টলিউডবিনোদন

টানা ৪ দিন পর আজ প্রথম চোখ খুললেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেলভিউ নার্সিংহোম সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন আজ সৌমিত্রবাবু কিছুক্ষণের জন্য চোখ খুলেছেন। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কিছুটা বাড়লেও চিকিৎসকরা আপাতত তাঁকে পঞ্চাশ শতাংশ ভেন্টিলেশনে রেখেছেন। সোমবার বিকাল 3 টে নাগাদ তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে। সেই সময় তাঁকে একশো শতাংশ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। সৌমিত্রবাবুর প্রথম ডায়ালিসিস সফল হয়েছে। ফলে তাঁর শরীরে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে তাঁর অন্ত্রে রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গিয়েছে। একইসঙ্গে কমেছে প্লেটলেটের পরিমাণ। এই কারণে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে ব্লাড ট্রান্সফিউশন করা হবে। সৌমিত্রবাবুর রক্তচাপ অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। স্টেরয়েড প্রয়োগ করার ফলে তাঁর স্নায়বিক সমস্যা কিছুটা কমেছে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ফলে তাঁর সেকেন্ডারি সংক্রমণও কিছুটা কমেছে। এছাড়া ওষুধ প্রয়োগ করে অন্ত্রে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁর সঙ্কটজনক অবস্থা এখনও কাটেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। নেফ্রোলজিস্টদের পরামর্শ অনুযায়ী, সৌমিত্রবাবুর দ্বিতীয় ডায়ালিসিস করা হবে।

গত 6 ই অক্টোবর করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 2006 থেকে সিওপিডির সমস্যা ও করোনার কারণে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাঁর সিটি স্ক্যান করে বুকে কিছু না পাওয়া গেলেও এমআরআই রিপোর্টে জানা যায় তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে পুরানো ক্যান্সারের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাঁর মূত্রথলিতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। সৌমিত্রবাবুর জন্য গঠিত হয় মেডিক্যাল বোর্ড। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে দুই বার প্লাজমা থেরাপি করা হয়। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। ক্রমশ তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়তে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলের তারতম্য ঘটতে শুরু করে। তাঁর করোনা এনসেফ্যালাইটিস দেখা দেয়। ফলে সৌমিত্রবাবুর স্নায়বিক অস্থিরতা শুরু হয়। ক্রমশ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান বর্ষীয়ান অভিনেতা। তাঁকে বাইপ‍্যাপ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। এইসময় সৌমিত্রবাবুর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। চিকিৎসকরা তাঁর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা শুরু করেন। অ্যান্টিবায়োটিকে ভালো সাড়া দিচ্ছিলেন সৌমিত্রবাবু। কিন্তু তাঁর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। সৌমিত্রবাবু বিছানায় উঠে বসতে পারছিলেন না। তিনি কথা বলতে বা মুখ দিয়ে খেতে পারছিলেন না। ফলে তাঁকে রাইলস টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো হচ্ছিল। তাঁর ফিজিওথেরাপি ও স্পিচ থেরাপির চেষ্টা করা হলেও তেমন লাভ হয়নি। তবে তাঁর আচ্ছন্নভাব অনেকটা কেটে গিয়েছিল। তিনি সবাইকে চিনতে পারছিলেন। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। ফলে বাইপ‍্যাপ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়।

কিন্তু 85 বছর বয়স্ক সৌমিত্রবাবুর শরীরে অধিক মাত্রায় স্টেরয়েড ক্ষতিকর হতে পারে। এই কারণে চিকিৎসকরা স্টেরয়েডের ডোজ কমিয়ে দেন। কিন্তু এর ফলে সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। তাঁর স্নায়বিক সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। সৌমিত্রবাবুর কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁর ইউরিন আউটপুট কমে যায়। তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলের অস্বাভাবিক তারতম্য ঘটে। এছাড়া সৌমিত্রবাবুর শরীরে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনেরমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। অন্ত্রে রক্তক্ষরণের ফলে তাঁর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। সৌমিত্রবাবুর শরীরে প্লেটলেটের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে। আন্তর্জাতিক ও দেশ এবং রাজ্যের বিশিষ্ট স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সৌমিত্রবাবুর শরীরে আবারও স্টেরয়েড প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। অপরদিকে সৌমিত্রবাবুর পরিবারকেও কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। মুম্বই থেকে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সৌমিত্রবাবুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু সৌমিত্রবাবু আইসিইউ-তে ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন অনৈতিক ভাবে তাঁর কিছু ছবি সাইবার দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ফলে তাঁর পরিবার ক্ষুব্ধ হন। সৌমিত্রবাবুর কন্যা পৌলমী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অভিনেতার ব্যক্তিগত পরিসর লঙ্ঘন ও মর্যাদাহানি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

 

Related Articles

Back to top button