আজ রথযাত্রা। করোনা ভাইরাস এর থাবা পড়েছে রথযাত্রাতেও। আজ হয়তো বাচ্চারা রথ সাজিয়ে রাস্তায় বেরোবে না। তাদের ভরসা করতে হবে ওই এক টুকরো ছাদ, বারান্দা, উঠোন কিংবা বাগান এর উপর। রথযাত্রার জন্য মূলত বিখ্যাত পুরী। কিন্তু ও পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গাতেই ধুমধাম করে রথযাত্রার পালিত হয়। এ বছরটা বাদ দিয়ে যদি বিগত বছর গুলোর দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যায় উড়িষ্যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ কোন অংশে কম নয়। পশ্চিমবঙ্গের রাজবাড়ির অভাব নেই। পুরনো দিনের রাজা রাজড়ারা রথ টানার উৎসব করতেন।
মায়াপুর
বিখ্যাত রথ উৎসব পালিত হয় মায়াপুরে। এই মন্দিরের বিশেষত্ব হলো জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এই মন্দিরে আসেন রথে চড়ে। এ প্রসঙ্গে, একটি গল্পগাঁথা প্রচলিত রয়েছে। মায়াপুর এবং রাজাপুর পাশাপাশি দুটি গ্রাম। রাজাপুরের বেশিরভাগ বাসিন্দা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী। প্রায় পাঁচশো বছর আগে এক পুরোহিত স্বপ্নে পান, রাজাপুর থেকে মায়াপুরে যাবেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। আবার সেখান থেকে তারা রথে চড়ে ফিরে আসবেন। এই প্রথা মেনেই প্রতিবছর রথযাত্রা উৎসব পালিত হয় মায়াপুরে।
মাহেশ
পশ্চিমবঙ্গের রথযাত্রার মানেই মাহেশের রথ যাত্রার নাম উঠে আসবেই। শোনা যায়, ১৩০০ খ্রিস্টাব্দের কোনো এক সময় ধ্রুবনন্দ ব্রহ্মচারী উৎসবের সূচনা করেছিলেন। তা প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো এই উৎসব। ১৩৯৬ সাল থেকেই রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে রথের ওজন ১২৫ টন। উচ্চতা ৫০ ফুট। উৎসব উপলক্ষে সামনের মাঠে বিশাল মেলা বসে। কথিত আছে, মাহেশের রথের মাথায় নাকি একটি নীলকন্ঠ পাখি এসে বসে। পুরীতে রথযাত্রা শুরু হলে সে উড়ে যায়। তখনই নাকি রথটি চলতে শুরু করে। আর অদ্ভুত ব্যাপার এই ঘটনাটি একমাত্র পুরোহিতই শুধু দেখতে পান।
গুপ্তিপাড়া
পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাচীন এলাকা হল গুপ্তিপাড়া। ১৭৪০ সালে এই রথ উৎসব শুরু করেন মধুসূদানন্দ। এখানে রথ উৎসবের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ৪০ কুইন্টাল খাবার ভান্ডার লুটের প্রথা। এখানকার রথের উচ্চতা ৩৬ ফুট। এখানে শক্ত এবং বৈষ্ণব দুই ধর্মাবলম্বী মানুষের একসঙ্গে বসবাস। গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবন চন্দ্র মন্দির থেকে ১২ চাকার রথ বের হয়েছিল জগন্নাথ দেবের পিসির বাড়ির উদ্দেশ্যে। ১৮৭৩ সালে একটি বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার পরে সেই রথের চাকার সংখ্যা ক্রমশ কমিয়ে দেওয়া হয়।
আমোদপুর
আমোদপুর হল বর্ধমানের মেমারি অঞ্চলের ছোট্ট গ্রাম। গ্রামের জমিদার পরিবারের দেবতা রাধামাধব। গ্রামের জমিদার পরিবার প্রতিবছর ধুমধাম করে রথ যাত্রার আয়োজন করেন। রথের মধ্যে থাকেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা এবং থাকেন রাধামাধব। রথযাত্রার দিন সকালবেলা প্রথমে রথে চড়ে এই দেব দেবীগণ দুর্গাবাড়ি যান তারপরে সারা গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন।
রাজবলহাট
হুগলির রাজবলহাট তাঁতের কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। তবে এখানে ধুমধাম করে রথযাত্রার পালিত হয়। আমোদপুর এর মত এখানেও রথ এর মধ্যে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা থাকেন না, থাকেন রাধাকৃষ্ণ।
মহিষাদল এর রথ
পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল এর রথ যাত্রা খুবই বিখ্যাত। এই রথযাত্রা প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। ১৭৭৬ সালে মহিষাদল বাড়ীর জমিদার আনন্দলালের স্ত্রী জানকী এই উৎসবের সূচনা করেছিলেন।