অফবিট

শরীরের নানা জায়গায় ভেঙে গেছে হাড়, হুইল চেয়ারে বসেই স্বপ্নপূরণ এক সাহসী কন্যার

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি – মনের জোর থাকলে বিশ্বের সমস্ত বাধা বিপত্তি কি জয় করা যায়। শরীরের নানা জায়গায় ভেঙে গেছে হাড়। তবুও মনের জোরে এসে তার স্বপ্ন পূরণ করেছে। মাত্র ২৪ বছর বয়সে এত মনের জোর সে পেল কোথা থেকে? ফাতিমা আসলা ২০ বছর বয়স অবধি তার শরীরের ৫০ বার তার হাত ও পায়ের হাড় ভেঙে যায়। বারংবার সেই হাড় জোড়া লাগানোর চেষ্টা জন্য চলতে থাকে সার্জারি। অন্যান্য সাধারণ বাচ্চাদের মত ফাতিমা কজিকোদের পুনুর গ্রামে একটি সরকারি স্কুলে ভর্তি হন। প্রতিদিন তার মা তাকে কাঁধে করে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসতেন। তার মা-বাবা স্কুলে তার জন্য বসার একটি আলাদা চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন কারণ তিনি অন্যান্য বাচ্চাদের মত কাঠের বেঞ্চে বসতে পারতেন না। ছোটবেলা থেকেই একটা ভালোবাসার পরিবেশে তিনি বড় হতে থাকেন চারপাশে থাকা তার বাবা-মা তার শিক্ষক শিক্ষিকা বন্ধুবান্ধব প্রত্যেকে তাকে ভীষণ ভালোবাসতেন।

১২ বছর বয়সের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় ফাতিমা ঠিক করেন তার জীবনকে একটু পরিবর্তন করবেন। মনে মনে স্থির করেন তার শারীরিক অক্ষমতা কিছুতেই তার স্বপ্ন পূরণে বাঁধা হতে পারে না। তিনি মনকে বোঝাতে থাকেন, তিনি সবকিছু করতে পারেন। দশম শ্রেণীতে ৯০% নাম্বার পাওয়ার পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন পরবর্তীকালে বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করবেন। কিন্তু তার শারীরিক অক্ষমতার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে বারণ করেন। কারণ বিজ্ঞান শাখায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা যা, হয়তো ফাতিমার উপর শারীরিকভাবে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে। তারপর বার বার এই হাড় ভেঙে যাওয়া এবং তারপরে সার্জারি হওয়ার ঘটনার জন্য তার পক্ষে বিশাল সিলেবাস গ্রহণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছিল।

সমস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কে জয় করে এ গ্রাজুয়েশনে ফাতেমা ৮৫ % নম্বর পায়। কিন্তু তারপরে সে যখন একটি এন্ট্রান্স পরীক্ষার জন্য হুইলচেয়ারে করে পরীক্ষা দিতে ঢোকেন, সেই মুহূর্তে তাকে জানানো হয়, সে পরীক্ষা দেওয়ার উপযুক্ত নয়। সেই মুহূর্তে তিনি একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু তিনি সত্যি সত্যিই ভেঙে পড়েননি। বাড়িতে এসে হুইল চেয়ার ছেড়ে ক্রাচের সাহায্যে হাঁটা অভ্যাস করেন। যদিও এটি তার শরীরের জন্য খুবই বিপদজনক ছিল। বর্তমানে সে কোট্টাম মেডিকেল কলেজের একজন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী।

শুধু তাই নয়, তার একটি সুন্দর ইউটিউব চ্যানেল আছে যার নাম Dream Beyond Infinity. যেখানে তিনি তার ভাবনা চিন্তা তার আদর্শ সব কিছু মানুষের সঙ্গে শেয়ার করে থাকেন। তার এই ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার এর সংখ্যা ৫০০০ বেশী। ফাতিমা বলেন, “শারীরিক অক্ষমতা মানে সমস্ত স্বপ্ন শেষ হয়ে যাওয়া নয়, এর মানে হল স্বপ্নের কাছে পৌঁছনো সাধারণের তুলনায় একটু কষ্টকর।” ফতিমার মত কন্যারাই তো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। শত কষ্টের মধ্যেও শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে কিভাবে নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে হয়, তার এক অন্যতম দৃষ্টান্ত ফাতিমা।

Related Articles

Back to top button