শ্রেয়া চ্যাটার্জি – মুখের ময়লা তুলতে অনেকেই কার্বনের ফেসওয়াশ ব্যবহার করেন, আবার দাঁতের হলুদ দাগ তুলতে কার্বনের টুথপেস্ট তৈরি হয়েছে এমনটা দেখা গেছে। কিন্তু কার্বনের তৈরি টাইলস তৈরি করে পৃথিবীর বায়ু থেকে দূষণের মাত্রা কমানো যায় এমন কি কখনো শুনেছেন? যদি না শুনে থাকেন তো জেনে নিন, এমন অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটিয়েছে মুম্বাইয়ের এক যুবক। এ কাজটি শুরু করা হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। আপনি শুনলে অবাক হবেন একেকটি টাইলস ৩০,০০০ লিটার বাতাস পরিশোধন করতে পারে। এগুলি বাতাস থেকে ২৫% থেকে ৪০% কার্বন পরিশোধন করে। তেজাস সিডনাল, যার মাথা থেকে এই অবিশ্বাস্য ঘটনা কি বেরিয়েছে তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচারের উপরে পড়াশোনা করেন। ছাত্র হিসেবেই তিনি বায়োমিমিক্রি এর ওপরে খুব উৎসাহিত ছিলেন। এই বিষয়টি হলো, প্রতিনিয়ত ও পরিবেশে যে পরিবর্তন হতে থাকে, সেই পরিবর্তন কে মাথায় রেখে আমরা নিজেরা কিভাবে পরিবর্তিত হতে পারি। এই চিন্তা ভাবনা থেকেই ৩২ বছরের এই যুবকের মাথাতে এমন ভাবনা। বর্তমানে বায়ু দূষণ অনেক বেশি মাত্রায় বেড়ে গেছে। যার ফলে পৃথিবী আয়ু ক্রমশ কমতে চলেছে।
কলেজ পাশ করার পরে তিনি Ratan.J.Batliboi Architects এ চাকরি করতে শুরু করেন। তিনি কিছুদিন UK তে গিয়েছিলেন যেখানে বায়োমিমিক্রির ওপরে যে সমস্ত ওয়ার্কসপ গুলি হয়েছিল সেগুলো থেকে তিনি অনেক কিছু শিখে ছিলেন। কিছুদিন পরে তিনি নানান রকম মাথা থেকে বুদ্ধি বার করে তৈরি করেছিলেন ইট। যদিও পরে তারা বলেন, “এই ইট বানানোর পদ্ধতি ছিল অনেক সময় সাপেক্ষ এবং খরচেরও। এটি খুব সহজে বাজারজাত করা যায়নি।” তারপরে তিনি ২০১৯ সালে এমন কার্বন টাইলস বানানোর কথা মাথায় আনেন। স্টাইল স্কুল এই বাজারে আনা হয় তিন রকম মাপে – ৮”৮”, ১০”১০”, ১২”*১২। এই টাইলস একেবারে হাতে বানানো হয়। প্রতি বর্গফুট এর জন্য খরচ হয় ১৯০ টাকা। এখন এই টাইলস কে নানান রকম “monochromatic shades” এর উপর বানানো হচ্ছে। তবে এই যুবকটি জানিয়েছেন, পৃথিবীর এমন দুঃসময়ের সময়ও অনেকেই দূষণ নিয়ে অতটা ওয়াকিবহাল নন। তারা যখন কাউকে এই টাইলসের গুরুত্ব বোঝাতে যান, তখনই বুঝতে পারেন মানুষ পৃথিবীর দূষণ নিয়ে কতটা অসচেতন। তবে এমন ভাবেই কারুর কারুর ছোটছোট পদক্ষেপেই পৃথিবীটা পুরোপুরি বদলে যেতে পারে।
বর্তমানে করোনা ভাইরাস জুড়ে প্রায় গোটা বিশ্ব জুড়ে লকডাউন চলছে। যার জন্য দূষণের মাত্রা অনেকটাই কমেছে বিশেষত বায়ুদূষণ। কলকারখানা, যানবাহন কার্যত স্তব্ধ। বাতাস এখন দম নিচ্ছে প্রাণভরে। অনেক দূরদূরান্তের ছবি ভেসে উঠছে অনেকের চোখের সামনে। পৃথিবীতো কোথায় এমন ভাবে বাঁচতে চেয়েছিল কিন্তু আমরা মানুষ আমাদের বুদ্ধি খাটিয়ে ক্রমশ আমরা উঠে যেতে চেয়েছি উন্নতির শিখরে। তৈরি করতে চেয়েছি সভ্যতা। এনেছি কলকারখানা, যানবাহন। পৃথিবীর বুকে ছিটিয়ে দিয়েছি কালো কালির কালিমা। করোনা ভাইরাস কে পরোক্ষভাবে তো ধন্যবাদ জানাতেই হয়। কারণ এত বড় মহামারী দেখা না গেলে পৃথিবী এইভাবে সেরে ওঠার সুযোগ পেত না। করোনা একদিন চলে যাবে একথা ঠিক কিন্তু করোনা যা দিয়ে গেল সত্যি ভোলার নয়। আর এমন এমন মানুষ এর চেষ্টার ফলে পৃথিবীটা আবার সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা হয়ে উঠবে।