দেশবাসী যখন আগামী ভ্যালেন্টাইন্স ডে সেলিব্রেশন নিয়ে উচ্ছসিত, ঠিক সময় মনে পড়ে যায়, আজ থেকে প্রায় আট বছর আগের এক ঘটনা, যা সকল দেশবাসীকে একবার হলেও নাড়া দিয়েছিল। ঘৃণায়, ক্ষোভে ফেঁটে পড়েছিল তারা। এবং যার বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বারেবারে পার পেয়ে যাচ্ছে সেই নরখাদকের দল!
সাল ২০১২। রাজধানী দিল্লি। ১৬ই ডিসেম্বর। প্রচন্ড ঠান্ডা। চারদিক একরকম নিঝুম। নিস্তব্ধতা যেন গ্রাস করেছিল সবকিছু! বাসে বসে আছে একটি বাচ্চা মেয়ে। মাত্র ২৩ বছর বয়স। পেশাগতভাবে নিজেকে ফিসিওথেরাফিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু ঘটে গেল অন্য কিছু। বাসে চার নরখাদক মিলে ধর্ষণ করল নির্ভয়াকে। লোহার রড দিয়ে ক্ষত বিক্ষত হয়ে তার যৌনাঙ্গ। এর পর ছুড়ে ফেলে দিল তারা, চলন্ত বাস থেকে। তার বয়ফ্রেন্ড সেদিন রক্ষা করতে পারেনি তাকে। তাকেও তাদের নিষ্ঠুরতার শিকার হতে হয়েছিল। তফাৎ শুধু একটাই: ছেলেটি প্রাণে বেঁচে যায়। আর মেয়েটি দীর্ঘ বারোদিন লড়াই করবার পর মারা যায়, সিঙ্গাপুরের একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে। একমাত্র মেয়ের বাবা মায়ের জগৎ রিক্ত হয়ে যায়। তাদের মেয়ে নির্ভয়াকে নিয়ে সকল স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা এক লহমায় ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। নিয়তির এক নিষ্ঠুর পরিহাস! এই মর্মান্তিক ঘটনার পর কেটে গেছে অনেকগুলো বছর।
কিন্তু নির্ভয়ার মা আজও বিচার পাননি। প্রতিবার পিছিয়ে যাচ্ছে তাদের শাস্তির দিন। প্রথমে ২২শে জানুয়ারী। এর পর ১ লা ফেব্রুয়ারি। উল্লেখ্য নির্ভয়ার মা কোন এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে যে আসামী পক্ষের উকিল ওনাকে ওপেন চ্যালেঞ্জ করেছেন যে ওই চারজনের কোনো ভাবেই “ফাঁসি হবে না”। তবুও তিনি হাল ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন শেষ রক্ত বিন্দু পর্যন্ত লড়বেন। কিন্তু কি বলছে আমাদের গণতন্ত্র। ওরা শাস্তি পাবে কি? না ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে? এই সকল প্রশ্নের উত্তর আজ কুয়াশায় ঢাকা। বিচারের বাণী তাই আজও কাঁদছে! মিথ্যের কালো মেঘ সরিয়ে কবে সত্যের সূর্য উঠবে, এখন তারই অপেক্ষায়!!
– কুণাল রায়