একদিকে বাংলায় শীতের আমেজটা জাঁকিয়ে পড়ে তাপমাত্রা পারদ নিম্নমুখী, আবার অন্যদিকে রাজনীতির পারদ ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী রাজ্যে। আসন্ন বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি ভোট যুদ্ধ জয়ের উদ্দেশ্যে লড়াইয়ের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কোন রাজনৈতিক দল অন্যকে এক ইঞ্চি জমিও ছেড়ে দেবে না। এরইমধ্যে বাংলার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তৃণমূল ও বিজেপি দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। এবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ তৃণমূল সরকারকে “করোনার” থেকেও বিপদজনক বলে অভিহিত করলেন। আজ অর্থাৎ বুধবার ক্যানিং স্ট্রিটে একটি চা চক্রে উপস্থিত থেকে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একাধিক বিরোধের সুর তুললেন।
দিলীপ ঘোষ প্রথমে তৃণমূলকে করোনার থেকে বিপদজনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “একদিকে যেমন গোটা দেশ থেকে করোনা সংক্রমণকে আমাদের তাড়াতে হবে ঠিক একসাথে বিদায় করতে হবে রাজনীতির করোনা তৃণমূলকেও। যতদিন আছে নিজেদেরই সাবধান থাকতে হবে।” এছাড়াও তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছেন। আজকের চা-চক্রে দীলিপবাবুর মেজাজ ছিল সপ্তমে। তিনি শাসক দলের একাধিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, কেন্দ্র থেকে সরকারি প্রকল্পের জন্য কোটি কোটি টাকা আসছে রাজ্যে। কিন্তু সেই সব টাকায় আত্মসাৎ করে নিচ্ছে তৃণমূল নেতারা। সাধারণ জনগণ কোন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে না। এছাড়াও তিনি “ভাইপোর” বিরুদ্ধে আজ ফের সুর তুললেন। তিনি সরাসরি আক্রমণ করে মন্তব্য করেছেন, “আমাকে গুন্ডা মাফিয়া বলছে। এদিকে আসলে গুন্ডা মাফিয়া তো উনি যে বলছে। সে সাত কোটি টাকার বিলাসবহুল বাড়িতে থাকে। আসলে গোটা তৃণমূল সরকার মাফিয়া চোরের দলে পরিণত হয়েছে। তাই আস্তে আস্তে বাংলার মানুষ বুঝতে পেরে তৃণমূল থেকে সরে যায়।”
এছাড়াও আমফান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ দুর্নীতি নিয়ে CAG এর হস্তক্ষেপে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। সেই সাথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কটাক্ষ করেছেন তিনি। গতকাল মমতা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল নির্বাচনের আগেই কেন কেন্দ্রীয় সংস্থা তো সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারই উত্তর দিয়েছেন আজ দীলিপবাবু। দীলিপবাবু বলেছেন, আদালতের রায়ে কেন্দ্রীয় সংস্থা CAG তদন্ত করবে। আর কেন্দ্রীয় সংস্থা সারাবছর সক্রিয় থাকে। আর আদালতের এই রায়ে রাজ্যবাসী খুশি। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি খুশি নয়। তাহলে কি সত্যিই “ডাল মে কুচ কালা হে”?
অন্যদিকে রাজ্য সরকারের “দুয়ারে দুয়ারে সরকার” প্রকল্পের ফের নিন্দা করলেন দীলিপবাবু। তিনি বলেছেন, “সরকারি টাকায় বাইকে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে সবই লোক দেখানো কাজ হচ্ছে। আসলে কোন পরিষেবায় পাওয়া যাবে না। স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভোটের মুখে এরকম কর্মসূচি। এমনকি বিষয়টা নিয়ে প্রয়োজন পড়লে নির্বাচন কমিশন ও আদালতের দ্বারস্থ হবে বিজেপি।” অবশ্য দীলিপবাবুর এই কথার পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেছেন, “ওরা ভেবেছে বাংলা দখল করেই ফেলেছেন। তাই পাগলের প্রলাপ বকছে। রাজ্য সরকারের প্রকল্প দেখে ওরা ভয় পেয়ে গেছে। রাজ্যবাসীর আশীর্বাদে তৃতীয় বছরের জন্য আবার বাংলায় মমতা সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।”