করোনার বিরুদ্ধে ভয় আর আতঙ্ক নয়। নিয়মবিধি মেনে লড়াই করে জিতে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। সেই লড়াইতে গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের। দুষ্টু করোনার সঙ্গে লড়তে এবার ছোটরাও সামিল হয়েছে । গতকাল থেকে দেশব্যাপী ১৫ থেকে ১৮ বছরের নাবালক-নাবালিকাদের করোনার টিকাকরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। দেশের ভবিষ্যত এই ছোটরা। তাই মহামারীর করাল গ্রাস থেকে এবার তাদের ‘বর্ম’ দেবে ভ্যাকসিন। সেই ‘বর্মে’র কাছে হার মানবে দুষ্টু করোনা। তাই দেশের প্রতিটি ১৫-১৮ বছরের সন্তান যাতে করোনার টিকা পায়, তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে সকল বাবা-মাদেরও। কারণ করোনাকে হারাতে টিকা-ই হচ্ছে ‘ঢাল’।
শুধু এদিন রাজ্যের মধ্যে কলকাতা নয়, এদিন অন্যান্য জেলাতেও সোমবার ১৫ থেকে ১৮ বছরের ছাত্রছাত্রীদের টিকাকরণ শুরু হয়েছে। বেশির ভাগ জায়গায় প্রথম দিন নাবালকদের টিকাকরণ হয়েছে নোডাল স্কুলে। কলকাতার ১৬টি বরোয় ১৬টি স্কুলে এ দিন টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে এদের মধ্যে সব স্কুলছুট পড়ুয়াকে টিকা দেওয়া যাবে কি না, সেই নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে এ দিন যারা টিকা নিয়েছে, অনেক জায়গায় তারা সেই সব জায়গাতে বাড়তি হিসেবে পেয়েছে চকলেট বা গোলাপ।
বীরভূমে জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিদর্শক সমরেন্দ্র সাঁতরা বলেন, ‘‘স্কুলপড়ুয়াদের তালিকা অনুযায়ী টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করাটা স্কুল-কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যে পড়ছে। বাকি পড়ুয়া, যেমন স্কুলছুট বা নতুন শ্রেণিতে ওঠা যে-সব ছাত্রছাত্রীর নাম নথিভুক্ত হয়নি, তাদের টিকার বন্দোবস্ত করবে প্রশাসন।’’ বর্ধমানে স্কুলছুটদের আজ, মঙ্গলবার থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল, কালনা ও কাটোয়া হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। স্কুলছুটদের নিজেদের বয়সের প্রমাণপত্র দেখালেই কর্পোরেশন থেকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হবে।
সোমবার উত্তরবঙ্গে অর্থাটগশিলিগুড়ি জেলায় পাঁচটি, জলপাইগুড়ি জেলার ১৩টি, কোচবিহারে ১৮টি, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০টি, আলিপুরদুয়ারে সাতটি স্কুলে টিকা দেওয়া হয়েছে। এবং মুর্শিদাবাদে শিবিরেও করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসীম হালদার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘পনেরো থেকে আঠারো বছরের ছাত্রছাত্রীদের কোভ্যাক্সিন টিকা দেওয়া হচ্ছে।’’ হুগলির ৩০টি স্কুলে, হাওড়া জেলার ১৪টি ব্লকেও টিকাকরণ হয়েছে। দশম শ্রেণির পড়ুয়া সৌমিক দাস জানায়, ‘‘ প্রথমে টিকা নিতে আসার আগে ভয় করছিল। টিকা নেওয়ার পর এখন ঠিক আছি। এত দিন স্কুলে আসতে ভয় লাগত। এখন ভরসা পাচ্ছি।’’
তবে এই নাবালক নাবালিকাদের টিকা দেওয়ার সঙ্গে কোথাও পড়ুয়াদের দেওয়া হচ্ছে চকলেট, কোথাও আবার দেওয়া হচ্ছে গোলাপ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর ব্লকে সুন্দরবন জনকল্যাণ সঙ্ঘ বিদ্যানিকেতন হাইস্কুলে সকল পড়ুয়াদের টিকাকরণের পরে গোলাপ তুলে দেওয়া হয়। আবার মেদিনীপুর শহরে টিকা নিতে আসা পড়ুয়াদের চকলেট দেওয়া হয়েছে পুরসভার তরফে।