বলিউডের চিরকালীন ‘মিস্ট্রি উওম্যান’ একজনই। তাঁর নাম ভানুরেখা গণেশন ওরফে অভিনেত্রী রেখা (Reekha)। রেখা মানেই বরাবরের বিতর্ক। রেখার সাজে সবসময় থাকে দক্ষিণী শৃঙ্গারের ছোঁয়া। জমকালো কাঞ্জিভরম, ভারি গয়না, কপালে টিপ, খোঁপায় ফুল ও সিঁথিতে সিঁদুরে রেখা এভারগ্রিন সুন্দরী। ঠোঁটের মেরুন রঙের লিপস্টিক রেখার ট্রেডমার্ক। কিন্তু তাঁর সিঁথির সিঁদুর কার নামাঙ্কিত, তা নিয়ে রয়েছে বহু অনুমান।
রেখা 1990 সালে প্রবাসী শিল্পপতি মুকেশ আগরওয়াল (Mukhesh Agarwal)- কে বিয়ে করে বলিউড ছেড়ে লন্ডনে চলে যান স্বামীর সঙ্গে চুটিয়ে সংসার করতে। সেইসময় ‘ফিল্মফেয়ার’ পত্রিকা সঞ্জয় ও রেখার বেশ কয়েকটি ছবি প্রকাশিত করে যেগুলি দেখে সবাই জানতে পারেন, রেখা নিজের বিবাহিত জীবনে যথেষ্ট সুখী। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরেই লন্ডনে আত্মঘাতী হন মুকেশ। রেখা ফিরে আসেন বলিউডে। এবার অভিনেতা বিনোদ মেহরা (vinod Mehra)-এর সঙ্গে জুটি বেঁধে রেখা বেশ কয়েকটি ফিল্মে অভিনয় করেন। সেইসময় বিনোদ মেহরা ও রেখার বিয়ের গুজব ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। কিন্তু অত্যধিক মদ্যপানের কারণে নিজের বাড়িতেই মারা যান বিনোদ। পরে বিনোদের মৃত্যুকে ‘রহস্যময়’ বলে রেখাকে দায়ী করতে থাকেন তাঁর বন্ধুরা। কিন্তু পরে বিনোদের স্ত্রী বিন্দিয়া গোস্বামী (Bindiya goswami) জানিয়েছেন, বিনোদ লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বিনোদ চিকিৎসকদের বারণ সত্ত্বেও চিকিৎসা চলাকালীন অতিরিক্ত মদ্যপান করতেন। তাঁর জীবনে নিয়মানুবর্তিতা ছিল না। এই কারণে তাঁর মৃত্যু ঘটে।
একসময় রেখা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন (Amitabh bachchan)- এর সঙ্গে। ‘দো আনজানে’ ফিল্মের সেট থেকে রেখা-অমিতাভের সম্পর্ক শুরু হয়। এমনকি অমিতাভ-রেখার বিয়ের গুজব রটে। কিন্তু পরে তা অস্বীকার করেন রেখা। অভিনেতা ঋষি কাপুর (Rishi kapoor) ও অভিনেত্রী নিতু সিং (Nitu singh)-এর বিয়েতে রেখার সিঁথিতে প্রথমবার সিঁদুর দেখা যায়। ঋষি-নিতুর বিয়ের অনুষ্ঠানে রেখার সিঁথির সিঁদুর নিয়ে সবাই প্রশ্ন করলে রেখা বলেন, তিনি সরাসরি শুটিং থেকে এসেছেন। সিঁদুর পরে শুটিং করলেও সিঁদুর মুছতে ভুলে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন রেখা। কিন্তু এরপর থেকে জনসমক্ষে রেখাকে সিঁদুর পরেই দেখা যেতে থাকে। একটি সাক্ষাৎকারে রেখা জানিয়েছেন, সিঁদুরকে তিনি বিবাহের চিহ্ন বলে মনে করেন না। তাঁর মতে, সিঁদুর ভারতীয় নারীর ষোড়শ শৃঙ্গারের অংশ। এই কারণে তিনি সিঁদুর পরেন।
কিন্তু রেখার একটি বায়োগ্রাফি থেকে জানা গেছে, অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত (Sanjay Dutt)-এর সঙ্গে রেখা গোপনে বিয়ে করেছিলেন যার কোনো আইনি মান্যতা ছিল না। রেখা ও সঞ্জয়ের বিয়ের সময় জীবিত ছিলেন সঞ্জয়ের প্রথম স্ত্রী রিচা (Richa)। অনেকে মনে করেন, সঞ্জয় দত্তকে নিজের স্বামী মেনে রেখা সিঁদুর পরেন। তবে প্রকৃত সত্য হলো রেখা সঞ্জয়ের সঙ্গে বিয়ের অনেক আগে থেকেই সিঁদুর পরেন। রেখার বায়োগ্রাফির লেখক ইয়াসির উসমান (Yaseer usman) জানিয়েছেন, রেখার জীবনে এই মুহূর্তে রয়েছেন একটিই মানুষ যাঁর নাম ফারজানা (Farzana)। ফারজানা রেখার সেক্রেটারি হিসাবে তাঁর জীবনে এলেও এখন তিনিই রেখার বেঁচে থাকার কারণ। রেখার বেডরুমে ফারজানা ছাড়া কোনো পরিচারিকারও ঢোকার অনুমতি নেই। রেখা ফারজানাকে নিজের বোন বলে মনে করেন। তবে রেখা ও ফারজানাকে নিয়েও কম কুৎসা হয়নি। একসময় মোহনদীপ (Mohandeep) নামে একজন লেখক দাবি করেন , ফারজানা ও রেখার মধ্যে যৌন সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, রেখার স্বামী মুকেশ আগরওয়ালের মৃত্যুর জন্য ফারজানা ও রেখার সম্পর্ক দায়ী। কিন্তু সাংবাদিক মালবিকা সাংভি (Malabika sangvi) বলেন, মোহনদীপ নিজের লেখাকে মুচমুচে বানানোর জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানান, ফারজানা ও রেখা দুজনে দুজনের জীবনের সাপোর্ট সিস্টেম। রেখাকে মুকেশের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুকেশের ব্যবসায়িক ক্ষতি ও তাঁর নিজের মানসিক অসুস্থতা তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী।
ভারতীয় রীতি অনুসারে সিঁদুরের উৎপত্তি বৈবাহিক কারণে হয়নি। বৈদিক যুগে আর্য নারীর প্রসাধনের অঙ্গ ছিল সিঁদুর ও কুমকুম। লাল, মেরুন ও কমলা রঙের সিঁদুর ও কুমকুম মূলতঃ ব্যবহার করা হতো প্রসাধনের ক্ষেত্রে। রেখাও সিঁদুরকে প্রসাধনী হিসাবেই ব্যবহার করেন। রেখার জীবন রেখা নিজের মতো করেই সাজিয়ে নিয়েছেন। তাঁর মতো এক নারীকে নিয়ে অযথা কাটাছেঁড়া না করে তাঁকে তাঁর মতো প্রবাহিত হতে দেওয়া উচিত। কারণ প্রবাহিনীকে কৃত্রিমভাবে অবরুদ্ধ করলে মহাপ্লাবন আসাটাই স্বাভাবিক। আসলে প্রকৃতিও যে নারী।