৪০ বছর উর্ধ্ব মহিলাদের বেশিরভাগই কাজে কিংবা সংসারে ব্যস্ত থাকেন অধিকাংশ সময়ে। সেক্ষেত্রে আলাদাভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়ার সময় পান না তারা। তবে এই সময়েই মহিলাদের ত্বক আলগা হতে থাকে। ধীরে ধীরে কমতে থাকে ত্বকের টানটান ভাব ও উজ্জ্বলতা। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, এই সময়ে মহিলাদের শরীরে নানা হরমোনাল পরিবর্তন ঘটতে থাকে। তবে অনেকেরই হয়তো অজানা, বয়সের আগে বুড়িয়ে যাওয়া থেকে অনেকটাই রক্ষা করতে পারে তুলসী পাতা। তুলসী পাতার যে নিজস্ব অনেক গুণ রয়েছে, তা অজানা নয় কারোরই। এই নিবন্ধের সূত্র ধরে এই তুলসী পাতার ব্যবহারে কিভাবে ৫০’শেও ত্বকের যৌবনতা বাঁচিয়ে রাখা যায়, সেই প্রসঙ্গেই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
১) তুলসীর ভেষজ গুণ ত্বকের একাধিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকের প্রয়োজনীয় কোলাজেন উৎপাদনে বাধা দেয়। উল্লেখ্য, ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখতে কোলাজেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। তবে এক্ষেত্রে এই সমস্যার সমাধানে তুলসী ভীষণভাবে কার্যকরী। এটি ত্বককে বুড়িয়ে যেতে দেয় না।
২) এক গবেষণা সূত্রে জানা গিয়েছে, তুলসী পাতা ত্বকের স্বাভাবিক আদ্রতা বজায় রাখে। বলিরেখার পরিমাণ কমিয়ে ত্বককে কোমল ও আরো সুন্দর করে তোলে।
৩) কেএএ বিশেষজ্ঞ ডক্টর অস্বতী ই.এস-এর কথায়, ৩০ বছরের পর থেকেই ত্বকে বলিরেখা, পিগমেন্টেশন, নিস্তেজ ত্বক দেখা দিতে শুরু করে। আর এক্ষেত্রে এই সময়ে তুলসী ভীষণভাবে কার্যকরী।
৩) তুলসীতে তিন ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। ১) আরসলিক অ্যাসিড, ২) রোসমারিনিক অ্যাসিড, ৩) ইউজেনল। উল্লেখ্য এইগুলি ত্বকের প্রদাহ কমাতে সক্ষম।
ব্যবহার:
১) প্রথমে এক কাপ তুলসী পাতা ভালো করে ধুয়ে নিয়ে সেটি বেটে নিতে হবে। এরপর তার মধ্যে এক টেবিল চামচ বেসন ও এক টেবিল চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ঐ মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে নিয়ে ১০ মিনিটের জন্য ছেড়ে দিতে হবে। শেষে পরিষ্কার জল দিয়েই মুখ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
২) তুলসী ছাড়াও অশ্বগন্ধা ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না। অশ্বগন্ধার ভেষজ গুণ রয়েছে প্রচুর। এতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাঙ্গালের উপাদান বর্তমান। এটি ত্বকের স্ট্রেসের পরিমাণ কমায়। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
প্রথমে একটি পাত্রে এক থেকে দুই চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার নিয়ে নিতে হবে। এরপরে ঐ পাত্রে পরিমাণমতো জল নেওয়ার পাশাপাশি এসেনশিয়াল অয়েল নিয়ে নিতে হবে বেশ কয়েকফোঁটা। এরপর সবটি ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে একটি ঘন ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এরপরে সেই ফেসপ্যাক ভালো করে মুখে লাগিয়ে ৮ থেকে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। পরে মুখ ভালো করে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ বার এটি ত্বকে প্রয়োগ করা দরকার।
৩) ত্বকের একাধিক সমস্যা মেটাতে হলুদ অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। প্রথমে একটি পাত্রে এক টেবিল চামচ বেসন ও আধ টেবিল চামচ হলুদ গুঁড়ো নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর তার মধ্যে পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ ও গোলাপজল মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর সেই ঘন ফেসপ্যাক গোটা মুখে ভালো করে লাগিয়ে ১০ মিনিট ছেড়ে দিতে হবে। শেষে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিলেই কাজ শেষ। উল্লেখ্য, আইএসএএসি লিউক্সের প্রতিষ্ঠাতা মেডিকেল ডিরেক্টর ডঃ গীতিকা মিত্তালের কথায়, হলুদে কারকিউমিন নামের একটি সক্রিয় উপাদান বর্তমান। এটি ক্ষতিকারক রাসায়নিক ও পরিবেশের দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সক্ষম।
তবে আবশ্যিকভাবে যেকোনো ধরনের ফেসপ্যাক নিজের ত্বকে প্রয়োগ করার পূর্বে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।