অফবিট

বদলে গেল বাস, পুরনো বাসকেই বদলে ফেলা হলো মহিলা শৌচাগারে

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি – বাইরে বেরোলেই মহিলাদের শৌচালয় খোঁজা মাঝে মাঝেই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ হলে যাদের ধারণ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় তাদের পক্ষেতো বেশি মুশকিল হয়। এই সমস্ত কথা মাথায় রেখেই পুনেতে পুরনো বাসের কাঠামোকে বদলে দেওয়া হলো মহিলা শৌচাগারে। সোনাম নন্দাওয়ার, পুনের এক কর্মরতা মহিলা। যিনি তার অফিস থেকে ফেরার সময় এমনই এক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এ সমস্যা হয়তো প্রতি মহিলারই প্রতিমুহূর্তে হচ্ছে, কিন্তু বিষয়টি খুবই নিজস্ব বলে তা খুব একটা সকলের সামনে বলতে মহিলারা লজ্জা পান। তবে যা স্বাভাবিক, তা বলতে লজ্জা কিসের? যদি বা শৌচালয় খুঁজে পাওয়া যায়, তারপরেও আর একটা প্রশ্ন মাথায় থেকেই যায় শৌচালয়টি পরিষ্কার তো? কারণ নোংরা শৌচাগার ব্যবহার করলে মহিলাদের নানান রকম রোগের সম্মুখীন হতে হয়।

এমনই শৌচালয় খুঁজতে খুঁজতে সোনাম একটি গোলাপি রঙের বাস দেখতে পান। তিনি জানান, “আমি গোলাপি বাসটি দেখে একেবারে অবাক হয়ে যাই, এই বাসটি শুধুমাত্র মহিলাদের শৌচালয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়, শৌচালয়টির ভেতরের নানান রকম নিত্যনতুন ব্যবস্থা এবং ভীষণ পরিষ্কার।” এই বাসটিকে শৌচালয়ের মোড়কে তৈরি করেছেন উল্কা সদল্কার, এবং রাজিব খের। এই দুই যুবকের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ‘সারাপ্লাস্ট প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি’, ২০০৬ সাল থেকে স্যানিটেশন বিভাগে কাজ করে চলেছেন। এখনো পর্যন্ত ১২ টি বাসকে তারা এরকম শৌচালয়ের রূপ দিয়েছেন। শৌচালয় নাম দিয়েছেন ‘ti’ টয়লেট, যার মারাঠি ভাষায় অর্থ হল ‘she’ বা ‘her’. তৈরি হওয়ার পর থেকে শৌচালয় গুলি কিছু না হলেও এক লক্ষ বার ব্যবহার হয়ে গেছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় প্রতিদিন ৩০০ বার করে শৌচালয় ব্যবহৃত।

এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, শৌচালয়গুলির প্রয়োজনীয়তা কত ছিল। বাসের ভিতরে মহিলাদের প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখেই শৌচালয়গুলি বানানো হয়েছে। ভেতরে রয়েছে বেসিন, সাবান এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন। শুধু তাই নয়, মায়েদের জন্য রয়েছে ডায়পার পরিবর্তন করার ব্যবস্থা এবং স্তনপান করানোর জায়গা। শুধু তাই নয়, কোন জরুরী কালীন অবস্থায় বাথরুমের ভেতর থেকেই একটা সুইচ অন করার ব্যবস্থা রয়েছে। ভেতরে যথেষ্ট পরিমাণে সূর্যের আলো প্রবেশের ব্যবস্থা আছে। তবে বর্ষাকালে চার মাস যখন সূর্যালোক পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় না, তখন উপযুক্ত ইলেকট্রিসিটির ব্যবস্থা রয়েছে। শৌচালয়টি ব্যবহার করতে গেলে আপনাকে মাত্র ৫ টাকা দিতে হবে। ৪৫ বছর বয়সী রাজীব যিনি পুনে থেকে এম.বি.এ পড়াশোনা করেছেন। তারপরে তিনি তার চাকরি জীবন শুরু করে দিয়েছিলেন একটি কর্পোরেট জগতের স্যানিটেশন সেক্টরে। তারপর সরকার থেকে যখন স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করা হয়, তখন তাদের ভাবনা চিন্তা অনেকখানি বাস্তবে রূপায়িত করতে সাহায্য করেছিল। তাদের এখন উদ্দেশ্য ১০০০ পড়ে থাকা এবং ভেঙে যাওয়া ও অব্যবহৃত বাসকে শৌচালয় রূপায়িত করা। এই ধরনের উদ্যোগকে সত্যি কুর্নিশ জানাতে হয়। আলাদা করে মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে, এমন উদ্যোগ যথেষ্ট প্রশংসনীয়।

Related Articles

Back to top button