ফরিদাবাদ: ‘লাভ জিহাদ’ এই শব্দটা বেশ কয়েকদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে। অর্থাৎ জাতপাত ভুলে ভালবাসার সম্পর্কে বিলীন হওয়া। কিন্তু সেই ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দিতে অনেক পরিবারই চায় না। ‘লাভ জিহাদ’ প্রসঙ্গে সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এবার প্রকাশ্যে গুলি করা হল এক কলেজ ছাত্রীকে। এর পেছনেও কারণ হিসেবে ‘লাভ জিহাদ’ আছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
নিকিতা তোমার নামে বি.কম তৃতীয় বর্ষের এক কলেজ ছাত্রী ফরিদাবাদের বল্লভপুরের রাস্তা দিয়ে কলেজ থেকে বেড়িয়ে নিজের গন্তব্যস্থলে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তাকে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি করা হয়। এই নির্মম ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ কার্যত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। দেশে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল এই ঘটনা। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে তৌসিফ নামে এক যুবক ভীষণ কাছ থেকেই নিকিতাকে লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে গুলি চালায়। পুলিশ সূত্রে খবর, নিকিতাকে বহুদিন ধরেই উত্ত্যক্ত করত তৌসিফ। যদিও বহুবার নিকিতা তৌসিফের আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিন্তু লোকলজ্জা এবং সামাজিকতার ভয়ে নিকিতার করা অভিযোগ কার্যত প্রত্যাহার করে নিয়েছে তার বাবা। আর এই লোকলজ্জা এবং সামাজিকতার ভয়ের মাশুল দিতে হলো তরুণী ছাত্রীকে।
নিকিতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বহুদিন ধরেই তৌসিফ ধর্ম পরিবর্তন করে নিকিতাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। তৌসিফ মুসলিম সম্প্রদায়ের। তাই নিকিতাকে ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল সে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি নিকিতা। এমনকি তৌসিফ একাধিকবার ফোন করায় সেই ফোন ধরা তো দূরে থাক, তার নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলেন ওই তরুণী ছাত্রী। যার ফলে রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল তৌসিফ। আর তার জেরেই প্রতিশোধস্পৃহা থেকে এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে।
মেয়ের খুন হওয়ার পর আক্ষেপের সুরে নিকিতার বাবা বলেছেন, ‘আগে যদি তৌসিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার না করে ওকে শাস্তি দিতাম, তাহলে আজ মেয়েকে হারাতে হত না। লোকলজ্জা এবং সামাজিকতার ভয়ে আমি যে ভুল করেছি, এই ভুল যেন কোনওদিন আর কোনও বাবা না করে।’ কিন্তু আক্ষেপ করলেও মেয়ে তো আর ফিরে আসবে না। তাই আক্ষেপ করা বা না করা খুব একটা পার্থক্য কিছুই হবে না। বরং একটা তরতাজা প্রাণ পৃথিবী থেকে চলে গেল যার দুঃখ রয়ে যাবে চিরদিন।