করোনা ভাইরাস এবং তার জেরে তৈরি হওয়া লকডাউন এর কারণে সকলের হাতেই বর্তমানে পয়সার অভাব। এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ এমন রয়েছেন যারা নিজের পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এই লকডাউন এর ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ইন্ডাস্ট্রি গুলির মধ্যে একটি হলো টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি। টলিপাড়ার মত ক্ষতি হয়তো অন্য কোন ইন্ডাস্ট্রিতে হয়নি। আর এই টলিপাড়ার সবথেকে বড় ধাক্কা খেয়েছেন পার্শ্ব চরিত্রে কাজ করা শিল্পীরা।
কেউ হয়তো কখনো কখনো পুলিশ অফিসার হতেন, আবার কেউ হয়তো হতেন কারো দাদা, ভাই কিংবা অন্য কোন সম্পর্কের কেউ। কিন্তু, এই সমস্ত চরিত্রে অভিনয় করা ব্যক্তিদের হাতে কাজ একেবারে নেই বললেই চলে। করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন চলছে। কাজেই সমস্ত শুটিং চলছে হয় বাড়ি থেকে না হলে মাত্র ৫০ জন নিয়ে। আর এই ছোট পরিসরের মধ্যে পার্শ্বচরিত্রের বাড়বাড়ন্ত নেহাত বিলাসিতা। তাই মার খাচ্ছেন এই সমস্ত শিল্পীরা।
যারা সিনেমা জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের হাতে কাজ একেবারেই নেই। তাই তাদেরকে দেখা যাচ্ছে অন্য কোন পেশায় নিজেকে নিযুক্ত করে নিতে। দিন কয়েক আগে আমরা হাতিবাগানের রাস্তায় শিল্পী শংকর ঘোষালকে ভিক্ষা করতে দেখেছিলাম। কারো বাবা কিংবা দাদুর চরিত্রে অভিনয় করা এই বৃদ্ধ মানুষটি হাত পেতে টাকা চাইছেন, দৃশ্যটা খুবই হৃদয়বিদারক। তবে শুধু শঙ্কর ঘোষাল একা নন, তারই মতো আরো অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা ভাগ্যের মার খেয়েছেন। সে রকমই একজন শিল্পী হলেন শ্রীকান্ত মান্না। আবির চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সব্যসাচী চক্রবর্তী, এমনকি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সকলের সাথেই তিনি একবার না একবার হলেও স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। বিভিন্ন রকম পার্শ্ব চরিত্রে তিনি দাপিয়ে অভিনয় করে গিয়েছেন দীর্ঘ কুড়ি বছর ধরে।
কিন্তু করোনা লকডাউন এবং ভাগ্যের মারে, এ শিল্পী বর্তমানে বাজারের সাধারণ এক মাছ বিক্রেতা। অভিনয়ের প্রতি প্রেম এখনও রয়েছে, কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতিতে কাজ কোথায়? তাই বাধ্য হয়ে মাছ বিক্রির পেশাটাকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই শিল্পী। টলিপাড়ার বহু শিল্পীদের কাছে শ্রীকান্ত মান্নার পরিস্থিতির খবর গিয়ে পৌঁছেছে। অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন হয়তো। কিন্তু, তার শিল্পী প্রতিভাকে এবং তার হার না মানা মনোভাবকে সঠিক সম্মান দিয়ে কুর্নিশ জানালেন টলিপাড়ার নামজাদা শিল্পী শ্রীলেখা মিত্র। এই বামপন্থী অভিনেত্রী শ্রীকান্তবাবুর ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, “না কোনও কাজ ছোট নয় ঠিক… তবু প্রশ্ন কিছু থেকে যায়… আর হ্যাঁ, প্লিজ আহা-উহু করবেন না, দানের বা ভাতার টাকায় চলছেন না পরিশ্রম করে নিজের সংসার চালাচ্ছেন এই শিল্পী। আপনাকে শ্রদ্ধা জানাই কমরেড।”