স্বর্গীয় শ্যামল চক্রবর্তী যোদ্ধা ছিলেন , লড়াকু নেতা ছিলেন : কমরেড ফুয়াদ হালিম
গতকাল বর্ষীয়ান জননেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী শ্রী শ্যামল চক্রবর্তী পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। কিছুদিন আগে তিনি করোনা পজিটিভ হন। তার এই অকালমৃত্যু রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মাননীয় শ্রী শ্যামল চক্রবর্তী মহাশয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনার্থে ভারত বার্তার প্রতিনিধি প্রীতম দাস যোগাযোগ করেছিল মাননীয় কমরেড শ্রী ফুয়াদ হালিম এর সঙ্গে।এদিন কমরেড ফুয়াদ হালিম স্মৃতিচারণা করলেন আমাদের ভারত বার্তার প্রতিনিধি সঙ্গে।
রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী শ্রী শ্যামল চক্রবর্তী গতকাল পরলোকগমন করেছেন। তার এই অকালপ্রয়ানে রাজ্য রাজনীতিতে কতটা অপূরণীয় ক্ষতি হল বলে আপনি মনে করেন ?
ফুয়াদ হালিম : দুটো বিষয় , শ্যামল চক্রবর্তী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু। তিনি 9 বছর পরিবহন মন্ত্রী ছিলেন ও তিনবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভারতবর্ষের সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের তাদের অধিকারের জন্য দর্শন গত ভাবে ও সংগঠনগত ভাবে উনার অবদান অপরিসীম। উনি বামপন্থী দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতবর্ষের সভ্যতার যে বিবর্তন সেটা নিয়ে অনেক অধ্যয়ন করেছিলেন। উনার একাধিক বই ও প্রবন্ধ ভারতবর্ষের সামাজিক বিবর্তনের যে পর্যায় এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মনিরপেক্ষতার যে গুরুত্ব উনার লেখা ও প্রবন্ধের মধ্যে উঠে এসেছিল। দর্শনগতভাবে উনার এই অবদানগুলো হাতিয়ার হিসেবে বামপন্থী আন্দোলনকে শাণিত করবে ও ব্যবহৃত হবে। উনার বয়স 77 , উনার ফুসফুসের রোগ ছিল ও কোভিড 19 সামনে রেখে উনি প্রায় প্রতি সপ্তাহ বেরিয়ে সাধারণ মানুষকে খাদ্য বিতরণ করা এবং এই মুহূর্তে সার্বিক সাধারণ মানুষের সামনে যে সংকট ছিল সেই সংকটকে মোকাবিলা করার জন্য বামপন্থী ও কমিউনিস্ট কাজ করছিল সেই কাজকে সম্পূর্ণ করার জন্য সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে তিনি লড়ছিলেন এবং এটাই হচ্ছে কমিউনিস্টের জীবন। এটাই হচ্ছে কমিউনিস্টের মৃত্যুর যে প্রক্রিয়া , সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে যে শিক্ষাটা পাওয়া যায় ‘ লড়াই লড়াই লড়াই , লড়াই করে বাঁচতে হয় ‘।
কিছুদিন আগে জ্যোতি বসুর জন্মবার্ষিকীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে কিছু তীর্যক মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছিল। আজও ঠিক তার পুনরাবৃত্তি ঘটলো প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রীর অকাল প্রয়াণের পর। কি বলতে চাইবেন এই অমানবিক আচরণ ?
ফুয়াদ হালিম : সমাজের মধ্যে অমানবিক মানুষ আছে বলে সমাজের সাধারণ মানুষ , বেশিরভাগ মানুষ খেতে পায়না। তাদের ন্যায্য যে কাজ আছে সেই কাজের অধিকার পায় না। ফলে এটা স্বাভাবিক সমাজের মধ্যে এরকম মানসিকতা পোষণ করার লোক আছে বলেই আমরা সমাজকে যে জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছি সেখানে নিয়ে যেতে পারছিনা। স্বাভাবিকভাবেই এই দ্বন্দ্ব এটা সমাজের মধ্যে 90% মানুষের মধ্যে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। মানসিক জগতে এইসব যে কথাবার্তা আছে , এই কথাবার্তার মধ্যে থেকে বহিঃ প্রকাশ পায়। লড়াইটা হচ্ছে চিন্তার জগতে এবং লড়াইটা হচ্ছে সামাজিক জগতে। এই উভয় লড়াই চালিয়ে যাবার জন্যে শ্যামল চক্রবর্তীর দিক থেকে কোন জায়গা থেকে ক্লান্তি ছিল না। উনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেবার জন্য , শুকনো রেশন পৌঁছে দেবার জন্য , হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক পৌঁছে দেবার জন্য যা যা কর্মসূচীগুলি পার্টি অন্যান্য ট্রেড ইউনিয়ন গুলি গ্রহণ করেছিল তারমধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উনি অংশগ্রহণ করছিলেন। উনি যোদ্ধা ছিলেন , লড়াকু নেতা ছিলেন এবং উনার জীবনটা হচ্ছে সেই কাহিনীকে সামনে নিয়ে আসে ও উনার মৃত্যুটাও এই কাহিনীর যে রচনা সেই রচনার হচ্ছে বহিঃপ্রকাশ।
[ সাক্ষাৎকার গ্রহণ: প্রীতম দাস]