আজকেই ১২.১৫ মিনিটে প্রয়াত হলেন বাংলার প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। চোখের জলে বিদায় দিচ্ছেন তাকে গোটা বাংলা। গানে কবিতায় বিদায় দিচ্ছেন তাকে সমগ্র বাংলার অভিনয় জগৎ। তার শেষ যাত্রায় শুধুই নিস্তব্ধতা এবং চোখের জল। তার জন্য টলিউড থেকে বলিউড প্রত্যেকেই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে রাহুল বোস, সমগ্র সিনে দুনিয়া তার স্মরণে আজ শোকস্তব্ধ।
গানে, কবিতায়, বিদায় দেওয়া হলো প্রিয় অভিনেতাকে। সঙ্গে ছিল প্ল্যাকার্ড, মোমবাতি, পোস্টার, ছবি এবং গভীর শ্রদ্ধা। শেষ যাত্রায় ছিল নিস্তব্ধতা। শেষ যাত্রার সঙ্গী হয়েছিলেন টলিউডের কলাকুশলীরা। সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়ের শেষ যাত্রায় কবিতা পাঠ করলেন প্রখ্যাত অভিনেতা এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন।
ডাক্তারদের সমস্ত প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ প্রমাণিত করে সৌমিত্র চলে গেলেন পরলোকে। দীর্ঘ ৪০ দিনের লড়াই শেষ হলো চোখের জলে বিদায় দিয়ে। সকালে বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। তার পরিবারের পাশে দাড়ানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেষ যাত্রায় তাকে দেখা গেলো। বর্ষীয়ান অভিনেতার প্রয়ানে শোকস্তব্ধ সমগ্র রাজ্যবাসীর।
সোশাল মিডিয়ায় বারবার তাকে নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট উঠে আসছে। সাধারণ মানুষ থেকে সমস্ত সেলিব্রিটি, প্রত্যেকের আবেগের একটা জায়গা নিয়ে ছিলেন সৌমিত্র।
আজই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে কেওড়াতলা মহাশ্মশানে। সকালে বেলভিউ থেকে অভিনেতার মরদেহ পৌঁছায় গল্ফগ্রীনে। সেখানে তাকে তার প্রতিবেশীরা শ্রদ্ধা জানান। সেখান থেকে তার মরদেহ পৌঁছায় টালিগঞ্জের টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে। সেখানে সিনেমা জগতের কলাকুশলীরা তাকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
সেখান থেকে রবীন্দ্রসদন পৌঁছায় তার শবযাত্রা। সেখানে সকলের জন্য দীর্ঘ সময় অবধি শায়িত ছিল তার মরদেহ। এরকম একজন লেজেন্ডকে শেষবারের জন্য এক ঝলক দেখার জন্য ঢল নামে জনতার।
দীর্ঘ সময় ধরে রবীন্দ্রসদন এলাকায় থাকার পরে তার মৃতদেহ নিয়ে পদযাত্রায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বর্তমানে তাকে। তার পদযাত্রায় শামিল হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, সমগ্র বাম নেতৃত্ব সহ টলিউডের সম্পূর্ণ ইন্ডাস্ট্রি।
তার মৃত্যুর পরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে সেখানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌমিত্র বাবুর মেয়ে পৌলমী বসু মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাবহারে অত্যন্ত আপ্লুত। সংবাদমাধ্যমের কাছে বক্তৃতায় পৌলমী বসু বললেন,” আমার বাবার যা সম্মান প্রাপ্য ছিল তার থেকে অনেক বেশি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই জন্য আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।” বক্তৃতার সময়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, সৌমিত্রবাবুর সমস্ত শুশ্রূষার খরচ বহন করেছে রাজ্য সরকার। রবিবার মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্রই বেলভিউ হাসপাতালে ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী। তার পাশে দাড়িয়েই পৌলমী বলেন,” যখন সুযোগ পেয়েছি তখন, অবশ্যই বলতে চাই, দিদি এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। বাবাকে এত যত্ন, এত ভালোবাসা , এত সম্মান দিয়ে তার দেখাশোনা করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমার পরিবার এটা ভুলবেনা। যা সম্মান আমার বাবার প্রাপ্য ছিল তার থেকে অনেক বেশি সম্মান দিদি তাকে দিয়েছেন। দিদি আমাদের পরিবারের সদস্যের মতই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।”
প্রসঙ্গত, বাম আমলে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি মনেপ্রাণে একজন বাম চিন্তাভাবনার মানুষ। তবে, বুদ্ধবাবু চলে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে প্রথমে তাদের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব ছিল। নন্দন থেকে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবকে নিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেই নিয়ে সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়ের সঙ্গে তার কিছুটা মতবিরোধ দেখা যায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও তাকে অনুপস্থিত দেখা যায়।
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় পরবর্তীকালে এই বরফ কিছুটা হলেও গলে। উত্তমকুমারের প্রয়াণ দিবসে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে মহানায়ক সম্মানে ভূষিত করে রাজ্য সরকার। তারপর তিনি পান বঙ্গবিভূষণ সম্মান। মতাদর্শের পার্থক্য থাকলেও বারংবার তার সঙ্গে সম্পর্ক সঠিক করার চেষ্টা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরে পথদুর্ঘটনায় সৌমিত্র বাবুর নাতি রণদীপ বসুর চিকিৎসায় সমস্ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় রাজ্য সরকার। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজের এই ধরনের সহযোগিতার পরে বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন। তার পরেও, করোনাভাইরাস আক্রান্ত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সমস্ত চিকিৎসার খরচ বহন করেছে রাজ্য সরকার। বারংবার সৌমিত্র বাবুর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক সঠিক করার প্রচেষ্টা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং এই বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো তার মৃত্যুতে।