যারা ৯০ দশকের সময় শৈশব অথবা কৈশোরের সময় অথবা যৌবন কাটিয়েছেন তারা জানেন কলাপাতায় করে খাওয়ার মাধুর্য কি। সেই সময় আমাদের গ্রামের দিকে বা বিভিন্ন বাড়িতে বিভিন্ন পুজোর খুব প্রচলন ছিল। মাঝেমধ্যেই প্রায়ই বাড়িতে পুজো লেগে থাকত, বিশেষ করে নারায়ণ পূজার অর্থাৎ সত্যনারায়ন পুজো এবং শনি পূজার প্রচলন ছিল। সেই সময় কারোর বাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ এলেই সেই বাড়িতে কলাপাতায় করে খাওয়ার দেওয়া হতো। প্রসাদ পরিবেশন তো হতোই পাশাপাশি যেকোনো ধরনের নিরামিষ খাওয়ার কলার পাতা করে দেওয়া হতো। ভেবে দেখুন একবার, গরম গরম খিচুড়ি কলার পাতার মধ্যে পড়ছে একদিক থেকে বেয়ে বেয়ে চলে যাচ্ছে আপনি আবার সাপটা সাপটা তা মুখে তুলছেন। চলুন এবার আসি কলা পাতায় খাওয়ার উপকারিতা প্রসঙ্গ।
- কলাপাতায় পলিফেনল নামে এর রকমের পদার্থ থাকে যা গ্রিন-টি-তেও থাকে। শরীরের জন্য খুবই ভালো কলাপাতা। কলাপাতা নিজেই একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, তাই এই পাতা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
- এছাড়াও কলাপাতায় রয়েছে হেমিসেলুলোস, লিগনিন, এবং প্রোটিন। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই পাতার মধ্যে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তার শরীর থেকে টক্সিক বের হতে সাহায্য করে। আপনি হয়তো জানেন কেরালার বহু মানুষ কলার পাতা ব্যবহার করেন আয়ুর্বেদিক ত্বক পরিচর্যার ক্ষেত্রে।
- কলা পাতায় করে যদি আপনি রোজ খাওয়া-দাওয়া করেন তবে আপনার শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার বৃদ্ধি পাবে। এখনকার বিয়ে বাড়িতে অবশ্য কলার পাতা করে খাবার পরিবেশন করা হয় না, কিন্তু আপনি চাইলে আপনার বিবাহ অনুষ্ঠানে কলাপাতার আয়োজন করতে পারেন।
- অবশ্য এ কথা সত্য যে আগেকার দিনে আমাদের চারিদিকে এত ফ্ল্যাট তৈরি হয়নি এতো বাড়ি তৈরি হয়নি ফলে মানুষ অনেক কলা গাছের চাষ করত। এখন চারিদিকে কলাগাছ দেখতেই পাওয়া যায় না। যারা গ্রামে থাকেন বা যারা মফস্বল এরিয়াতে থাকেন তাদের বাড়িতে হয়তো কলাগাছ আপনি দেখতে পারবেন। এটাও একটা কারণ এখনকার দিনে কলায় পাতা করে খাবার না খাওয়ার। তাই সম্ভব হলে অবশ্যই চারা গাছ রোপন করুন, গাছ লাগান।
- কলাপাতা করে খাওয়ার আরেকটা দারুন ব্যাপার হল যে এই পাতার উপরে একটা মোমের মতন আস্তরণ থাকে যা খাবারের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এছাড়াও আরেকটি দারুন দিক হলো কলাপাতা কিন্তু পচনশীল সুতরাং ফেলে দেওয়ার পরে তা দূষণ ঘটায় না।