তনুজ জৈন, মালদা: সরকার অঘোষিত লকডাউনে প্রায় দুই বছর ধরে গৃহবন্দী হয়ে অকেজো অবস্থায় পরে রয়েছে এক ময়রা, নাম বাবলু দাস(৫০)। বাড়ি মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির বড়াডাঙি গ্রামে। জানা গেছে প্রায় দুই বছর আগে মালদা জেলা হরিশ্চন্দ্রপুরের দৌলতপুর গ্রাম থেকে মহরমের মেলা করে সাইকেল নিয়ে আসার পথে সাত সকালে বাড়ির নিকটে ভালুকা গামী রাজ্য সড়কে সাইকেলের সঙ্গে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবলু দাসের দুটি পা ফ্র্যাকচার হয়ে যায়। স্থানীয়রা তড়িঘড়ি করে হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে আশঙ্কাজনক অবস্থা দেখে ডাক্তারবাবুরা চাচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেন। কয়েক দিন চিকিৎসার পর মালদা মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারবাবুরা কোনো বেসরকারি নার্সিংহোমে দেখানোর পরামর্শ দেন। টাকা-পয়সা ধার দেনা করে পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়স্বজনেরা বিহারের পুর্নিয়াতে এক বেসরকারি নার্সিংহোম নিয়ে যান। প্রচুর পরিমাণে বাম পা’টি ফ্র্যাকচার হয়ে যাওয়ার কারনে ডাক্তারবাবুরা তা কেটে বাদ দেন বলে জানান। ডান পায়ে এখনো রিং বাঁধা অবস্থায় রয়েছে।
বাবলু দাসের স্ত্রী দিপালী দাস জানান দুই বছর ধরে ‘বাম’ পা কাঁটা অবস্থায় পরে রয়েছে তার স্বামী। নিজে নড়াচড়া করতে পারে না।প্রতিমাসে পূর্ণিয়া ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে হয়। লকডাউন জারি হওয়ার কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।এক মাস ধরে টাকার অভাবে ও যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ডাক্তার দেখাতে পারেননি বলে জানান।এসবেও প্রচুর খরচ।এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লক্ষের অধিক খরচ হয়ে গেছে বলে জানান। ডান পা’টি রিং বাধা অবস্থায় রয়েছে। রাত-দিন বিছানায় পরে সে কাতরাতে থাকে। মানবিক প্রকল্প থেকে একটি ঠেলা গাড়ি পেলেও মিলেনি সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা। রেশন ছাড়া আজও পর্যন্ত মেলেনি কোনো সরকারি সাহায্য।এই লকডাউনে পরিবারের সকলেই কর্মহীন হয়ে রয়েছে। রেশন থেকে পাওয়া চাল প্রায় শেষ হয়ে গেছে। পরিবারে অভাব শুরু হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুরের ভবানীপুর ব্রিজের নাগরিক কল্যান সমিতির সদস্যরা লঙ্গরখানা থেকে প্রতিদিন বাড়িতে পাঠানো খিচুড়ি খেয়ে কাটছে তাদের দিন।
সে আরো জানান তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে এবং স্বামী স্ত্রী সহ মোট পাঁচ জনের পরিবার। বড়ো ছেলে অঙ্কুর দাস কলেজ পড়ুয়া। পরিবারের দুর্দশার কথা ভেবেই মাঝে মাঝে তাকে ভিন রাজ্যে কাজ করতে যেতে হয়।এখন লকডাউনে বাড়িতে কর্মহীন হয়ে রয়েছে। আরেক ছেলে সিটু দাস ও মেয়ে রানি দাস মহেন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণীর পড়ুয়া। টাকার অভাবে ছেলে মেয়েকে কোনো গৃহশিক্ষকের কাছে টিউশন পড়াতে পারে না। বাস্তুভিটা ছাড়া আর কোনো জমি নেই। কখনো দিন মজুর আবার কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলে সংসার। একটি মাত্র ভাঙাচোড়া ঘরেই থাকে পাঁচ পাঁচজন। স্থানীয় মেম্বার- প্রধানকে বলেও মিলেনি কোনো সরকারি আবাসন।
দূর্ঘটনার পর মালদা জেলা আদালতে ইন্স্যুরেন্সের টাকা পাওয়ার জন্য ইন্সুরেন্স কোম্পানীর উপর ক্লেম করা হলেও এখনো পর্যন্ত মিলেনি কোনো ক্ষতিপূরণ। জানা গেছে কুড়ি লক্ষ টাকার উর্ধ্বে ক্লেম করা হয়েছে।
ইন্সুরেন্স কোম্পানী মাত্র সাড়ে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছেন বলে জানান। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু জানান, ভাতার জন্য কাগজ পত্র জমা হয়েছে। জুন মাস থেকে ভাতা শুরু হয়ে যাবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।