শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ‘আমরা দুটি ভাই শিবের গাজন গাই, ঠাকুমা গেছেন গয়া কাশি ডুগডুগি বাজাই’। ছোটবেলাকার অতি পরিচিত ছড়া আমাদের প্রত্যেকের কাছেই। ‘গাজন’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ও বাংলাদেশে পালিত একটি হিন্দু লোক উৎসব। এ উৎসব শিব ঠাকুরের পূজা কেন্দ্রিক উৎসব। মালদায় এর নাম ‘গম্ভীরা’, জলপাইগুড়িতে ‘গমিরা’। বাংলা পঞ্জিকার চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে সন্ন্যাসী বা ভক্তদের মাধ্যমে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক পূজার সঙ্গে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। বাংলায় ‘গাজন’ শব্দটি কোন শব্দ থেকে এসেছে? এই উৎসবে অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসীরা প্রচন্ড গর্জন করেন বলে এরূপ নামকরণ। অপর আরেকটি মতে, শব্দের অর্থ গ্রাম আর্জন শব্দের অর্থ জনগণ গ্রামীণ জনসাধারণের উৎসবের নাম ‘গাজন’। শিবের গাজনে দুজন সন্ন্যাসী শিব, গৌরী সেজে এবং অন্যান্যরা নন্দী, ভৃঙ্গী, ভুত-প্রেত, দৈত্যদানো সেজে নাচ করেন।
এবারে লকডাউন এর জন্য বন্ধ গাজনের মেলা। যে সমস্ত মানুষের রুটি-রুজি ছিল এই গাজন উৎসব, করোনা ভাইরাস থাবা বসিয়েছে তাদেরও পেটে। গাজন উৎসব উপলক্ষে অনেক জায়গায় মেলা বসে। কত মানুষ কত কিছু করে রোজগার করেন। এবার এসব বন্ধ। তবে এই কষ্টটুকু মেনে নিয়ে যদি লকডাউন মেনে নিলে, ভবিষ্যতের দিনগুলো আমাদের কাছে অনেক উজ্জ্বল হবে। সকলে ভালো থাকব, সুস্থ থাকব।
গাজন, চড়ক সংক্রান্তি, নববর্ষ, চৈত্র সেল সব কিছুতেই করোনা ভাইরাস তার থাবা বসিয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে গরিব মানুষের পেটে। নীল ষষ্ঠীর দিনে গাজনে সাজা শিব কে কি তবে অভুক্ত থাকতে হবে? সরকারি এবং বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগে গরিব মানুষদের সাহায্য করা হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। করোনা ভাইরাস গোটা পৃথিবী কে যে সংকটে ফেলেছে তা সত্যিই ভোলার নয়।