Trending

Video

Shorts

whatsapp [#128] Created with Sketch.

Join

Follow

রেলের মহিলা কামরায় ‘তু মিলে, দিল খিলে’ গানে অসাধরন নাচল এক কিন্নর, প্রশংসনীয় হলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়

তাঁদের দেখা যায় তালি বাজিয়ে নবজাতকের আয়ু কামনা করতে। দু’মুঠো অন্নের জন্য কখনো বা তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন ট্রাফিক সিগন্যালে, কখনো বা তাঁরা হাত পাতেন রেলের কামরায়। তাঁরা, সমাজে যাঁদের বিভিন্ন…

Avatar

তাঁদের দেখা যায় তালি বাজিয়ে নবজাতকের আয়ু কামনা করতে। দু’মুঠো অন্নের জন্য কখনো বা তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন ট্রাফিক সিগন্যালে, কখনো বা তাঁরা হাত পাতেন রেলের কামরায়। তাঁরা, সমাজে যাঁদের বিভিন্ন নাম কিন্নর, হিজড়া ও আরো অনেক কিছু। সম্প্রতি এই সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধি রেলের মহিলা কামরায় বলিউডের জনপ্রিয় হিন্দি গান ‘তু মিলে, দিল খিলে’-এর সাথে অপূর্ব নাচ পরিবেশন করে তাক লাগিয়ে দিলেন মহিলা যাত্রীদের। মহিলা যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন তাঁর নাচের ভিডিও তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন। এই অপূর্ব ডান্স ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় মুহূর্তে ভাইরাল হয়েছে। প্রত্যেকে জানতে চেয়েছেন ‘অনামিকা’ বৃহন্নলার পরিচয়। কিন্তু এই অসাধারণ নৃত্যশিল্পীর নাম এখনও জানা যায়নি। এমনকি এই ভিডিওটি কোন স্থানের লোকাল ট্রেনে তোলা হয়েছে, তাও জানা যায়নি। তবে ‘বৃহন্নলা’র নাচ দেখে অনায়াসেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি যথেষ্ট ট্রেইনড ডান্সার।

প্রাচীন কাল থেকে তৃতীয় লিঙ্গের অস্তিত্ব রয়েছে সমাজে। বহু মানুষের ধারণা, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা শৈশব থেকেই আকৃষ্ট হন হিজড়া সম্প্রদায়ের বাজানো তালির প্রতি। কিন্তু ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রাচীন সমাজে যথেষ্ট সম্মানজনক স্হান দেওয়া হতো। তাঁরা কখনো সামাজিক বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন, কখনো তাঁরা অন্দরমহলের প্রহরী নিযুক্ত হতেন। এমনকি ইতিহাস ঘাঁটলে তাঁদের গুপ্তচর বৃত্তিতে নিয়োগ করার কথাও জানতে পারা যায়। বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের বলা হত কিন্নর। ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনের সময় উৎপত্তি ঘটে ‘হিজড়া’ বৃত্তির। তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা অনেকেই এই বৃত্তি অবলম্বন করেন। সেই সময় এই বৃত্তি ছিল অত্যন্ত সম্মানজনক। ‘হিজড়া’রা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মানুষের মঙ্গল কামনা করতেন। তাঁদের দেওয়া হতো বহু উপঢৌকন। কিন্তু সমাজের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ‘হিজড়া’দের গুরুত্ব কমতে থাকে। লোপ পায় কিন্নর প্রথা। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা ক্রমশ একঘরে হয়ে পড়েন। এমনকি কোন পরিবারে তৃতীয় লিঙ্গের সন্তান জন্মালে তাকে অপয়া বলে পরিত্যাগ করা শুরু হয়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য চাকুরি বা শিক্ষার দরজা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁরা ‘হিজড়া’ বৃত্তি অবলম্বন করা শুরু করেন।

সব খবর মোবাইলে পেতে 👉🏻

Join Now

এই মুহূর্তে ‘বৃহন্নলা’দের সামাজিক অবস্থা অতীব করুণ হয়ে পড়েছে। ‘হিজড়া’রা ইদানিং কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে সেভাবে ডাক পান না। নবজাতকের সন্ধান পেয়ে তাদের বাড়ি গিয়ে মঙ্গলকামনা করলেও নবজাতকের পরিবারের কাছ থেকে সামান্য টাকা বা সিধে উপার্জন হয়। অপর কোন জীবিকার রাস্তা না থাকায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অনেকেই বাধ‍্য হন ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করতে। কিন্তু ভিক্ষা করতে গেলেও অপমানিত হতে হয় তাঁদের। এই কারণে অনেকেই দেহব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য হন। এই মুহূর্তে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য গঠিত হয়েছে ‘অমেথিয়া ট্রাস্ট’। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিজেদের প্রচেষ্টায় এই সংস্থা গঠন করা হয়েছে। ‘অমেথিয়া ট্রাস্ট’-এর প্রধান অপর্ণা লড়াই করছেন তাঁর মতো বহু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার অর্জনের জন্য। আরো বেশ কিছু সংস্থা সচেষ্ট হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের শিক্ষাবিস্তার ও জীবিকা নিয়ে। সমাজ ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে, তালি বাজিয়ে মঙ্গল কামনা করা ‘বৃহন্নলা’র দল অপয়া নন, তাঁরাও মানুষ। তাঁরাও এই পৃথিবীর ভূমিসন্তান।

About Author