মাদার কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে স্নেহময়ী মমতা, করুনার ছোঁয়া, ভালোবাসার পরশ।যদিও মাদার অভিধাটি অনেক পরে যুক্ত হয়েছে তার নামের সঙ্গে। তবে দয়া মায়া করুনা ছিল তার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। নিজে কোন সন্তানকে গর্ভধারন না করেও তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের গর্ভধারিনী মা। সবার উপরে মানুষ সত্য এই মন্ত্রে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন।
জন্ম ছেলেবেলা
তার আসল নাম অ্যাগনেস গঞ্জা বোজাঝিও। তিনি 1910 খ্রিস্টাব্দের 26 শে আগস্ট। অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া স্কপিয়ে তে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন নিকোল ও দ্রানা বায়জুর কনিষ্ঠ সন্তান। তার পিতা আলবেনিয়ার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। 1919 সালে মাত্র 8 বছর বয়সে তার পিতৃবিয়োগ হয়। পিতার মৃত্যুর পর তার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শ লালন-পালন করেন। 18 বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাটান। 1928 খ্রিস্টাব্দের তিনি তৎকালীন বৃটিশ উপনিবেশ ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার অভিযানে আসেন।
1950 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় তিনি দা মিশনারিজ অফ চারিটি নামে একটি ধর্ম প্রচার সংঘ তৈরি করেন।2012 সালে এ সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন প্রায় 4500 সন্ন্যাসিনী। প্রথমে ভারতীয় পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই ধর্ম প্রচারণা কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। 2016 সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে সন্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ক্যাথলিক গির্জায় তিনি কলকাতার সন্ত হিসেবে আখ্যায়িত হন।
1969 সালে বিবিসিতে সামথিং বিউটিফুল ফর শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হলে তার দাতব্য ধর্ম প্রচার সংঘ কার্যক্রম পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। এবং তার খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি 1979 সালে প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কার এবং 1980 সালে ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন।
তিনি প্রথমেই আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যাম নামে লোরেটো তে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করতে যান। কারণ এই ভাষায় ছিল ভারতের শ্রেষ্ঠ সফল শিক্ষার মাধ্যম। 1929 সালে ভারতে দার্জিলিঙে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। 1931 সালের 24 মে তিনি হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন এ সময় তিনি ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্ত টেরিজার নাম গ্রহণ করেন।
মিশনারি অফ চারিটি
1946 সালের 110 সেপ্টম্বর ধর্মীয় নির্জন বাসের জন্য দার্জিলিং যাওয়ার সময় তার মধ্যে গভীর উপলব্ধি আসে। এই অভিজ্ঞতাকে পরবর্তীতে আহবানের ভিতর আরেক আহ্বান হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
1952 সালে মাদার তেরেসা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেওয়া জমিতে মুমূর্ষ দের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দির কালীঘাট হোম ফর দ্য ডাইং রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্রদের জন্য নির্মিত দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র পরবর্তীতে কেন্দ্রের নাম রাখেন নির্মল হৃদয়।এখানে যারা চিকিৎসার জন্য আসছেন তাদেরকে চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হতো এবং সম্মানের সাথে মৃত্যুবরণের সুযোগ করে দেওয়া হতো এ বিষয়ে তিনি বলেন “a beautiful death is for people who lived like animals to die like angels- loved and Wanted”
এর কিছুদিন পরেই তিনি কুষ্ঠ আক্রান্তদের নিয়ে একটি সেবা গ্রাহক সেবা কেন্দ্র খুলেন যার নাম দেওয়া হয় শান্তিনগর। এছাড়া মিশনারিজ অব চ্যারিটির উদ্যোগে কলকাতার বাইরে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কুষ্ঠ রোগ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।1955 সালের নির্মল শিশু ভবন স্থাপন করেন এই ভবন ছিল এতিম ও বসতি হীন শিশুদের একটি স্বর্গ অচিরেই মিশনারিজ অফ চারিটি দেশ-বিদেশের বহু দাতা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয় 1960 দশকের মধ্যে ভারতের সর্বোচ্চ চারটি অফ অর্থায়ন প্রচুর প্রচুর দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র খোলা হয় 1965 সালে ভেনিজুয়েলায় ভারতের বাইরে প্রথম একটি কেন্দ্র খোলা হয়। মাত্র পাঁচজন সন্ন্যাসিনী কে নিয়ে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে রোম, তানজানিয়া, অস্ট্রিয়াতে শাখা খোলা হয় এবং 1970 দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ আমেরিকা প্রতিষ্ঠিত হয়। আলবার্টা’র এক প্রতিবেদনে বলেছেন তিনি মনে করতে কষ্টভোগ এর মাধ্যমে যীশুর কাছাকাছি যাওয়া যায় 1980 দশকে ইউরোপে যে অংশ তুলনামূলক উদার হয়ে ওঠে, সে সময় মাদারটেরেজা মিশনারি অফ চারিটি কাজ পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। প্রকল্পের মাধ্যমে তার কাজ শুরু হয় গর্ভপাত এবং বিবাহ-বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে অনেকে তার সমালোচনা করেন কিন্তু সবসময় বলতেন “no matter who says what you should accept it with the smile and do your own work”.
স্বাস্থ্যহানিও মৃত্যু
1983 সালে পোপ জন পল 2 এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরে যাওয়ার সময় মাদারটেরেজা প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। 1989 সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হবার পরে তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। 1991 সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ার আরো শরীরের অবনতি হতে থাকে। 1996 সালের এপ্রিলে পড়ে গিয়ে তার কলার বোন ভেঙ্গে যায়। আগস্টে ম্যালেরিয়া তিনি আক্রান্ত হন। এর পাশাপাশি তার বাম হৃদপিন্ডে রক্ত পরিবহনে অক্ষম হয়ে পড়েন। 1997 সালের 13 মার্চ মিশনারিজ অফ চ্যারিটি প্রধান পর থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। 5 সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
Written By – শ্রেয়া চ্যাটার্জি