শ্রেয়া চ্যাটার্জি – আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। আজকের দিনটিই বোধ হয় সেই সমস্ত মানুষদের জন্য উৎসর্গ করা উচিত, যে সমস্ত মানুষ গুলো দিন রাত এক করে নিজের বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে করোনা মুক্ত ভারতবর্ষ অথবা গোটা বিশ্বকে করোনা মুক্ত করতে চাইছে। আজ স্যালুট জানাতে হয় সেই সমস্ত মানুষদের। মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদুয়ার সব বন্ধ। কারণ ভগবান, আল্লাহ, যীশুখ্রীষ্ট হসপিটালে সাদা কাপড় পরা মানুষ গুলোর মধ্যে অবস্থান করছে।
ভগবান নিজে আসেনা, মানুষের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রকাশ হয়। আমাদের কাছে এখন ঈশ্বরের জায়গা নিয়েছেন এই সমস্ত মানুষরা। তাদের হাতেই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। নিউ দিল্লির শালিমারবাগ এর হসপিটালের নার্স গীরিজা শর্মা বললেন, তার জীবনকে তিনি এই করোনা ভাইরাস আক্রমণের সময় বেশি করে বুঝতে পারছেন। তিনি প্রায় গত ৩৫ বছর ধরে মানুষের সেবা করে চলেছেন। ১৯৮০ সালে তিনি ট্রেনিং নেওয়া শুরু করেন এবং তিনি পাশ করেন ১৯৮৩ সালে। সেই সময় থেকেই তিনি নানা জায়গায় মানুষের সেবার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন কাশ্মীর, সৌদি আরব কোন জায়গায় তিনি বাদ দেননি। তার আগে তার পরিবারে আর কেউ নার্স ছিলেন না তিনি প্রথম। ছোটবেলা থেকেই তার এক সুপ্ত বাসনা ছিল যে তিনি বড় হয়ে নার্স হবেন। নার্সের পোশাক তার বেশ ভালো লাগতো।
তবে নার্সিং এই জীবিকা কে প্রথম দিকে খুব একটা ভালো চোখে দেখা হতো না সমাজে। প্রথমদিকে গিরিজা দেবীর বাবা তার এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু তিনি তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি তার জীবিকা কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। বিবাহের পরে পরিবার এবং তার জীবিকা দুটো সামলানোর জন্য তিনি আরো বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গিয়েছিলেন। তবে এই বিষয়ে তিনি তার স্বামীকে ধন্যবাদ দিতে চান। শুধু তাই নয় তিনি তার শ্বশুর-শাশুড়িকে ও যথেষ্ট ধন্যবাদ জানাতে চান। কারণ তার যখন রাত্রিবেলা কাজ পড়ে তখন তার দুই বাচ্চাকে তার বাড়ির লোকজন দেখাশোনা করেন।
তার স্বামী তাকে প্রতিদিন সকালবেলা হসপিটালে নিয়ে আসেন এবং ফেরার সময় নিয়ে আসেন। বাড়িতে ফেরার আগেই তার স্বামী বাথরুমে গিজারের সুইচটা চালিয়ে দেন এবং তিনি একেবারে সোজা বাথরুমে ঢুকে নিজেকে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করে তবেই ঘরে প্রবেশ করেন। তার কন্যা বাড়িতে বসেই কাজ করছেন, পুত্র অবশ্য দুবাই তে থাকেন। রীতিমত প্রতিদিন ফোনে তার সঙ্গে কথা হয়।
আমরা প্রত্যেকেই যদি এইভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে পারি, তাহলে হয়তো ভারত বর্ষ করনা ভাইরাসের মারণ থাবা থেকে বেঁচে যেতে পারবে।