দেশের যুব সমাজের কাছে এখন একটাই সমস্যা, এখন ভারতের কোথাও চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের বড় বড় মেট্রো শহরগুলিতেও চাকরির আকাল। ফলে বাধ্য হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন ভারতের যুবকরা। মোদী জমানায় সব থেকে খারাপ অবস্থা বর্তমানে চাকরির ক্ষেত্রে। যখন ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসেছিলেন তখন ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই প্রতিশ্রুতি তো দূরে থাক, বরং দেখা গিয়েছে বেকারত্বের হার আগের থেকে দ্বিগুন বা তারও বেশি হয়ে গিয়েছে মোদীর ৭ বছরে।
মোদী জমানার শেষ চার বছরে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ শতাংশ। আর এই তথ্য কিন্তু কোন প্রাইভেট সংস্থা কিংবা কোন বিদেশী সংস্থা দিচ্ছে না। বরং মোদি সরকারের কেন্দ্রীয় সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর একটি রিপোর্টে এই কথাই উঠে এসেছে। অনেকেই মনে করছেন, গ্রাউন্ড রিয়েলিটি হয়তো এর থেকেও খারাপ। আত্মহত্যার পরিসংখ্যানটাও সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো।
মোদীর শেষ ৪ বছরে যেখানে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসে মোদি বলেছিলেন ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের ইকোনমি বানাবেন, সেখানে দেশের জিডিপি বর্তমানে একেবারে তলানিতে চলে গেছে। গত কোয়ার্টারে তো বাংলাদেশের মত একটা দেশ ভারতকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে, যা ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। মোদীর আচ্ছে দিনে বেকার যুবকের আত্মহত্যার পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী যেখানে ২০১৬ সালে যেখানে বেকারত্বের জন্য আত্মহত্যা করেছিলেন ২,২৯৮ জন, সেখানেই ২০১৯ সালে বেকারত্বের জন্য আত্মহত্যার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৮৫১ তে। আর এই আত্মহত্যার পরিমাণ সবথেকে বেশি কিন্তু কোন বিরোধী শাসিত রাজ্যে নয়, বরং এই আত্মহত্যা সবথেকে বেশি ঘটেছে একটি বিজেপি শাসিত রাজ্যে। রাজ্যটির নাম কর্ণাটক, ভারতের সবথেকে বড় আইটি সেক্টর ব্যাঙ্গালোর অবস্থিত। ওই রাজ্যে গেরুয়া সরকার থাকলেও ৫৫৩ জনকে চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে। তারপরে আসে মহারাষ্ট্র এবং তামিলনাড়ু।
কিন্তু বিজেপি যে রাজ্যে সব থেকে বেশি কর্মসংস্থানের দাবি জানায়, বেকারত্বের হার বেশি বলে গলা ফাটায়, যে রাজ্যে ৩৪ বছর ধরে শাসন করা একটি দল সবার জন্য চাকরির খামের দাবিতে নির্বাচন লড়তে চলে আসে, সেই পশ্চিমবঙ্গেই কিন্তু চিত্রটা একেবারেই উল্টো। যেখানে ২০১৬ সালে চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন ১০৯ জন, সেখানেই ২০১৯ সালে সংখ্যাটা মাত্র ৪০। এবং যা ট্রেন্ড তাতে আরো কমতে পারে এই সংখ্যাটা। ২০১৪ সালে অচ্ছে দিনের একটি ‘সোনালী স্বপ্ন’ দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী হবার পরে, এই আচ্ছে দিন কেমন একটা হারিয়ে গেলো। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগেই, ভারতের বেকারত্বের জন্য আত্মহত্যার হার বেড়েছে ২৪ শতাংশ। এটি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির পরে রিপোর্ট আসে, তাতে হয়তো এই সংখ্যাটা আরো বাড়বে। হয়তো অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের হাত ধরে কোন না কোন দিন ভারত ৫ ট্রিলিয়ন ইকোনমিতে পরিণত হবে। কিন্তু এই অপেক্ষা এর কতদিনের সেটাই এখন দেখার।