এক মাসের মধ্যেই দ্বিতীয়বারের জন্য আবারো ধর্মঘটে ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাঙ্কার অ্যাসোসিয়েশন। আবারো অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ওয়েস্টবেঙ্গল ট্যাংকার অ্যাসোসিয়েশনের। মৌরিগ্রামে ইন্ডিয়ান অয়েলের ডিপোয় বর্তমানে কাজ বন্ধ। এই কারণে রীতিমতো সমস্যায় পড়েছেন গাড়ি চালকরা এবং সাধারণমানুষ। খুব তাড়াতাড়ি কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার পেট্রল পাম্প ড্রাই হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। তার পাশাপাশি, অনেকে মনে করছেন যেহেতু আগামী মঙ্গলবার সমস্ত পেট্রল পাম্পগুলি বন্ধ থাকবে, তাই তার আগে এই ধর্মঘটের ফলে রীতিমতো সমস্যায় পড়তে চলেছেন অনেকেই।
শনিবার সকাল থেকে আবারও হাওড়ার মৌরিগ্রাম এর ইন্ডিয়ান অয়েল এর ডিপো থেকে পেট্রোল ডিজেল লোডিং আনলোডিং করা হয়নি। এই কারণে কোন পেট্রোল ডিজেল ভর্তি গাড়ি বের হতে পারেনি। ধর্মঘটী ট্যাংকার মালিকরা দাবি করছেন, ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন যদি তাদের প্রতিশ্রুতি না মানতে পারে তাহলে অ্যাসোসিয়েশন আরো বড় ধর্মঘট করতে পারে।
তারা দাবি জানিয়েছেন,আগের ধর্মঘট মেটানোর সময় ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার বেশিরভাগ এখনো পর্যন্ত পূরণ করা হয়নি। এই কারণেই মূলত, দ্বিতীয়বারের জন্য ধর্মঘটের পথে হেঁটেছে ট্যাঙ্কার মালিক অ্যাসোসিয়েশন। এখনো পর্যন্ত ২০০ এর কাছাকাছি পেট্রোল এবং ডিজেলের কার সেখানে আটকে রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে এবং এই কারণে হাওড়া, কলকাতা, উত্তর এবং দক্ষিণ 24 পরগনা, হুগলি এবং নদীয়া জেলার একাংশে পেট্রলপাম সম্পূর্ণরূপে ড্রাই হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতিমধ্যেই আগামী 31 আগস্ট একাধিক দাবিতে পেট্রোল পাম্প ধর্মঘটের দাবি জানিয়েছে ওয়েস্টবেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার অ্যাসোসিয়েশন। চলতি মাসের গোড়ার দিকে ট্যাঙ্কার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের ধর্মঘটের পরে রীতিমতো সমস্যার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল প্রত্যেকটি পেট্রোল পাম্প। যেহেতু, কলকাতায় এবং শহরতলী অঞ্চলে ইন্ডিয়ান অয়েল পেট্রোল পাম্প সবথেকে বেশি রয়েছে তাই পেট্রোল নিতে রীতিমতো সমস্যায় পড়েছিলেন সাধারন মানুষ। তাদেরকে অগত্যা হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম এবং ভারত পেট্রোলিয়াম এর পেট্রল পাম্পগুলি থেকে পেট্রোল এবং ডিজেলের সংগ্রহ করতে হচ্ছিল। সেই সময় ঐ সমস্ত পেট্রোলপাম্পে দেখা যাচ্ছিল দীর্ঘ লাইন।
আবারও সেই একই সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন সকলে। গতবারে ধর্মঘট তুলে নেওয়ার পরে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন এর ডিপো থেকে পেট্রোল এবং ডিজেলের সরবরাহ শুরু হয়েছিল মোটামুটি তিন দিন পরে। তার মধ্যেই কলকাতা সহ ৬ জেলার প্রায় আড়াইশো কাছাকাছি পেট্রোল পাম্প সম্পূর্ণরূপে ড্রাই হয়ে গিয়েছিল। শুধুমাত্র যে বাস চালকরা তা কিন্তু নয়, বরং সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন গাড়ি বাইক সমস্ত যানবাহন চালকেরা। 48 ঘন্টা চলার পর গতবার হাওড়ায় মৌড়িগ্রামের ইন্ডিয়ান অয়েল ডিপোর ধর্মঘট তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ততক্ষনে বেশ কয়েকটি পেট্রোল পাম্প তেল শূন্য হয়ে যায়। সেই সময় ট্যাংকার মালিকদের ধর্মঘটে কলকাতা হাওড়া এবং সংলগ্ন এলাকার প্রায় আড়াই কোটির কাছাকাছি পেট্রোল পাম্প ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। বাধ্য হয় তাদেরকে বেশি খরচ করে হলদিয়া এবং দুর্গাপুর থেকে পেট্রোল আনতে হয়েছিল। কিন্তু এবারে পেট্রোল পাম্প মালিকরা দাবি জানিয়েছেন এইভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করা যাবে না তাদের পক্ষে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ধর্মঘটের মূল দাবি ছিল ইন্ডিয়ান অয়েলএর টেন্ডার প্রক্রিয়া। ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন জানিয়েছিল, নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বল্প দূরত্বের ট্যাংকার পিছু ২৮০০ টাকা করে ভাড়া দেওয়া হতো কিন্তু এখন ২১০০ টাকা করে ভাড়া দেওয়া হবে। তার পাশাপাশি ট্যাঙ্কারের সংখ্যা ১৯১ থেকে কমিয়ে ১৫০ করে দেওয়া হয়েছিল। তারপরে ট্যাঙ্কার মালিকেরা ধর্মঘট ডাকার পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিখিত আশ্বাস দিয়েছিল ট্যাংকার মালিকদের। মালিকদের অভিযোগ এখনো পর্যন্ত ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন এর পক্ষ থেকে তাদের দাবি মানা হয়নি। এই কারণেই তারা আবারো ধর্মঘটের পথে হেঁটেছে।