টলিউডবিনোদন

এখনও সঙ্কটমুক্ত নন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তৃতীয় ডায়ালিসিস স্থগিত

Advertisement

বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও এখনও যথেষ্ট সঙ্কটজনক। তাঁর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে তাঁকে শনিবার কয়েক ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর অন্ত্রে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা গেছে ওষুধের মাধ্যমে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে প্লেটলেটের পরিমাণ কমে গেছে। এই কারণে তাঁকে এদিন ফের প্লেটলেট দিতে হয়েছে। এদিকে সৌমিত্রবাবুর করোনা এনসেফ্যালাইটিসের ফলে দেখা দেওয়া স্নায়বিক সমস্যা এখনও জটিলতর অবস্থায় রয়েছে। এর জন্য চিকিৎসকরা কিছু নতুন ওষুধ চালু করেছেন। এই মুহূর্তে পঞ্চাশ শতাংশ ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে সৌমিত্রবাবুকে। রাইলস টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো হচ্ছে তাঁকে। মাঝেমধ্যে চোখ খুললেও আচ্ছন্নভাব এখনও পুরোপুরি কাটেনি তাঁর। তবে দীর্ঘদিন নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে বর্ষীয়ান অভিনেতার শরীরে বেশ কিছু আনুষঙ্গিক সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সংক্রমণ রোধ করার জন্য চিকিৎসকরা এই মুহূর্তে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা শুরু করেছেন। সৌমিত্রবাবুর নতুন করে শারীরিক অবস্থার অবনতি না হলেও তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল অস্বাভাবিক রয়েছে। তাঁর কিডনির অবস্থা খারাপ থাকার কারণে বুধবার ও বৃহস্পতিবার তাঁর দুটি ডায়ালিসিস করা হয়। ফলে তাঁর শরীরে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে তাঁর ইউরিন আউটপুট রেস্টোর করার জন্য চেষ্টা করছেন নেফ্রোলজিস্টরা।

গত দুদিন ধরে ডাকলে সাড়া দেবার চেষ্টা করছেন সৌমিত্রবাবু। এদিন পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন,বলে জানা গিয়েছে। 6ই অক্টোবর করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 2006 থেকে সিওপিডির সমস্যা থাকায় ও করোনা সংক্রমণ হওয়ার কারণে সৌমিত্রবাবুর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়তে থাকে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল অস্বাভাবিক হয়ে যায়। তাঁর হার্টরেট অনিয়মিত হয়ে যায়। সিটি স্ক্যান করে তাঁর বুকে কিছু না পাওয়া গেলেওএমআরআই রিপোর্টে জানা যায় তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে পুরানো ক্যান্সারের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাঁর মূত্রথলিতেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। সৌমিত্রবাবুর জন্য গঠিত হয় বিশেষ মেডিক্যাল টিম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে দুই বার প্লাজমা থেরাপি করা হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। করোনা এনসেফ্যালাইটিসের ফলে তাঁর স্নায়বিক অস্থিরতা দেখা দেয়।

তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান। সৌমিত্রবাবুকে বাইপ‍্যাপ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। এরপর সৌমিত্রবাবুর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে তাঁর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ শুরু করেন চিকিৎসকরা। অ্যান্টিবায়োটিকে ভালো সাড়া দিচ্ছিলেন সৌমিত্রবাবু। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছিল। সৌমিত্রবাবুর আচ্ছন্নভাব অনেকটা কেটে গিয়েছিল। তিনি সবাইকে চিনতে পারছিলেন। কিন্তু সৌমিত্রবাবু প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বিছানায় উঠে বসতে পারছিলেন না। সৌমিত্রবাবু কথা বলতে বা মুখ দিয়ে খেতে পারছিলেন না। তাঁর ফিজিওথেরাপি ও স্পিচ থেরাপির চেষ্টা করা হলেও তেমন লাভ হয়নি। কিন্তু তাঁর বয়সের পক্ষে স্টেরয়েড ক্ষতিকর হতে পারে। এই কারণে চিকিৎসকরা স্টেরয়েডের ডোজ কমিয়ে দেন।

ফলে সৌমিত্রবাবুর স্নায়বিক সমস্যা জটিলতর হয়ে ওঠে। তাঁর কিডনি বিকল হয়ে যায়। সৌমিত্রবাবু চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না। বেলভিউ-এর চিকিৎসকরা আন্তর্জাতিক ও দেশ এবং রাজ্যের বিশিষ্ট স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া শুরু করেন। সোমবার বিকাল 3 টে নাগাদ সৌমিত্রবাবুকে একশো শতাংশ ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে তা কমিয়ে পঞ্চাশ শতাংশ করা হয়। সৌমিত্রবাবুর শরীরে প্লাজমাফেরেসিস ও তৃতীয় ডায়ালিসিস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার কারণে আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে নেফ্রোলজিস্টরা আজ তাঁকে পরীক্ষা করে তৃতীয় ডায়ালিসিস কবে শুরু করা যাবে, তা জানাবেন।

ইতিমধ্যে বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের কাউন্সেলিং করা হয়েছে। এর মধ্যে সৌমিত্রবাবু আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন অনৈতিক ভাবে তাঁর কিছু ছবি সাইবার দুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সৌমিত্রবাবুর পরিবার এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন। তাঁর কন্যা পৌলমী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অভিনেতার ব্যক্তিগত পরিসর লঙ্ঘন ও মর্যাদাহানি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। অপরদিকে মুম্বই থেকে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সৌমিত্রবাবুর স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন। তিনি সৌমিত্রবাবুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন।

Related Articles

Back to top button