বিয়ের মধ্যেও কি ধর্ষণ সম্ভব? কেরালা আদালতের রায়ের ফলে এবারে সব সম্ভব। শুক্রবার একটি ঐতিহাসিক রায় দিয়ে কেরালা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, স্ত্রীর সম্মতিবিনা শারীরিক সম্পর্ক আলবৎ ধর্ষনের সমান। আর তার জন্য যথাযথ শাস্তি প্রাপ্য হবে স্বামীর। কেরল হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরে বিবাহের পরেও পত্নীর ধর্ষক হতে পারেন স্বামীরা, এই নিয়ে আর কোনো মতবিরোধ থাকলো না।
তার পাশাপাশি হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, “স্ত্রীর শরীরের ওপরে স্বামীদের অতিরিক্ত কোনো অধিকার থাকে না। স্বামী এবং স্ত্রী দুজনের সমান অধিকার আছে। সম্মতির বাইরে জোর করে যদি শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটা ধর্ষনের মতো অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। আর বৈবাহিক ধর্ষণ পুরোপুরিভাবে ডিভোর্সের কারণ হতেই পারে। পাশাপাশি এর জন্য স্বামীকে শাস্তিও পেতে হবে।” কিন্তু এই রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের দাবি, যদি বিয়ের মধ্যেও শারীরিক সম্পর্ক ধর্ষনের মতো একটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হয় তাহলে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা উঠে যাবে। স্বামী বা স্ত্রী কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধেই যৌন সম্পর্ক কোনোভাবেই ধর্ষনের সমান কোনো অপরাধ হতে পারেনা। এতে বিয়ে নামক যে প্রতিষ্ঠান আছে সেটার প্রতি মানুষের বিশ্বাস উঠে যাবে। স্বামীদের হেনস্থার প্রতি এটা একটা হাতিয়ার হিসাবেও ব্যবহার হতে পারে বলেই মনে করছে কেন্দ্র। বৈবাহিক ধর্ষনের প্রেক্ষিতে আদালতে একটি হলফনামা জমা দিয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার
তবে এর আগেও কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা এবং মহিলা সংগঠনের তরফ থেকে বৈবাহিক সম্পর্কে ধর্ষনের এই দাবি জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ছিলেন তারা। কিন্তু এই দাবির প্রেক্ষিতে মোদি সরকার দাবি করেছে, ভারতের মতো দেশে যেখানে স্বাক্ষরতা, সমাজের মানসিকতা, বৈচিত্র্য, দারিদ্র্য, আর্থিক ক্ষমতার অভাবের মত এত সমস্যা আছে, সেখানে এভাবে পশ্চিমের দেশগুলিকে অনুসরণ করা যায়না। যদিও সেই সময় মোদি সরকারের চরম বিরোধিতা করেছিলেন তারা। এবারে কেরল আদালতে তারা ঐতিহাসিক জয় পেলেন।
এর আগেও দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডের পরে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কড়া আইন আনার জন্য রীতিমতো উঠে পড়ে লেগেছিল অনেক মহিলা কমিশন। প্রধান বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আইন তৈরির চেষ্টা হয়েছিলো। কিন্তু তৎকালীন মনমোহন সরকার থেকে শুরু করে এখনকার মোদি সরকার কেউ এখনও এই বিষয়টিকে আইনে রূপান্তরিত করা নিয়ে সরব হয়নি। এবারে দেখার বিষয় হবে এইটা যে এবারে মোদি সরকারের তরফে এই রায় নিয়ে কি মতামত রাখে।