কয়েক মাস আগে বাংলার বুকের উপর দিয়ে আম্ফান ঝড় গিয়ে তছনছ করে দিয়েছিল গোটা রাজ্যকে। পরে সরকারের পক্ষ থেকে আমফানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অভিযোগ ওঠে আমফানের ত্রাণ নিয়ে অর্থনৈতিক দুর্নীতি করা হয়েছে। সেই টাকা আসলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা আদৌ পাইনি। বরং ছলনায় পেয়ে গেছে এমন ব্যক্তি যাদের কোন ক্ষতি হয়নি। এবার আমফানের ত্রাণ দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। কলকাতা হাইকোর্ট কেন্দ্রীয় সংস্থা কন্ট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (CAG) এর ওপর তদন্তের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে CAG কে গোটা দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। অভিযোগ অনুযায়ী এই দুর্নীতিতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে।
গত মে মাসে বাংলার ওপর ঘূর্ণিঝড় আমফান প্রবল তান্ডব করে। ঘূর্ণিঝড় এর জেরে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের করা আবেদনের নিরিখে চলে ত্রান বন্টন। এমনকি যাদের বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তারা ২০০০০ টাকা অব্দি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু এইখানেই শুরু হয় সমস্যা। বিরোধীদের অভিযোগ অনুযায়ী, আমফানের ত্রাণ আসলে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা পায়নি। বরঞ্চ পেয়েছে তৃণমূলের নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠরা। ত্রান বন্টন নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করেছে শাসক দল। পরে এই নিয়ে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর মুখ্যমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন যারা যারা দুর্নীতি করে টাকা পেয়েছেন তাদের অবিলম্বে সেই টাকা ফেরত দিতে হবে।
অবশেষে কলকাতা হাইকোর্ট পুরো ঘটনার গভীর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা CAG কে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, তারা যাচাই করে দেখবে কারা ত্রান পেয়েছেন। তাদের একটা তালিকা তৈরী করতে হবে। সমস্ত যারা আসল ক্ষতিগ্রস্ত তারা ত্রান পেয়েছেন নাকি সেটাও তাদের জানতে হবে। এছাড়াও ত্রান বণ্টনের সময় যে দুর্নীতি হয়েছে তার জন্য কোন সরকারি আধিকারিক দায়ী তা খুঁজে বার করতে হবে। যারা দুর্নীতির জন্য দায়ী হবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তরফে কি পদক্ষেপ নেবে তা জানিয়ে দেবে CAG। সেই সাথে আম্ফান দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকারের বক্তব্য হলফনামা আকারে হাইকোর্টকে বলার নির্দেশ দিয়েছে আজকের আদালত।