শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ভারতবর্ষের পশ্চিম উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে প্রধানত সিন্ধু নদ ও তার একটি অববাহিকাকে আশ্রয় করে বহুকাল পূর্বে যে বিশিষ্ট নগরী ছিল, তার অনেক নিদর্শন হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো তে পাওয়া গেছে। নিদর্শনগুলির সেখানকার প্রাচীন অধিবাসী জীবনধারার ভিন্ন ভিন্ন দিকে তুলে ধরে। তাদের শিল্প, তাদের ধর্ম, তাদের সামাজিক সংগঠন তাদের মধ্যে এক জাতীয় মৃত্তিকা প্রভৃতি পাওয়া গেছে।সেখান থেকে প্রাপ্ত একটি উৎকীর্ণ প্রাচীন সিন্ধুদের ধর্ম সম্পর্কে কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। এখানে ত্রিভুজ আসনে উপবিষ্ট মুর্তি পাওয়া যায়, ভঙ্গি দেখে মনে করা হয় এটি পরবর্তীকালে বর্ণিত কুর্মাসন।
এই দেবতার ঊর্ধ্ব লিঙ্গ যদিও খুব একটা প্রমাণ স্পষ্ট পাওয়া যায় না। তাই জন মার্শাল এটিকে ‘পৌরাণিক’ বা ‘আদি শিব’ বলেছেন। হরপ্পাতে আবিষ্কৃত গাঢ় ধূসর বর্ণের পাথরের উপরে একটি অর্ধ ভগ্ন ক্ষুদ্র মুর্তি পাওয়া যায়। যার মস্তক হয় এবং পদের অর্ধাংশ ভেঙে গেছে। কিন্তু যা অবশিষ্ট আছে, তাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে মূর্তিটি নৃত্যরত। এর গলার অংশ দেখে জন মার্শল মনে করেছেন, মূর্তিটির তিনটে মাথা, এ সকল বিবেচনা করে একে ‘পৌরাণিক নটরাজ’ হিসাবে বলা যেতে পারে, যা শিবের আদিরূপ। তবে সিন্ধুতে পাওয়া নিদর্শন থেকে ধারণা করা যায় সিন্ধুবাসীরা শিবের না হলেও শিবের মতন কোন আদি পুরুষের পূজা করতেন। ‘শিব’ শব্দটি বৈদিক দেবতার বিশেষণ রূপ ‘মঙ্গলদায়ক’ অর্থে ব্যবহৃত হত। উত্তর বৈদিক সাহিত্যে ‘সত্যম-শিবম-সুন্দরম’ শব্দ পাওয়া যায়।
বৌদ্ধ সাহিত্য কখনও কখনও শিবের নাম পাওয়া যায়। দীঘনিকায় গ্রন্থে, বুদ্ধদেব তাদের আগমন কাহিনী বর্ণনায় ‘বেনহু’ ও ‘ঈশানের’ নাম করেছেন। ভারতবর্ষের উত্তর, উত্তর পশ্চিম প্রান্তে যে শিব পূজার বিশেষ প্রচলন ছিল তা অনেক বৈদেশিক গ্রন্থ থেকে জানা যায়। আলেকজান্ডারের ভারত অভিযানে বিদেশী ঐতিহাসিকগণ বলেছেন যে, পঞ্চনদ প্রদেশের একাংশে বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা নদীর সঙ্গম এর নিকট এক জাতীয় লোক বাস করেন এরা খুব ‘শিবপুজক’ ছিলেন। রামায়ণ-মহাভারতের বহু অংশে এই দেবতার প্রাধান্য পাওয়া যায়। তিনি একাধারে রুদ্র, শিব এবং মহাদেব। আবার তিনি গিরিশ, গিরিত্র, কপর্দী, কৃত্তিবাস।
তবে শিবলিঙ্গ এর ও পূজো হয়। প্রতীকের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। হিন্দু মন্দিরগুলিতে সাধারণত শিবলিঙ্গ পূজা করা হয়। শিব আত্মধ্যানে স্বরূপে লীন হয়ে থাকেন। আর সব মানুষকে তার অধীনে আত্মনিমগ্ন করেন। তবে ব্রিটিশরা মনে করতেন, শিব লিঙ্গ পুরুষ যৌনাঙ্গের আদলে নির্মিত এবং এর শিবলিঙ্গের পুজো ভক্তদের মধ্যে কামুকতা বৃদ্ধি করে। অনেকে মনে করেন, এই প্রতীক রূপে শিবলিঙ্গের পুজো করা আদিবাসী ধর্ম গুলি থেকে হিন্দুধর্মে গৃহীত হয়েছে। ‘শিবলিঙ্গ’ শব্দের অর্থ হলো ‘শিবের মাথা’ অর্থাৎ অজ্ঞতাবশত ‘লিঙ্গ’ শব্দটি তার অর্থ পরিবর্তন করে বাংলায় পুরুষ জননেন্দ্রিয় অর্থ লাভ করেছে যা বিকৃত এবং অশালীন।
তবে আপনার বাড়িতে শিবলিঙ্গ থাকুক কিংবা কোন শিবের মূর্তি অথবা কোন মূর্তির ছবি থাকুক, সোমবার দিন শিবের মূর্তি পুজো করুন, বা লিঙ্গ পুজো করুন। সাদা চন্দন, আতপ চাল, ফুল, বেলপাতা, ধূপ, ধুনো জ্বালিয়ে পুজো করতে বসবেন এবং পানীয় জল রাখবেন।