সাক্ষাৎকার

বিজেপি বিভ্রান্ত করছে এই কথাটা সম্পূর্ণ ভুল : জয়প্রকাশ মজুমদার

Advertisement

৫ই ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণনগরের এক কর্মী সভা থেকে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হন তিনি। শুধু তাই নয় এদিন তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে সোচ্চার হোন। ৫ই ফেব্রুয়ারি কৃষ্ণনগরের জনসভা থেকে এদিন তিনি এনআরসির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হোন। তিনি এদিন বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন – বিজেপি মানুষকে ভাত দিচ্ছে না এনআরসি দিচ্ছে। এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেবার জন্য ভারতবার্তার প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিলেন রাজ্য বিজেপির নেতা মাননীয় শ্রী জয়প্রকাশ মজুমদারের সঙ্গে। তিনি তার ব্যক্তিগত মতামত এদিন ভারত বার্তাকে জানালেন।

কৃষ্ণনগরের কর্মীসভা থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা ব্যানার্জি বিজেপিকে কটাক্ষ করে বলেন যে বিজেপি আসার পর সারা দেশে বেকারত্ব বেড়েছে 45 বছরের সবথেকে বেশি। তেরি এর সাথে এটাও স্পিসিফি করে বলেন যে রাজ্যে 40% বেকারত্ব কমেছে , বাংলায় বেকারত্ব ঘুচিয়েছে তার দল। কি প্রতিক্রিয়া দেবেন এই মন্ত্যবের পরিপ্রেক্ষিতে ?

জয়প্রকাশ মজুমদার : প্রথম কথা বেকারত্বের সংজ্ঞা আগে উনাকে নির্ণয় করতে হবে। বেকার বা বেকারত্ব বেড়েছে এগুলো খুব হাইলি টেকনিক্যাল কথা। টেকনিক্যাল এই কারণে যে , তুমি কি সরকারি বা আধা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বলছেন? কারণ সাধারণভাবে এই সরকারি-আধা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটা বেড়ে ওঠা অর্থনীতিতে একটা জায়গায় এসে self-made জায়গায় পৌঁছায়। প্রত্যেকদিন ব্যাংকে চাকরি , স্কুল মাস্টারের চাকরি ইত্যাদি হয়ে ওঠেনা। তার জন্য একটা গ্রোয়িং ইকোনমিতে এই জায়গাটা হয় প্রাইভেট সেক্টরে। সুতরাং এই তথ্যগুলো তিনি যখন বলছেন আগে সেই তথ্য কিসের উপর নির্ভর সেটা আগে দেখতে হবে। কারণ নরেন্দ্র মোদির শাসনকালে সবথেকে বেশি বেড়েছে সেটা ওনার থিওরি যা সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত যে , ডোন্ট থিংক এম্প্লয়মেন্ট ট্রাই টু বি এমপ্লয়ার। চাকুরীর জন্য ঝাঁপিয়ে না পড়ে চাকরি দাতা হিসেবে নিজেকে তৈরি করো। যে কারণে মুদ্রা লোনের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল সাধারণ যুব সম্প্রদায়ের জন্য। বিভিন্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও অন্য জায়গায় সেখানে যে পরিমাণ ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানো হয়েছে মনে করুন আজকে রাস্তা হচ্ছে এক লক্ষ কোটি টাকা সেখানে যে বা যারা রাস্তা তৈরি করছে , যে পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে সেখানে লোকজনে দরকার হচ্ছে ও তার আগে কাজ করছে। এই সমস্ত পরিসংখ্যান কি মমতা দেবী নিজে নিজে নিয়েছেন বা পেয়েছেন ? নাকি তিনি শুধু সরকারি বা আধা সরকারিদের ওপর নিজের তথ্য বলছেন ? সুতরাং উনার এই তথ্যের কোন দাম নেই। তিনি তার মিটিং থেকে যে ইনফরমেশন গুলো বলে তার অধিকাংশই সত্য নয়। আমি বলব না মিথ্যে কথা বলছেন কারণ সেটা আন ডিপ্লোম্যাটিক। উনার দেয়া তথ্যে অভাব আছে। দ্বিতীয় কথা এই পশ্চিমবঙ্গের কথা যদি তিনি বলেন , তাহলে সিভিক পুলিশ ছাড়া আর কোথাও এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন করতে পারেননি। সবথেকে দুঃখের কথা পশ্চিমবঙ্গে সাধারণ যুবক যুবতীদের তিনি আশা-আকাঙ্ক্ষা বেঁধে দিয়েছেন যে তোমরা সিভিক পুলিশ হবে। এই যদি তার এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন হয় তবে সেই এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন কে আমরা নিন্দা করছি। সিভিক পুলিশ এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন নয়। উল্টোদিকে উনারই তথ্য বলছে 70 হাজার শিক্ষক অ্যাপোয়েন্টমেন্ট বাকি। পরীক্ষা দিতে পারেননি, ইন্টারভিউ দিতে পারেননি, অ্যাপোয়েন্টমেন্ট দিতে পারেননি , হাজার হাজার কেশ শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির জন্য হাইকোর্টে ঝুলছে, স্কুলে কোনো শিক্ষক নেই, তিনি ছাত্র পরিষেবায় ডাক্তার দিতে পারেন না, নার্স দিতে পারেন না। এখানকার লোকজন তারা বাইরে কেন চলে যাচ্ছে তার উত্তর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিতে হবে। কেন কাশ্মীরে 10 জন মারা গিয়েছিল ? কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে বাংলার লোক কেনো মারা গেল ? কারণ বাংলায় চাকরি নেই বলে। তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। যারা খেটে খাওয়া লোক শ্রমজীবী তারাও শ্রমজীবীর কাজটাও এখানে পায়না বলে সারা ভারতে চলে যায়। মুর্শিদাবাদে গিয়ে দেখুন তারা সাউথ ইন্ডিয়া তে যাচ্ছে, কাশ্মীরে যাচ্ছে, অন্যান্য জায়গায় তারা গিয়ে কাজ করছে। এই জন্য তিনি সত্যের অপলাপ করছেন।

এ দিলি কর্মীসভা থেকে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এনপিআর নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, জনগণনা নামে বাবা মায়ের জন্মস্থান চায় ওরা। না দিতে পারলে তালিকা থেকে বাদ। আমার জন্ম তারিখ ও স্থানীয় রাজনীতিতে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। এটা কি আদৌ কম্পালসারি ? কি বলবেন পুরো বিষয়টিকে নিয়ে ?

জয়প্রকাশ মজুমদার : এন পি আরে নাম বাদ বা যোগের ব্যাপার থাকে না। সুতরাং এই বিষয়টিকে নিয়ে তিনি মানুষকে ভুল বুঝিয়েছেন। দ্বিতীয় কথা এন পি আর জানার দরকার আছে বাবা-মা কোথাকার লোক। এর পেছনে একটা বড় সামাজিক কারণ আছে। কারণ, বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় সমস্ত দেশে সামাজিক অবক্ষয়ের জায়গা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেটা হচ্ছে গ্রাম থেকে শহরে চলে যাবার প্রবণতা। এতে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। গ্রাম ভিত্তিক কৃষিভিত্তিক দেশ ভারত। সেখানে যদি দেখা যায় , গ্রামের ছেলে গ্রামে থাকতে চাইছে না বাবা চাষাবাদ করে তার ছেলে চাইছে হালিশহর বা কলকাতায় চলে যেতে। তাহলে যে ভারসাম্য নষ্ট হবে তার জন্য কি করা দরকার ? সেই প্ল্যানিং করতে গেলে এই তথ্যটা জানা দরকার যে কোন জায়গায় এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ? কেন হচ্ছে ও তারজন্যে প্রতিষেধক কি ? গ্রাম কেও উন্নত করতে হবে , গ্রামের মানুষ গ্রামে থাকবে , গ্রামে থেকেই গ্রামকে উন্নত করতে হবে। আর ভারতে উন্নয়ন প্রকল্প সেইভাবেই তৈরি করতে হবে যাতে এই সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট না হয়। বরং উল্টে নিজের জায়গায় থাকতে পারে। এই এন পি আরে তথ্য লাগে সামনের দিনের ডেভলপমেন্ট প্ল্যানিং করতে । তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন এসব স্ট্যাটিস্টিক তথ্য আমাদের ভবিষ্যতের দেভেলোপমেন্ট প্ল্যান কে শক্তিশালী করবে সেই সঠিক তথ্যের দরকার নেই ভারতের ? তিনি কার হয়ে কথা বলছেন ? পাকিস্তানের হয়ে কথা বলছেন যাতে ভারতের ডেভলপমেন্ট না হয়? মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন যে তথ্য দিও না। তিনি দেশের গোড়ার বেস নামক গাছের গোড়া কেটে আগায় জল দিচ্ছেন।

রেল বিএসএনএল এলআইসি বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এলআইসির কথা বলতে গেলে এমন খবর জানা গেছে , 1956 সালে এলআইসি প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। তখন ভারত সরকার পাঁচ কোটি তদানীন্তন মোট মূলধনের 5 শতাংশ বিনিয়োগ করেছিলেন। সেই বিনিয়োগের ডিফিডেন্ট পারছিল ভারত সরকার বিগত 63 বছর ধরে। সেই 5% এর কিছু অংশ আইপিও এর মাধ্যমে বিক্রি করা হবে বা সাধারণ মানুষ শেয়ার কিনতে পারবে। তাহলে এলআইসি বিক্রি হয়ে গেল, এই গেল গেল রব ওঠার পেছনে কারণটা কি বলে আপনি মনে করছেন ?

জয়প্রকাশ মজুমদার : মানুষকে ভয় দেখানো। এলআইসি এতদিন ধরে 85% শেয়ার জনগণের মধ্যে ছিল , বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে ছিল। বাজেট পেশের আগে সাধারণ মানুষ জানত না এমনকি মমতা দেবীও জানতেন না যে এলআইসির কত শেয়ার সরকারের এর কাছে আছে ? আজকে যখন সেই 5 শতাংশ শেয়ারের কিছু অংশ বাইরে বিক্রির কথা করা হয়েছে উনি গেল গেল রব তুলে মানুষকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছেন। রেলের বেসরকারিকরণের প্রধান বক্তা ছিলেন লালু প্রসাদ যাদব। সেই রেলের বিলগ্নীকরণ এর কাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাত লাগিয়েছিলেন। নিজে কুড়িটি প্রজেক্ট পশ্চিমবঙ্গের জন্য করেছিলেন তার মধ্যে 12 টি ছিল পিপিপি মডেল। তাহলে সেদিন তিনি কেন করেছিলেন ? ভারতের উন্নয়নের জন্য যে পলিসি যাচ্ছে , পলিসির যে অগ্রগতি হচ্ছে বেসরকারীকরণ এর মধ্যে দিয়ে , বিভিন্ন আইন-কানুন এর বেড়াজালের মধ্যে ইকোনমিকে আটকে না রাখার জন্য। সেগুলো কি এখন উনি কোন বিরোধী শক্তি নয় , যেন বিদেশি শত্রুর মতো উনি কাজ করছেন। আমার নাম করে লিখবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ভারতের রাজনীতিতে বিরোধী শক্তির থেকে বেশি কাজ করছেন বিদেশি শত্রু হিসেবে। যাতে ভারতের সমস্ত দিকে অগ্রগতি আটকে যায়।

মুখ্যমন্ত্রী কৃষ্ণনগরের কর্মীসভা থেকে এটাও বলেছেন বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করছে , বিজেপির ধর্ম সম্বন্ধে কোনো জ্ঞান নেই , বিজেপিকে বিশ্বাস করবেন না সকাল-সন্ধ্যা পাকিস্তানের কথা দশবার বলে হিন্দুস্তানের কথা একবার বলে। কি বলবেন এই মন্তব্যটিকে নিয়ে ?

জয়প্রকাশ মজুমদার : কারণ আমরা জানি আমরা হিন্দুস্তানি আছি , পাকিস্তানের থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে তাই পাকিস্তানকে নিয়ে বলা হয়। দ্বিতীয় কথা এটা বলতে চাই , বিজেপি বিভ্রান্ত করছে এই কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। বিজেপি ম্যানিফেস্টোতে যা যা লিখেছিল তার উপরে ভিত্তি করে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিল মানুষ। আমরা সেই ম্যানিফেস্টো অনুযায়ী কাজ করছি। এতে বিভ্রান্তির কিছু নেই। কোনটা বিভ্রান্ত ? 370 ধারা বিলোপ করবো এটা আমাদের লেখা ছিল। আমরা করেছি , এতে বিভ্রান্তির কি জায়গা আছে ? তিন তালাক দূর করবো বলেছিলাম আমাদের ম্যানিফেস্টোতে। আমরা করেছি , এতে কোনো বিভ্রান্তি নেই। বিভ্রান্তি এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ বিশ্বাস করেন কি করেন না ? ওনাকে বলতে হবে এটা এখনো সুস্পষ্ট উনি বলেননি। কেন তিন তালাকের বিরোধিতা উনি করেছেন ? কাশ্মীরকে আমাদের সর্বাঙ্গীণ অঙ্গ বলে মনে করেন কি করেন না ? তাহলে তিনি কেন 370 ধারার বিরোধিতা করেছেন ? যেখানে 2011 ম্যানিফেস্টোতে তিনি লিখেছেন ওপার বাংলাদেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে , আশ্রয় দেয়া হবে , তাদের উন্নয়নের জন্য সবকিছু কাজ করা হবে। তাহলে সেদিন সেটা বিশ্বাস করেছিলেন আজকে সেটা নরেন্দ্র মোদী করছেন কার বিরোধিতা কেন করছেন ? আমরা যেটা ম্যানিফেস্টোতে লিখেছি সেটা করেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভ্রান্ত করেছেন চাদনি ম্যানিফেস্টোতে লিখেছেন সেটা কোনদিন করেননি। তিনি বলেছিলেন 55000 বন্ধ হওয়ার শিল্প আমরা খুলবো , একটাও শিল্প খোলেননি। উনার সময় আরও শিল্প বন্ধ হয়েছে। উনি বলেছিলেন বছরে বছরে এক কোটি লোককে আমরা চাকরি দেব , তিনি সেটা দেননি। তিনি বলেছিলেন এই ঋণ বিকিয়ে যাওয়া অর্থনীতি পশ্চিমবঙ্গের সেই ঋণকে আমি কম করব। তার বদলে তিনি সেটাকে তিন ডবল করেছেন। উনি যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন এক লক্ষ 92 হাজার কোটি টাকার ঋণ লেগেছিল বামফ্রন্ট সরকার। আজকে সেটা চার লক্ষ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষে একটা কথাই বলবো 2011 ম্যানিফেস্টোতে তিনি লিখেছিলেন রাজ্য টাকে মদের বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে বামফ্রন্ট সরকার। আর আজকে ক্ষমতায় আসার পরে মদের দোকানের সংখ্যা বেড়েছে চার গুণ। আর মদের ব্যবসাটাও নিয়ে নিয়েছেন সরকারি হাতে তার টাকাতে লোকের মাইনে চলছে বলে। বিভ্রান্তটা কে করেছে ? কথা কে রাখেনি ? যা যা বলেছেন তার উল্টো করেছেন। উনি বলেছিলেন বাংলায় আমি শান্তির রাজনীতি আনব , হিংসার রাজনীতি দূর করব। আজকে উনি আসার পর হিংসার রাজনীতি বেড়েছে , শান্তি আসেনি। তাহলে কে বিভ্রান্ত করেছে ? মানুষকে কে ঠকিয়েছে ? সেটা হচ্ছে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

[ সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস ]

Related Articles

Back to top button