মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনে আড়িপাতা হচ্ছে, এই অভিযোগে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার পদত্যাগ দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। আর তারপরেই কালীঘাট থানায় মমতার ফোনে আড়িপাতা নিয়ে মামলা দায়ের করলেন কসবার এক মহিলা। আর তিনি অভিযুক্ত রেখেছেন সরাসরি বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং ভারতীয় জনতা পার্টির আইটি সেল এর প্রধান অমিত মালব্যকে।
তার পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন অজ্ঞাত পরিচয়ের নামে অভিযোগ রয়েছে। শীতলকুচি কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল নেতা পার্থপ্রতিম রায়ের একটি কথোপকথন তুলে ধরে বিজেপি। মমতার অত্যন্ত ব্যক্তিগত এই কথোপকথন কিভাবে বিজেপির কাছে এলো, সেই নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন করলেও বিজেপি তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। তারপরেই বিজেপির বিরুদ্ধে ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ করেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি এই অডিও ক্লিপ প্রকাশ করে অভিযোগ করেছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লাশের রাজনীতি করছেন। প্রত্যুত্তরে শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, “প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমার ফোন ট্যাপ করিয়েছেন? প্রধানমন্ত্রী আপনি পদত্যাগ করুন। আপনার লজ্জা করেনা একজন মুখ্যমন্ত্রীর ফোন ট্যাপ করাতে!”
শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনা নিয়ে সিআইডিকে তদন্ত করতে বলবেন বলেও হুংকার দিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “এফআইআর হয়েছে। যে ফাঁসার ফেঁসে গিয়েছে।” অন্যদিকে, বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ওই মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, ১৬ এপ্রিল অমিত মালব্য এবং লকেট চট্টোপাধ্যায় একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ্যে আনেন। সেই অডিও ক্লিপে পরিষ্কারভাবে শোনা যাচ্ছে শীতলকুচি কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পার্থ প্রতিম রায় এর সঙ্গে কথা বলছেন।
সেই অডিও ক্লিপ প্রসঙ্গে ওই মহিলা দাবি করেন, প্রথমত জাতীয় সুরক্ষা জনিত কারণ এবং অপরাধের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে কারোর ফোনে আড়িপাতা যায় না বা ফোন ট্যাপ করা যায় না। আড়ি পাততে হলে প্রশাসনের নির্দিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি প্রয়োজন লাগে। আর সব থেকে বড় কথা, ভোটের রাজনীতি করার জন্য ওই অডিও ক্লিপ এর কিছু অংশ বিকৃত করে জনমানুষের মতো ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও, এই অডিও ক্লিপটা বিজেপির কাছে এলো কি করে সেই নিয়ে কিন্তু এখনো ধন্দ রয়েছে। সাধারণত, সেনা, পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা ছাড়া আর কারো কিন্তু অন্য ব্যক্তির ফোন ট্যাপ করার অনুমতি নেই। তবে সরকারিভাবে কিছু না জানানো হলেও, অনেকে মনে করছেন সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা এই আড়ি পেতেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফোনে। ফোনে আড়ি পাতলেই সেই রেকর্ডিং কিভাবে একটা রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছে গেল তা নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। অনেকে মনে করছেন দেশের কোনো প্রভাবশালী নেতা এই অডিও ক্লিপটা রেকর্ড করে সেটাকে ভাইরাল করার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ আধিকারিকরা জানাচ্ছেন কার নির্দেশে এই কাজ হয়েছে সেটাও খুঁজে বের করা অত্যন্ত প্রয়োজন। আপাতত ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইনের ২৫, ২৬ ধারা, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ ধারা, এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৪, ৪৬৯, এবং ৪৭১ ধারা অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে। শীঘ্রই অডিও টেপ সংগ্রহ করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট হবে আদৌ এই অডিও ক্লিপের কোন অংশ বিকৃত করা হয়েছে কি হয়নি। গোয়েন্দা সংস্থার মতামত, এই অডিও ক্লিপের সমস্ত তথ্য ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে প্রমাণিত হবে।
অমিত মালব্য কে ফোন করে এবং মেসেজ করে তার উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিজের দলের লোকেরাই যে এই অডিও ক্লিপ দেননি সেটা উনি প্রমাণ করতে পারবেন তো? তাছাড়া একটি টিভি সাক্ষাৎকারে উনি নিজেই বলেছেন অপরাধের যোগসুত্র থাকলে ফোনে আড়ি পাতা যায়। এই ঘটনার সঙ্গে অপরাধের যোগসুত্র অবশ্যই রয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই অনেক মামলা রয়েছে। আর একটা মামলা যোগ হলো আর কি।”