শ্রেয়া চ্যাটার্জি – করোনা যা করতে পারেনি শেষমেষ আমফান করে দেখালো। এটাই হয়তো দেখার ছিল। কিন্তু আর কতভাবে পরিবেশ আমাদেরকে এইভাবে প্যাঁচে ফেলবে? একেই লকডাউনের জন্য বই-খাতা বিক্রি প্রায় বন্ধ। সারাক্ষণ কলেজের ছেলে মেয়েদের ভর্তি বইপাড়ায় নিস্তব্ধতা নেমে এসেছিল। তার মধ্যে বিধ্বংসী ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে দোকানপাট, ভেসে গিয়েছে বই-খাতা। রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে সহায়িকা, প্রশ্নবিচিত্রা, গল্পের বই, থেকে শুরু করে দুষ্প্রাপ্য প্রচুর বই।
কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা হিসাব করা এখনো সম্ভব হয়নি, তবে ক্ষতির পরিমাণটা যে কিছু কম না তা ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। দোকানদাররা এসে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন বই বাঁচাতে। জলের তলায় ভিজে বই একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। বই প্রেমিক মানুষের এই সমস্ত ছবি দেখে বুকের ভেতরটা যেন দলা পাকিয়ে উঠছে কান্নায়। বই না পাওয়ার কান্না এবং যে সমস্ত মানুষের জীবন-জীবিকা এই সমস্ত বই বেঁচে তারা যে কতখানি ক্ষতির মুখে পড়লেন এটাই এখন বড় বেশি ভাবনা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একে তো করোনা ভাইরাস এর জন্য দোকানপাট বন্ধ, তার উপরে এমন ঘুর্নিঝড়ের তান্ডব। সবমিলিয়ে মানুষগুলো বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছে। আর কলেজ স্ট্রিটের এমন ভয়ঙ্কর চিত্র যা ঘরে বসে মানুষগুলোকে বড্ড কাঁদাচ্ছে। বহুদিন পরে কলকাতা শহরে এমন ভয়ঙ্কর ঝড়ের সাক্ষী রইল। উপকূলবর্তী এলাকার মানুষ এমন ঝড় প্রায়শই প্রত্যক্ষ করেন। তারা মানসিক ভাবে অনেকটাই অভ্যস্ত এই বিষয়ে। কিন্তু খোদ কলকাতার উপর দিয়ে যে এমন ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালাবে, তা সত্যি কখনই মানুষ বিশ্বাস করতে পারেননি।
ঝড়ের পরের দিনে কলকাতা শহরকে সহজে চেনা যাচ্ছেনা। জায়গায় জায়গায় পড়ে রয়েছে বৃহৎ বৃহৎ গাছ, ছিড়ে গেছে ইলেকট্রিকের তার। বাংলায় মৃত্যু হয়েছে ৭০ জনেরও বেশি। এ এক অচেনা কলকাতা। তবে সবকিছুর পরেও ঈশ্বরের কাছে আমাদের প্রার্থনা রইল আমফানের ক্ষত সেরে যাক, করোনা ভাইরাস চলে যাক। কল্লোলিনি কলকাতা আবার আগের মতন হয়ে উঠুক। কলেজস্ট্রিট ফিরে আসুক চেনা ছন্দে।