গত মাসে প্রয়াত হয়েছেন লেজেন্ডারি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। শূন্য হয়ে গেছে আপামর বাঙালির বিনোদনের সিংহাসন। মুকুটটা শুধু পড়ে আছে, রাজা ময়ূরবাহন চলে গেছেন নক্ষত্রলোকে। আর্টিস্ট ফোরামের সভাপতি ছিলেন সৌমিত্রবাবু। তাঁর প্রয়াণে অভিভাবকহারা হয়েছে আর্টিস্ট ফোরাম। অক্টোবর মাসের পয়লা তারিখে করোনা আক্রান্ত হয়ে বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ফিরে আসে পুরানো ক্যান্সার। সৌমিত্রবাবুর শরীরে ক্যান্সারের সংক্রমণ শুরু হয়ে যায়। এমনকি মস্তিষ্কেও সংক্রমণ শুরু হয়। একমাস ধরে বেলভিউ হাসপাতালের আইসিইউ-তে জীবন -মৃত্যুর লড়াই করেন বাঙালির ‘ফেলুদা’। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুর শীতল হাত ছিনিয়ে নিল বাঙালির লেজেন্ডকে। চলে গেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দল-মতের উর্ধ্বে উঠে মমতা ব্যানার্জি-বিমান বসু-অধীর চৌধুরীরা জানালেন শেষ শ্রদ্ধা।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মানতেন না পুনর্জন্ম। কোন পৌত্তলিকতা পছন্দ করতেন না তিনি। কিন্তু তাঁর স্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী দক্ষিণ কলকাতার মহানির্বাণ মঠে সৌমিত্রবাবুর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। সৌমিত্রবাবুর কন্যা পৌলমী ও পুত্র সৌগত পিতার শ্রাদ্ধ করেন। এই মুহূর্তে পৌলমী ব্যস্ত সৌমিত্রবাবুর কাজ নিয়ে একটি আর্কাইভ তৈরী করার কাজে।
কিন্তু সবার অলক্ষ্যে আসানসোলের ভাস্কর্য শিল্পী সুশান্ত রায় তৈরী করলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মোমের মুর্তি। সুশান্ত জানিয়েছেন, এর আগে তিনি সুশান্ত সিং রাজপুত, শাহরুখ খান, বিরাট কোহলি, অমিতাভ বচ্চনের মতো সেলিব্রিটিদের মোমের মুর্তি তৈরী করেছেন। বহুদিন ধরেই তাঁর ইচ্ছা ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মোমের মুর্তি তৈরী করার। কিন্তু সুশান্ত ভাবতে পারেননি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ‘অপু’। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু ভিতর থেকে ভেঙে দিয়েছিল সুশান্তকে। তিনি তড়িঘড়ি সৌমিত্রবাবুর মোমের মুর্তি তৈরী করার কাজ শুরু করেন। মাত্র পঁয়তাল্লিশ দিনে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মোমের মুর্তি সম্পূর্ণ করেন সুশান্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় সৌমিত্রবাবুর মোমের মুর্তির ছবি প্রকাশিত হতেই সুশান্তবাবুর প্রশংসা করেন নেটিজেনরা। এই ঘটনাই প্রমাণ করে মৃত্যুও হার মেনেছে ‘অপরাজিত’র কাছে। বাঙালি মননে চিরস্থায়ী হয়ে রয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাধের আসন।