শ্রেয়া চ্যাটার্জি – করোনাভাইরাস এর দৌলতে নাকে মুখে চাপা দেওয়ার জন্য মাস্ক কথাটি এখন সর্বত্র বেশ জনপ্রিয় একটি শব্দে পরিণত হয়েছে। এমনিতেও রাস্তায় বেরোলে দূষণের হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই মাস্ক পড়তেন। আবার অনেকে নাকে, মুখে রুমাল চাপা দিতেন এমন দৃশ্য দেখা গেছে। কিন্তু গোটা বিশ্ব জুড়ে যখন করোনাভাইরাস এর একটা আতঙ্ক মানুষের উপর ভর করেছে, তখনই মাস্ক, স্যানিটাইজার এই দুটো শব্দ শিক্ষিত, অশিক্ষিত ধনী-গরীব প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই বেশ আলোচিত শব্দে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বারবার বলা হচ্ছে, বাইরে বেরোলে আপনি যদি হাঁচি, কাশিতে আক্রান্ত হন তখনই মাস্ক পড়ুন।
কিন্তু সাধারণ মানুষ খানিকটা ভয় পেয়েই হাঁচি-কাশিতে যদি আক্রান্ত নাও হয়ে থাকেন একটা মাস্ক পড়ে বেরিয়ে পড়ছিলেন। লক ডাউনের আগে পর্যন্ত এই চিত্রটা আমাদের কাছে বেশ পরিচিত ছিল। চিনে যখন করোনাভাইরাস সবে সবে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা একটু একটু করে বাড়ছে তখনই আপনি ভারতের অনেক রাস্তাতেই মানুষকে মাস্ক পড়তে দেখেছেন হয়ত। কিন্তু ডাক্তারবাবুরা বারবার বলছেন প্রত্যেকের মাস্ক পরার দরকার নেই, আপনি যদি হাঁচি-কাশি বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন তবেই আপনি বাইরে বেরোনোর সময় মাস্ক পরবেন। বাড়িতে থাকলে আর আপনি যদি সুস্থ মানুষ হয়ে থাকেন, তাহলে অযথা মাস্ক পড়ার দরকার নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষকে একথা বোঝায় কে? মানুষ ভয় পেয়ে কিনে রাখছেন নানান ধরনের মাস্ক। আর এই সুযোগে দোকানিরা বাড়িয়ে চলেছেন মাস্ক এর দাম। যাদের অর্থ আছে তারা অনেক টাকা খরচ করে মাস্ক কিনলেও পাচ্ছেনা সাধারন গরিব মানুষ। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অবশ্য এগিয়ে এসেছে মাস্ক তৈরীর জন্য।
জেলবন্দি মানুষদের দিয়ে বানানো হচ্ছে মাস্ক। নিঃসন্দেহে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। সোশ্যাল মিডিয়া একটি ছবিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু গ্রাম্য বধূ তারা মুখের শাল পাতা বা কোন বন্য পাতা দিয়ে নিজেদের মতন করে মাস্ক বানিয়ে নাকে মুখে চাপা দিয়েছেন। এই মাস্কটি করোনাভাইরাস কে আটকে রাখবে কিনা সে বিষয়ে কোনো বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ আমরা পাইনা, তবে এইটা থেকে একটা জিনিস প্রমাণ হচ্ছে যে করোনাভাইরাস উচ্চ থেকে নিম্ন স্তরে কতটা মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। তাই মানুষ হাতের সামনে যা পাচ্ছে সেটা দিয়ে নাক মুখ ঢাকার একটা প্রবল চেষ্টা করছেন।
শিক্ষিত অশিক্ষিত ধনী-গরীব প্রত্যেকেই আতঙ্কে একেকটি দিন কাটাচ্ছেন, আমাদের কি হবে?কেউ আবার টিস্যু পেপার দিয়ে বাড়িতে নিজের মতন করে অনেকে মাস্ক বানিয়ে পড়ছেন। করোনার আতঙ্ক এতটাই আমাদেরকে গ্রাস করেছে যে, আমাদের প্রয়োজন কিনা বা মাস্ক পড়ে আমরা আমাদের কোন ক্ষতি করছি না তো? এইসব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে গিয়েও মানুষ প্রতিনিয়ত মাস্ক ব্যবহার করছেন। এতে মানুষকে দোষ দেওয়া যায়না।
কারণ ইতালির মতো উন্নতশীল দেশ আমরা প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে দেখে যাচ্ছি কিভাবে মৃত্যু মিছিল শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট একেবারে জনশূন্য। শহর গুলি পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে শহরে। করোনাভাইরাস যখন প্রথম এই অঞ্চলগুলিতে থাবা বসিয়ে ছিল, তখনই সরকারের তরফ থেকে লকডাউন ঘোষণা করলেও ইতালির একটা মানুষও কথা শোনেননি। আনন্দ করেছেন, ফুর্তি করেছেন, ক্লাবে গেছেন, হোটেলে গেছেন, অবাধ মেলামেশা করেছেন। যার ফল এখন ভুগছে ইতালি।
হাঁচি কাশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, এখন ঋতু পরিবর্তনের সময়, এই সময় জ্বর, হাঁচিকাশি, সর্দি অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এখন হাঁচি, কাশি হলে আপনার মনে একটা অজানা ভয় বাসা বাঁধবে। আপনার করোনাভাইরাস না তো? তাই এসব সাত-পাঁচ ভেবে বাড়িতে আতঙ্কিত না হয়ে, আর মুঠো মুঠো প্যারাসিটামল না খেয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আর অকারণে মাস্ক ব্যবহার করবেন না।
ডাক্তারবাবু যদি আপনাকে বলেন যে মাস্ক ব্যবহার করুন তবেই করুন। কারণ আপনি এত পরিমান মাস্ক যদি নিজে কিনে রেখে দেন, তাহলে সত্যিই যাদের প্রয়োজন অর্থাৎ ডাক্তার, নার্স পুলিশ এবং অন্যান্য সহকারি কর্মীরা যারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলেছে এই করনা ভাইরাসমুক্ত দেশে পরিণত করতে আমাদের ভারতবর্ষ কে তাহলে তারাও তো এই মাস্ক থেকে বঞ্চিত হবেন। যাদের প্রয়োজন তাদের কে মাস্ক ব্যবহারের সুযোগ করে দিন।