কফি প্রায় সকলের প্রিয়! কিন্তু কফির ইতিহাস কি জানা আছে?

Advertisement

Advertisement

সামনে শীতকাল আসছে, কফি হাতে নিয়ে সকাল বেলা লেপের তলায়। দৃশ্যটা ভাবছেন তো চোখের সামনে? অথবা অনেকদিনের বন্ধুদের আলাপ-আলোচনায় জমে উঠেছে কফি হাউস এর কফি আর স্যান্ডউইচ। দুধ সাদা ঘন  কফি কিংবা ব্ল্যাক কফি সবই চলতে পারে।

Advertisement

জেনেনিন কফির কিছু ইতিহাস :
নবম শতকে ইথিওপিয়ায় বাস করত খালদি নামের এক নিঃসঙ্গ মেষপালক। অন্যান্য দিনের চেয়ে তার ছাগল পালের দুরন্তপনা একটু বেড়ে গেছে বলে মনে হলো তার। অনুসন্ধান করতে গিয়ে সে খেয়াল করল লাল জামের মতো একটি ফল খাচ্ছে তার ছাগলেরা। ধর্মপ্রাণ খালদি সাথে সাথে সেই ফল নিয়ে হাজির হল স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছে। কাঁচা খাওয়া অসম্ভব দেখে ইমাম আগুনে ছুড়ে দিল সেই ফলগুলোকে। তার কাছে প্রথমে এগুলো শয়তানের প্রলোভন বলে মনে হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরেই আসতে লাগলো দারুন ঘ্রান। আজ যা  জগদ্বিখ্যাত। চিন্তা করে দেখলো সিদ্ধ করে খেলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। ও গুলোকে নিয়ে এক কড়ায় গরম জলেতে সিদ্ধ করা হলো। এই ভাবেই তৈরি হলো প্রথম এক কাপ কফি।

Advertisement

ইউরোপে পৌঁছতে কফির খুব বেশিদিন সময় লাগেনি। ইতালির ভেনিসে হরেক রকমের পণ্য বাণিজ্য করতে এসে ভূমধ্যসাগরীয় নাবিকেরা নিয়ে এসেছিলেন কফি। সেটি ছিল  1615 সাল। প্রথম মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে এটিকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো। কফি আবিস্কারের সাথে মুসলমানদের নাম জড়িয়ে ছিল। তার ওপরে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও পবিত্র রেড ওয়াইনের  জায়গা দখল করে নিচ্ছিল এই কফি। কট্টর ক্যাথলিকরা একে শয়তানের আবিষ্কার বলে ডাকত। যে কোন অনুষ্ঠানে এর ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু ঠেকিয়ে রাখা যায়নি এর জনপ্রিয়তাকে। রহস্যময় প্রাচ্য পরিভ্রমণ করে বেড়ানো ইউরোপিয়ান পর্যটকেরা কারুর তোয়াক্কা না করেই কফির গুনোগান করেছিলেন। একবার রসিক পোপ বলেছিলেন শয়তানের পানীয় তো দেখছি দারুণ সুস্বাদু। আমাদের উচিত এটা দিয়ে ব্যাপটাইজ করা। তাহলে স্বয়ং শয়তান কেই ধোকা দেওয়া হবে।

Advertisement

ভারতে চায়ের আগমন টা ব্রিটিশদের হাত ধরে হলেও কফির আগমন কিন্তু তাদের হাত ধরে আসেনি। 1670 সালে বাবাবুদান নামের একজন ভারতীয় সাধু প্রথম কফির বীজ নিয়ে আসেন দক্ষিণ ভারতে। সেখান থেকেই তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারতবর্ষে। তবে এখনো এই অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির বেশি ফলন হতে দেখা যায়। বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে কফি উৎপাদন করেনি। তবে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় চেষ্টা করা চলছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন কফি পান করলে মানুষের লিভারের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ক্যান্সার রোধ করে।

তাই বলি একা হোক বা সবাই মিলে, কফি হাউসে গিয়ে হোক বা কোন কফি ক্যাফেতে,  রাস্তার ধারের কোন দোকানের মাঝে মধ্যে কফি খেতেই পারেন। সময়ের অভাবের জন্য হয়তো আপনার কফি হাউসে গিয়ে খাওয়া হবে না তাই, আপনার  মন দুঃখে কেঁদে উঠে গেয়ে উঠবে কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আর নেই।

কিন্তু দুঃখ করবেন না, সঙ্গী যদি নাই পান তাহলে বাড়ির  বারান্দায় একটা ইজি চেয়ারে বসে শীতকালে গরম গরম কফি হাতে নিয়ে চুমুক দিলে  বিশ্বাস করুন মন্দ লাগবে না।

Written By – শ্রেয়া চ্যাটার্জি

Recent Posts