কে ছিলেন এই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ? আজ তাঁর ৮৫ তম জন্মদিন, উপলক্ষে রইলো কিছু অজানা তথ্য
পূর্ণেন্দু পত্রীর নন্দিনী, অথবা শ্রীজাতর রঞ্জিনী, কিংবা নাটোরের বনলতা সেন তেমনি সুনীলের নারী নীরা। সুনীলের প্রেম নীরা। পৃথিবীর যাবতীয় কবিতার আদিমতম প্রেরণা হলো নারী। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নারী হলেন নীরা।
তবে পৃথিবীর আর কোন কবি একটি মাত্র নাম ব্যবহার করে এত কবিতা লিখেছেন বলে জানা যায় না। তবে নীরা কি সুনীলের শুধু কল্পনার মানুষ নাকি জীবন্ত মানুষ এই নিয়ে সংশয় আছে।
চলুন জেনে নেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিষয়ে কিছু অজানা কথা:
7 সেপ্টেম্বর 1934 সালে মাদারীপুর মহকুমার ফরিদপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাভাসি এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সম্পাদক সাংবাদিক, কলামিস্ট হিসেবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতায় জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি একইসঙ্গে তিনি আধুনিক রোমান্টিক। কবিতার পংক্তি সাধারণ মানুষের মুখস্ত। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নীললোহিত, সনাতন পাঠক, নীল উপাধ্যায় ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন।
মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতায় আসেন। 1953 সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। 1958 এ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং 1966 খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী, হঠাৎ নীরার জন্য, শ্যামবাজারের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, প্রথম আলো, সেই সময়, ভানুও রানু, মনের মানুষ।
জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। ব্যাংকের পিয়নের চেয়ে স্কুল মাস্টারের বেতন ছিল কম। সুনীলের মা কখনোই চাননি ছেলে শিক্ষকতা করুক। পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন চাকরি করেছিলেন তারপর থেকে সাংবাদিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মি পলেন কলকাতায় এলেন সুনীলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হয়।সেই সূত্রে মার্কিন মুলুকে গেলেন সুনীল, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে কিছুদিন কাজ করেন তিনি।
নীললোহিত নাম নিয়ে সুনীল নিজের একটা পৃথক সত্তা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নীললোহিতের সব কাহিনীতেই নীললোহিত কেন্দ্রীয় চরিত্র।
নারীদের নিয়ে তিনি উক্তি করেছিলেন ‘নারীদের ডিকশনারিতে সন্তুষ্টি বলে কোন শব্দ নেই’।
প্রেমের ক্ষেত্রে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ভালোবাসার কোন জন্ম হয় না, কোন মৃত্যু হয় না, কেননা আমি অন্যরকম ভালোবাসার হীরের গয়না শরীরে নিয়ে জন্মেছিলাম’।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প উপন্যাসের কাহিনী চলচ্চিত্র রূপায়ন হয়েছে। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অরণ্যে দিনরাত্রি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কাকাবাবু চরিত্রের চার টি কাহিনি সবুজ দ্বীপের রাজা, কাকাবাবু হেরে গেলেন, মিশর রহস্য, ইয়েতি অভিযান চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। হঠাৎ নীরার জন্য ওনার লিখিত আরেকটি ছবি। 2002 সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা শহরে শেরিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। 1972 ও 1919 খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার এবং 1985 খ্রিস্টাব্দে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন।
23 অক্টোবর 2012 খ্রিস্টাব্দে হৃদযন্ত্র জনিত অসুস্থতার কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 2003 খ্রিস্টাব্দে 4 এপ্রিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতার গণদর্পণ কে সস্ত্রীক মরণোত্তর দেহ দান করেন। তার স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়।তবে পুত্র সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতে তার দেহ দাহ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যবস্থাপনায় 25 অক্টোবর 2012 তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।
Written by – শ্রেয়া চ্যাটার্জী