নিউজপলিটিক্সরাজ্য

আমি শুধুমাত্র দলের একজন সৈনিক, ফেসবুক পোস্টে ভোটের না দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন কুনাল

একটি সুদীর্ঘ ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ (Kunal Ghosh) জানিয়ে দিয়েছেন তিনি শুধুমাত্র দলের কর্মী হিসেবে কাজ করতে চান। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের তরফ থেকে প্রার্থী হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার।

Advertisement

একটি সুদীর্ঘ ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ (Kunal Ghosh) জানিয়ে দিয়েছেন তিনি শুধুমাত্র দলের কর্মী হিসেবে কাজ করতে চান। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে দলের তরফ থেকে প্রার্থী হওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই তার। সেখানে তিনি নিজেকে দলের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন সমস্ত প্রচারে তিনি নিজের মন থেকে অংশ নেবেন। তবে তার এই নতুন পোস্ট সামনে আসা মাত্রই রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে।

কুনাল ঘোষ বলছেন, “কিছু কৌতূহল কানে গেছে। সেসব বাড়তে না দিয়ে বলে রাখি-

আমি তৃণমূল কংগ্রেসের মঞ্চে প্রচার করছি সম্পূর্ণ নিজের মন থেকে। পুরনো দিনের একজন সৈনিক হিসেবে। আমি চাই সব ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করে তৃণমূল জিতুক।

আমি সাধারণ কর্মী এবং প্রচারক হিসেবেই থাকব। কোনো বিধানসভা, রাজ্যসভার প্রার্থীপদে আমার আগ্রহ নেই। এই জল্পনা থেকে আমাকে বাদ রাখাই ভালো। নিদেনপক্ষে প্রশাসনিক কোনো কমিটিতেও আমার আগ্রহ ছিল না।

আমি এই নির্বাচনটা প্রাণপাত পরিশ্রম করে দেখিয়ে দিতে চাই কুণাল ঘোষ আগেও কঠিন সময়ে ছিল, আজও ধর্মযুদ্ধে দলের মঞ্চে আছে।

আমি বিশ্বাসঘাতক নই।

তৃণমূল পরিবারে যদি একজনও অপমানিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত থাকে, তাহলে সেটা আমি। বিনা দোষে আমাকে বলি করা হয়েছে। যারা ষড়যন্ত্রী, তার ৯০% এখন বিজেপিতে। কারা সব ক্ষমতা ভোগের পর ক্ষোভের কথা বলছে?? আমার থেকে বেশি ক্ষোভ কারুর থাকতে পারে না। সিবিআই, ইডি থেকে বাঁচতে কেউ কেউ গেছে। আর কয়েকজন যার জন্যে যাচ্ছে, শুনলে চোখ কপালে উঠছে। যাঁরা যাচ্ছেন না, তাঁরাই বলে দিচ্ছেন প্রস্তাবের আকার আকৃতি। এরপর কয়েকজনের মুখে নীতির কথা শুনলে বমি আসছে।

আমার ক্ষোভ, অভিমান আছে। প্রতিবাদ আছে। সেটা আমি দলের এবং মমতাদির (Mamata Banerjee) সঙ্গে বুঝে নেব ভোটের পর, যখন দিদি আবার তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আসবেন। তার আগে পর্যন্ত আমি দলের সৈনিক হিসেবে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে কর্তব্য পালন করব। প্রমাণ রাখতে চাই আমি বেইমান, সুবিধাবাদীর তালিকায় পড়ি না। ভোট এলেই দরাদরির রক্ত আমার শরীরে নেই।

আমার বাড়িতে কে কে এসেছিলেন, বা সংসদে সেন্ট্রাল হলে কে এসে কী বলেছিলেন, সেটা আমার ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরাও সাক্ষী। তাঁদেরও আমি ধন্যবাদ জানাই। ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখলেও আমি স্পষ্ট বলেছিলাম তৃণমূল ছাড়ব না। এখন তাঁরা আমার উপর রেগে আছেন, বুঝি।

যেদিন আমার কিছু ছিল না, সেদিন কেন্দ্রীয় সরকার আমাকে টেলিফোন অ্যাডভাইসরি কমিটির চেয়ারম্যান পদ দিয়েছিল। হয়ত তখন এক কোণঠাসা ব্যক্তির পরিচয়ের জন্য দরকারও ছিল। কিন্তু আমি সবিনয়ে সেই পদ প্রত্যাখ্যান করেছিলাম।

বন্দিজীবনে যেদিন আমার সঙ্গে পুলিশের সংঘাত, যেদিন আমি ক্ষোভ উগরে দিচ্ছি; সেদিনও দলকে সদস্যপদের চাঁদা দিয়েছি। বুঝিয়ে দিয়েছি আমি দলের সৈনিক। আমার লড়াই আলাদা। তার সঙ্গে গোটা দলটাকে মেশাই নি।

রাজনীতির শুরু থেকে বাম জমানার পরিবর্তন চেয়েছি। ২০১৬সালে বন্দিদশাতেও প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছি একা তৃণমূল জিতবে। ২০২১-এও একই কথা বলছি। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের সঙ্গে রাজনীতি মেলাইনি। তদন্তে আমার সহযোগিতা থাকবে। তৃণমূলকে ক্ষমতায় ফেরানোর লড়াইও চলবে।

কয়েকজন যাচ্ছেন। ভোটের মুখে নীতিকথার নাটক।

মমতাদি আর নেতৃত্ব অকারণে কিছু অপাত্রে দান করেছেন। লোক চিনতে ভুল করেছেন। বিশ্বাস করেছেন। এদের কাছ থেকে এই আচরণ মমতাদির প্রাপ্য ছিল। এখনও কিছু বাকি আছে। কেন এইসব প্রাণীকে এত মাথায় তুলেছেন? কেন এদের কথা বিশ্বাস করেছেন? কেন এরা যখন কাউকে বলি করেছে তখন নীরব প্রশ্রয় দিয়েছেন? এদের সম্পর্কে যথেষ্ট ইঙ্গিত থাকলেও কেন ব্যবস্থা নেন নি? তবে যারাই যাক এতে দলের ক্ষতি হবে না। নীতিহীন সুবিধাবাদ বাংলার মানুষ প্রত্যাখ্যান করবেন। প্রকৃত তৃণমূলস্তরের নেতা কর্মীদের কাজের সুযোগ বাড়বে। বাংলার স্বার্থে তৃণমূলের আবার জেতা উচিত। পচা গলা অকৃতজ্ঞ সুবিধাবাদী ক্ষমতালোভী গিরগিটিরা বিপক্ষ শিবিরে। সঙ্গে পশ্চিমি অপসংস্কৃতির আগ্রাসন। মানুষ মমতাদির পাশে আছেন এবং থাকবেন।

ভুল সংশোধন করে যে তৃণমূল উঠে আসবে, তা আরও উন্নততর মানুষের মহাজোট।

আমি শুধু দলের একজন সৈনিক হিসেবে এই লড়াইটা এবার লড়ব। দয়া করে এর সঙ্গে বিধানসভা, রাজ্যসভার জল্পনা মিশিয়ে আমার আবেগ এবং আমার নিজের কাছে নিজের পরীক্ষাকে ছোট করবেন না।”

Related Articles

Back to top button