অফবিট

আজ বিশ্ব নারী দিবস, জেনে নিন কিছু সাহসী নারীদের সত্য গল্প

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি : প্রাচীন ভারতীয় সমাজ সংগঠন এবং জনজীবনের বিভিন্ন দিকে ভারতীয় নারীর অবস্থান সংক্রান্ত বিষয়টি প্রাচীন সাহিত্য এবং ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে বিশেষ স্থান অধিকার করেছে। ভারতের প্রথম সভ্যতা সিন্ধু সভ্যতা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সিন্ধু সভ্যতায় কোন লিপি সেইভাবে পাওয়া না গেলেও এই সভ্যতা থেকে প্রাপ্ত নানান রকম মূর্তি প্রমাণ করে এখানে মাতৃ দেবতার আধিক্য ছিল বেশি। তারপরে ঋক বৈদিক যুগএ অবশ্য পিতৃতান্ত্রিক ছিল। ঋক বৈদিক যুগে নারীর স্বাধীনতা পদক তখন সঙ্গী নির্বাচনে নারীদের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল এই সময় অনেক নারী দার্শনিকের উল্লেখ পাওয়া যায়। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নারী নাও নানান রকম যাগ-যজ্ঞ অংশগ্রহণ করতে পারত এসময় পুরুষদের একজন স্ত্রী এর রীতি প্রচলিত ছিল তবে পুরুষের ক্ষেত্রে একাধিক বিবাহ একেবারে ছিল না এ কথা বলা যায় না। এ সভায় কন্যাসন্তান কাঙ্খিত না হলেও অবহেলিত ছিল না। বৈদিক সাহিত্যে গার্গী, মৈত্রী, ঘোষা, অপালা, লোপামুদ্রা প্রভৃতির নারী দার্শনিক পণ্ডিতগণের উল্লেখ থেকে বোঝা যায়। তখনও পর্যন্ত পূর্ববর্তী ঐতিহ্য ওমন থেকে গেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে নারীরা যখন সংসারের অভ্যন্তরে বা গৃহকোণে ভূমিকা পালন করতে শুরু করল, তখনই নারীদের অবনমন শুরু হলো। পরবর্তী বৈদিক যুগে কন্যাসন্তানকে সমাজের অভিশাপ বলে গণ্য করা হতো।

আরও পড়ুন : শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ৩৫ বছর বয়সী যুবতী এখন অটো ড্রাইভার

এই সময় নারী শুধু ভোগ্যবস্তু হিসেবে বিবেচিত হতো। দৈনন্দিন জীবনে তাকে নানা ভাবে অসম্মান লাঞ্ছনার শিকার হতে হতো। স্বামীর উচ্ছিষ্ট খাবার নারী খেতে হতো। পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়াই নারীর একমাত্র কাজ। একটি মেয়ে প্রথম জীবনে তার পিতার অধীনে, যৌবনে তার স্বামীর এবং বার্ধক্যে তার পুত্রের অধীনে থাকবে। স্বামীর কোনো কারণে মৃত্যু হলে তাকে দেওরের সঙ্গে সহবাস করতে হতো শুধুমাত্র পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য। যা সত্যিই একটি নারীর কাছে যথেষ্ট অপমানের। পরবর্তীকালে অর্থাৎ বৌদ্ধ, জৈন ধর্মে সমাজের খানিকটা উন্নতি হলেও নারীদের অবস্থা সেইভাবে উন্নতি হয়নি। তবে তার পরবর্তীকালে অর্থাৎ মৌর্য যুগে নারী নির্যাতন ছিল নিষিদ্ধ। এই সময় নারীদের সম্মান রক্ষার বেশিরভাগটাই নির্ভর করত পুরুষদের ওপর। ব্যক্তিরা নারীদের সম্মান করতো। মৌর্য সম্রাট নারীদের পরিবেষ্টিত করে রাখতেন। তবে পরবর্তীকালে গুপ্ত যুগে নারীদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো। উচ্চবংশীয় কন্যারা নাচ-গান, চিত্রকলা কাব্যচর্চা ইত্যাদিতে পারদর্শী ছিলেন। এ সময় পুত্রহীনার বিধবার স্বামীর সম্পত্তির উপর অধিকার স্বীকৃত হয়েছে বলে জানা যায়। তবে অন্যদিকে সতীদাহ প্রথারও উল্লেখ পাওয়া যায়। গুপ্ত যুগে নারীরা ছাড়াও দেবদাসী প্রথার প্রচলন ছিল অর্থাৎ গণিকারা রূপে, যৌবনেও গুণে উচ্চমর্যাদা জাতকদের প্রলুব্ধ করত । গণিকাবৃত্তি ত্যাগ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পথে সময় অতটা সহজ ছিল না।

অতীতকালে নারীদের ইতিহাস ঘাটলে সত্যিই চোখে জল আসে। তবে এখনকার দিনের নারীরাও কিন্তু খুব একটা কম অবহেলিত না। তারাও প্রতিনিয়ত ও সমাজের কাছে অবহেলিত অত্যাচারিত হয়ে যাচ্ছে। যা সমাজের কাছে খুবই লজ্জাজনক। তবে এর মধ্যেও যে সমস্ত নারীরা তাদের জায়গায় সব প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাদের নামাজ না বললেই নয়।

কল্পনা চাওলা (প্রথম মহিলা ভারতীয় নভোচারী)
আজকের দিনে কল্পনা চাওলার নাম না করলেই বোধহয় কিছু অপূর্ণ থেকে যায়। ইনি একজন নভোযান বিশেষজ্ঞ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন মার্কিন নভোচারী। ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কার্নাল এ বসবাসকারী একটি হিন্দু পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে কল্পনার তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার প্রথম মহাকাশ যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৭ সালের ১৯ নভেম্বর। তিনি প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। সব ঠিক ঠাক চলছিল হিসাব মত, কিন্তু হঠাৎই এক বিপর্যয়। ২০০৩ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারি মহাকাশ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় কলম্বিয়া স্পেস শাটল টি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ সময় এক দুর্ঘটনায় ভেঙে যায় মৃত্যু হয় কল্পনার। ভারতীয় বলে সত্যিই আমাদের আজকে বিশ্ব নারী দিবসে তার নাম করতে যথেষ্ট গর্ববোধ হচ্ছে।

ইন্দিরা গান্ধী ( ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী)
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তাঁর পিতামহ মতিলাল নেহেরু একজন প্রথম সারির কংগ্রেস নেতা ছিলেন । তার পিতা জহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি এক রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বলে রাজনীতিতে তিনিও পরবর্তীকালে আসেন। সব মিলিয়ে ১৫ বছর ভারত শাসন করেছেন তিনি রাজনীতিবিদ ইন্দিরা গান্ধী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন ভারতে। ২৫ বছর পর ভারত তথা বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গন মনে রেখেছেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে। ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার জায়গা করে গেছেন। আর কোন নারী এখনো পর্যন্ত আসেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে। ইন্দিরা সবুজ বিপ্লব, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধে জয়লাভ, অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন, বিদেশ নীতি নির্ধারণ এবং একাধিক প্রকল্প রূপায়ণ করেন। ১৯৮৪ সালের জুন মাসে ইন্দিরা গান্ধীর আদেশে শিখদের পবিত্র ধর্মশালা স্বর্ণমন্দির ভারতীয় সেনা হানা দেয়। তার খেসারত ইন্দিরা গান্ধী দেন। সে বছরই ৩১ শে অক্টোবর নিজে দেহরক্ষী তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়।

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় (ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার)
ব্রিটিশ ভারতের প্রথম দুজন মহিলা স্নাতক এর একজন এবং ইউরোপীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষায় ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আনন্দিবাই যশির সাথে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের প্রথম দিক কার একজন নারী চিকিৎসক। গ্রাজুয়েট হওয়ার পর কাদম্বিনীর সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি ডাক্তারী পড়বেন ১৮৮৩ সালে মেডিকেল কলেজে ঢোকার পরেই তিনি তাঁর শিক্ষক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীকে বিয়ে করেন। বিখ্যাত সমাজ সংস্কারক, সাংবাদিক হিসেবে খ্যাত ছিলেন। তখন তিনি বিয়ে করে তখন ৩৯ বছর বয়সের বিপত্নীক, কাদম্বিনীর বয়স তখন ছিল ২১। কাদম্বিনী ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি পাশ্চাত্য চিকিৎসা রীতিতে চিকিৎসা করবার অনুমতি পান। তিনি হিন্দু রক্ষণশীল সমাজের দ্বারা বহুবার আক্রান্ত হয়েছেন। আট সন্তানের মা হওয়ার জন্য সংসারে তাকে বেশ সময় দিতে হতো, তিনি সূচিশিল্প এও তিনি যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ৩রা অক্টোবর তার মৃত্যু হয়।

Related Articles

Back to top button