সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ সামনে আসায় ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামি লিগ এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও এই বিষয়ে নানা পোস্ট ভাইরাল হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের মুখ্য উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে,“ধর্মীয় কারণে কাউকে সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো তথ্য ভুয়ো”
ভুয়ো উদ্ধৃতির অভিযোগ
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলমগির চৌধুরী নাকি বলেছিলেন—
_“বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ, তাই পুলিশ বা সরকারি চাকরিতে মুসলিমদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।”_
তবে বাংলাদেশ সরকার এই উদ্ধৃতিকে পুরোপুরি ভুয়ো বলে উল্লেখ করেছে।
৪৩তম বিসিএসে সংখ্যালঘু প্রার্থীদের বাদ পড়া
৪৩তম বিসিএস নিয়োগ নিয়ে আরও বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। ২০২৫ সালের ১৫ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে একটি গ্যাজেট প্রকাশ করা হয়েছিল, যেখানে ১,৮৯৬ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। তবে ৩০ ডিসেম্বর সেই গ্যাজেট বাতিল করে নতুন একটি গ্যাজেট প্রকাশিত হয়, যেখানে ১৬৮ জন প্রার্থীর নাম বাদ দেওয়া হয়।
‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’-এর দাবি, বাদ পড়া ১৬৮ জনের মধ্যে ৭১ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাদের মতে, এই পদক্ষেপ স্পষ্টতই ধর্মীয় বৈষম্যের উদাহরণ। পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অবিলম্বে এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে সংখ্যালঘু প্রার্থীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে নতুন গ্যাজেট প্রকাশ করা হোক।
বাদ পড়া প্রার্থীদের প্রতিবাদ
নতুন গ্যাজেট থেকে নাম বাদ পড়ার কারণ জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রকে হাজির হয়েছিলেন বাদ পড়া ১৬৮ জন প্রার্থী। এর আগে অক্টোবরে প্রকাশিত গ্যাজেট থেকে আরও ৯৯ জনের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে মোট ২৬৭ জন প্রার্থী বাদ পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, সরকারের তরফে কোনো পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
বিসিএস গ্যাজেট থেকে বাদ পড়ার অতীত পরিসংখ্যান
এই পরিমাণ প্রার্থী আগে কখনও একসঙ্গে বাদ পড়েনি। তথ্য অনুযায়ী—
– ৪১তম বিসিএস থেকে বাদ পড়েছিলেন ৬৭ জন
– ৪০তম থেকে ৩৪ জন
– ৩৭তম থেকে ৬১ জন
– ৩৮তম থেকে ৭৫ জন
– ৩৬তম থেকে ৩৮ জন
কিন্তু এবার ৪৩তম বিসিএসে মোট ২৬৭ জন প্রার্থী বাদ পড়েছেন, যা অভূতপূর্ব।
সংক্ষেপে
এই ঘটনায় বাংলাদেশে সরকারি নিয়োগ প্রক্রিয়া ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠছে, এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক এবং ধর্মীয় বৈষম্য দূর করে যোগ্য প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হোক। সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও নজর পড়েছে।