি জহির উদ্দিন মন্ডলের ভাইকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে নাগরিক মঞ্চের বিরুদ্ধে এবং এই সমগ্র ঘটনার জন্য এক প্রকার পাম কংগ্রেসকে দায়ী করেছে। কি বলবেন এটাকে নিয়ে ?

বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : সেতাই করতেই পারে , তাকে বাঁচবার জন্য বলতেই হবে পাল্টা কথা। তৃণমূলকে বাম-কংগ্রেস বলতে হবেই , সুযোগ পেলে শুধু বাম বলে দিতে পারতো। সুতরাং বাচবার জন্য এটা বলতেই হবে। দুজন মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন যারা আন্দোলন করছিলেন তারাই। আর সেটা আন্দোলনকারীরাই মেরেছে এই ধরনের মূর্খের প্রলাপ এরা করেন। সেটা নিয়ে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। এই সমস্ত ঘটনা যদি নিরপেক্ষ তদন্ত হয় তাহলে আসল অপরাধী ও অপরাধের চক্রান্ত নাগপুর থেকে হচ্ছে এটা প্রমাণ হয়ে যাবে।

আচ্ছা সিএএ নিয়ে নানা ধরনের তর্ক বিতর্ক , পক্ষে বিপক্ষে , আলোচনা-পর্যালোচনা চলছেই কিন্তু কিন্তু আস্তে আস্তে এটা কি কোন হিংসাত্মক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে ?

বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য : এটাই তো বলতে চাইছি। যে মুহুর্তে শাসক দল ও তার অনুগামীরা বুঝতে পারছে মানুষ ক্রমশ সি এ এ ও এনআরসি বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হচ্ছে । মানুষের আন্দোলন জোট বাঁধছে। তখন তাকে ভাঙবার একমাত্র রাস্তা হচ্ছে হিংসাত্মক পথে যাওয়া , গুলি করা , লোককে ভয় দেখানো , খুন করা। যাতে লোকে সংগঠিত হতে সাহস না পায়। এটাই তো পরিকল্পনা , প্রথম থেকে বলছি এটা একটা সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।

[ সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস ]

Related Articles

Back to top button