টলিউডবিনোদন

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, কিন্তু কাটছে না সঙ্কট

Advertisement

বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তাঁর অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বন্ধ করা গেলেও শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে। সোমবার তাঁকে কয়েক ইউনিট রক্ত দিতে হয়েছে। কিন্তু বারবার রক্ত দেওয়া হলেও সৌমিত্রবাবুর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ছে না। ফলে চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এদিকে বর্ষীয়ান অভিনেতার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধেছে। এই জমাট বাঁধা রক্ত শরীর থেকে বের করতে অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে এই অস্ত্রোপচার কবে হবে, তা নির্ভর করছে সৌমিত্রবাবুর শারীরিক পরিস্থিতির উপর। এছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলেও সৌমিত্রবাবুর সংক্রমণ সম্পূর্ণ রোধ করা যায়নি। ফলে চিকিৎসকরা এবার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে ভাসকুলার প্রসিডিওর-এর কথা ভাবছেন। সৌমিত্রবাবুর শরীরে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাঁর দুটি কিডনি বিকল হয়ে যায়। প্রথম দুটি ডায়ালিসিসের পর ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু সোমবার তাঁর তৃতীয় ডায়ালিসিস হলেও তেমন লাভ হয়নি। তাঁর ইউরিন আউটপুট রেস্টোর করার জন্য চেষ্টা করছেন নেফ্রোলজিস্টদের একটি টিম। শরীরে কোথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা বোঝার জন্য সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করা হলে জানা যায় তাঁর অন্ত্রে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়ে তা বন্ধ করেন। সংক্রমণের কারণে এখনও তাঁর প্লেটলেট কম রয়েছে। ফলে তাঁকে প্লেটলেট দিতে হয়েছে।

গত 28 দিন ধরে বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন বেলভিউ নার্সিংহোমের আইসিইউ ওয়ার্ডে। তাঁর জন্য গঠিত হয়েছে বিশেষ মেডিক্যাল টিম। গত 6 ই অক্টোবর করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 2006 থেকে সিওপিডির সমস্যা ও করোনা সংক্রমণের কারণে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সিটি স্ক্যান করে তাঁর বুকে কিছু না পাওয়া গেলেও এমআরআই রিপোর্টে জানা যায় তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে পুরানো ক্যান্সারের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাঁর মূত্রথলিতেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে দুই বার প্লাজমা থেরাপি করার পরেও তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। করোনা এনসেফ্যালাইটিসের কারণে তাঁর স্নায়বিক অস্থিরতা জটিল আকার ধারণ করে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলের তারতম্য ঘটে। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়তে থাকে। সৌমিত্রবাবুর হার্টরেট অনিয়মিত হয়ে যায়। তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান। তাঁকে বাইপ‍্যাপ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। এই সময় সৌমিত্রবাবুর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

চিকিৎসকরা তাঁর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ শুরু করেন। অ্যান্টিবায়োটিকে ভালো সাড়া দিচ্ছিলেন সৌমিত্রবাবু। তাঁর আচ্ছন্নভাব অনেকটা কেটে যায়। তিনি সবাইকে চিনতে পারছিলেন। তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছিল। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ক্রমশ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। তাঁর বাইপ‍্যাপ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু সৌমিত্রবাবু প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বিছানায় উঠে বসতে পারছিলেন না। এমনকি তিনি কথা বলতে বা মুখ দিয়ে খেতে পারছিলেন না। তাঁকে রাইলস টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো হচ্ছিল। তাঁর ফিজিওথেরাপি ও স্পিচ থেরাপির চেষ্টা করা হলেও কোনো ফল হয়নি। সৌমিত্রবাবুর স্নায়বিক অস্থিরতা কাটাতে তাঁর মিউজিক থেরাপি শুরু হয়। তাঁকে তাঁর পছন্দের রবীন্দ্রসঙ্গীত ও তাঁর অভিনীত ফিল্মের গান শোনানো হচ্ছিল। কিন্তু তাঁর বয়সের পক্ষে স্টেরয়েডের ডোজ ক্ষতিকর হতে পারে। এই কারণে চিকিৎসকরা স্টেরয়েডের ডোজ কমিয়ে দেন। কিন্তু স্টেরয়েডের ডোজ কমানোর ফলে সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাঁর স্নায়বিক সমস্যা জটিলতর হয়ে ওঠে। তিনি আবারও তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান। তাঁর শরীরে সোডিয়াম কমে যায়। সৌমিত্রবাবুর দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁর শরীরে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে থাকে। এছাড়া একটানা অনেকদিন নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে বর্ষীয়ান অভিনেতার শরীরে অন্যান্য কিছু সংক্রমণ দেখা দেয়। তাঁর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়। ফলে তাঁর হিমোগ্লোবিন কমে যায়। সংক্রমণের কারণে তাঁর প্লেটলেট কমে যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্লাজমাফেরেসিস করার পরামর্শ দিলেও সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থার কারণে তা স্থগিত রাখা হয়। তাঁর ডায়ালিসিস শুরু করা হয় ও ইউরিন আউটপুট রেস্টোর করার চেষ্টা করা হয়। আন্তর্জাতিক ও দেশ এবং রাজ্যের বিশিষ্ট স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়। এই মুহূর্তে সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। তিনি চোখ খোলার চেষ্টা করছেন। এদিন তাঁর পরিবার তাঁর সাথে দেখা করেছেন। অপরদিকে আর্টিস্ট ফোরামের তরফ থেকে কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শরীরে রক্তের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে রক্তদানের আবেদন করা হয়েছে। মুম্বই থেকে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সৌমিত্রবাবুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন।

Related Articles

Back to top button